শ্বেতকণিকা
শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট বা WBC (White Blood Corpuscle or Leucocytes):
সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন আকৃতির নিউক্লিয়াসযুক্ত বর্ণহীন অনিয়তাকার রক্তকণিকাগুলিকে শ্বেতকণিকা বা লিউকোসাইট বলে।
সংখ্যাঃ প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে প্রায় 6 হাজার থেকে 8 হাজার।
উৎপত্তিঃ প্রধানত লাল অস্থিমজ্জা থেকে উৎপন্ন হয়। মায়েলোব্লাস্ট কোশ থেকে দানাদার শ্বেতকণিকাগুলি এবং মনোব্লাস্ট থেকে মনোসাইট ও লিম্ফোব্লাস্ট থেকে লিম্ফোসাইট উৎপন্ন হয়। মনোসাইট ও লিম্ফোসাইট অস্থিমজ্জা ছাড়াও প্লীহা, থাইমাস প্রভৃতি থেকে উৎপন্ন হয়।
আয়তনঃ এদের গড় ব্যাস 7.5 m থেকে 18 m
গঠনঃ
- (i) এদের নির্দিষ্ট আকার নেই। কখনও অ্যামিবার মতো দেখায়।
- (ii) এদের নিউক্লিয়াস গোলাকার বা বৃক্কাকার বা 2-7 টি খন্ডবিশিষ্ট।
- (iii) সাইটোপ্লাজমে দানা থাকে অথবা থাকে না। দানা থাকলে গ্র্যাণুলোসাইট এবং দানা না থাকলে তাকে আগ্র্যানুলোসাইট বলে।
গ্যাণুলোসাইট তিন প্রকারের, যথা-নিউট্রোফিল, ইয়োসিনোফিল ও বেসোফিল। আগ্র্যানুলোসাইট দু প্রকারের, যথা- লিম্ফোসাইট ও মনোসাইট।
জীবনকালঃ শ্বেতকণিকার গড় আয়ু 1 থেকে 15 দিন।
পরিণতিঃ নিউট্রোফিল, ইয়ৈসিনোফিল ও বেসোফিল রক্তসংবহনতন্ত্রেই বিনষ্ট হয় এবং RE কোশ এই বিনাশে সহায়তা করে। লিম্ফোসাইট তন্ত্র ও শ্লেষ্মাঝিল্লির মধ্যে বিনষ্ট হয়। মনোসাইট কলা ম্যাক্রোফাজে পরিণত হয়।
কাজঃ
- (i) আগ্রাসন- নিউট্রোফিল, মনোসাইট এবং ইয়োসিনোফিল শ্বেতকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে ব্যাকটেরিয়া বা অন্য বিজাতীয় বস্তু বা মৃত কোশকে গিলে ফেলে বিনাশ করে।
- (ii) অ্যান্টিবডি উৎপাদন- লিম্ফোসাইট শ্বেতকণিকা গামা-গ্লোবিউলিন নামক অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে রোগ প্রতিরোধ করে।
- (iii) হেপারিন ক্ষরণ- বেসোফিল শ্বেতকণিকা হেপারিন ক্ষরণ করে রক্তবাহের মধ্যে রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না।
- (iv) এলার্জি প্রতিরোধ- বেসোফিল ও ইয়োসিনোফিল শ্বেতকণিকা হিস্টামিন ক্ষরণ করে এলার্জি প্রতিরোধ করে।
- (v) কলার পুষ্টি- মনোসাইট শ্বেতকণিকা প্লাজমাপ্রোটিন থেকে ট্রিফোন নামক পদার্থ উৎপন্ন করে কলাকোশের পুষ্টিতে সহায়তা করে।
- (vi) এছাড়া টিউমার কোশের বিনাশ ঘটায়। ফাইব্রোব্লাস্ট কোশ উৎপন্ন করে।
পাঁচপ্রকার শ্বেতকণিকা বর্ণনা (ছকের মাধ্যমে):
নাম | সংখ্যা (প্রতি ঘ. মিমি.) ও আয়ু | গঠন | কাজ |
---|---|---|---|
নিউট্রোফিল (Neutrophil) | 300-6000 এবং 2-4 দিন | ব্যাস 10-15 m, সাইটোপ্লাজম সূক্ষ্ম দানাদার (প্রশম লিশম্যান রঞ্জকে লাল বেগুনি), নিউক্লিয়াস 2-7 খন্ডযুক্ত। | ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে ব্যাকটেরিয়া বিনাশ করে। |
ইয়োসিনোফিল (Eosinophil) | 100-400 এবং 8-12 দিন | ব্যাস 10-14 m, সাইটোপ্লাজম স্থূল দানাদার (অম্লীয় ইয়োসিন রঞ্জকে লাল), নিউক্লিয়াস 2 খন্ডযুক্ত (চশমাকৃতি) | হিস্টামিন ক্ষরণ করে এলার্জি প্রতিরোধ করে। |
বেসোফিল (Basophil) | 0-100 এবং 12-15 দিন | ব্যাস 8-10 m, সাইটোপ্লাজম বিভিন্ন দানাদার (ক্ষারীয় টলিউডিন ব্লু রঞ্জকে নীল), নিউক্লিয়াস ‘S’ বা ‘U’ আকৃতির। | হেপারিন ক্ষরণ করে রক্ততঞ্চন রোধ করে। এবং হিস্টামিন ক্ষরণ করে। |
লিম্ফোসাইট (Lymphocyte) | 1500-2500 এবং 1-3 দিন | ব্যাস 7-16 m, সাইটোপ্লাজম দানাবিহীন ও স্বচ্ছ; নিউক্লিয়াস | অ্যান্টিবডি অথবা লিম্ফোকাইনিন সৃষ্টি করে রোগ প্রতিরোধ করে। |
মনোসাইট (Monocyte) | 200-800 এবং 8-15 দিন | ব্যাস 12-20 m, সাইটোপ্লাজম দানাবিহীন ও বুদবুদযুক্ত, নিউক্লিয়াস অশ্ব-ক্ষুরাকৃতি বা বৃক্কাকৃতি। | ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য বিজাতীয় বস্তুকে ধ্বংস করে। ট্রিফোন সৃষ্টি করে। |