রক্তের কাজ
রক্তের কাজ (Function of Blood)
1. খাদ্যের পরিবহন (Transportation of Food):
পুষ্টির জন্য গ্লুকোজ, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড। বিভিন্ন ভিটামিন, বিভিন খনিজ লবণ, জল প্রভৃতি বস্তুকে পৌষ্টিক নালি থেকে দেহের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেয়।
2. অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিবহন (Transportation of O2 and CO2):
শ্বসনের জন্য শ্বাসঅঙ্গ থেকে O2 কলাকোশে পৌঁছে দেয় এবং কলাকোশ থেকে CO2 শ্বাসঅঙ্গে পৌঁছে দেয়।
3. হরমোন পরিবহন (Transportation of Hormones):
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হরমোন (ইনসুলিন, STH প্রভৃতি)-গুলিকে ক্রিয়াস্থলে পৌঁছে দেয়।
4. বিপাকীয় বর্জ্য পদার্থের পরিবহন (Transportation of metabolic wastes):
দেহের কলাকোশের বিপাকে উৎপন্ন ক্ষতিকর পদার্থগুলিকে (রেচন পদার্থ) রেচন অঙ্গে পৌঁছে দেয়।
5. রক্ততঞ্চন (Blood Coagulation):
রক্তে উপস্থিত প্রোথ্রম্বিন ও ফাইব্রিনোজেন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম আয়ন এবং অণুচক্রিকা নিঃসৃত থ্রম্বোপ্লাস্টিনের দ্বারা কাটা স্থানে জমাট বাঁধে।
6. অনাক্রম্যতা এবং প্রতিরক্ষা কার্য (Immunity and Protective function):
রক্তের মধ্যে অবস্থিত নিউট্রোফিল ও মনোসাইট ফ্যাগোসাইটিস পদ্ধতিতে ক্ষণপদ বিস্তারের মাধ্যমে দেহে প্রবিষ্ট সংক্রামক ও ক্ষতিকারক ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য রোগ-জীবানুদের গ্রাস করে তাদের ধ্বংস করে।
কোনো রোগজীবাণু দেহে প্রবেশ করলে দেহে লিম্ফোসাইট শ্বেতকণিকা লিম্ফোকাইন অথবা অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে যা বহিরাগত জীবাণুকে ধ্বংস করে অথবা জীবাণুকে ধ্বংস করার জন্য ফ্যাগোসাইটিক কোশকে সক্রিয় করে।
7. দেহতাপ নিয়ন্ত্রণ (Regulation of body temperature):
পেশি, যকৃৎ প্রভৃতিতে শ্বসনে উৎপন্ন তাপ রক্তের মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে দেহকে সমান গরম রাখে। আবার কোনো কারণে দৈহিক তাপমাত্রা বেড়ে গেলে রক্ত দেহের পরিধির দিকে বেশি পৌঁছে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ বেরিয়ে যেতে সহায়তা করে, ফলে দৈহিক তাপমাত্রা সমান থাকে।
রক্তের অন্যান্য কাজঃ
- 1. বাফারক্রিয়া-রক্তে উপস্থিত ফসফেট, কার্বনেট প্রভৃতি যৌগ অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- 2. রক্ততঞ্চনে বাধাদান-বেসোফিল নিঃসৃত হেপারিন রক্তবাহে রক্তকে তঞ্চিত হতে দেয় না।
- 3. এলার্জি প্রতিরোধ- ইয়োসিনোফিল এবং বেসোফিল দেহে এলার্জি প্রতিরোধ করে।
- 4. জল ও আয়ন সাম্য-সারাদেহে জল ও আয়নের সমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- 5. কলার পুষ্টি-মনোসাইট ট্রিফোন সৃষ্টি করে কলাকোশে পুষ্টি সরবরাহ করে।
অনাক্রম্যতা (Immunity):
দেহের অ্যান্টিবডি ও শ্বেতকণিকার সাহায্যে দেহে প্রবিষ্ট ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা তাদের অধিবিষ বা যে-কোনো বিজাতীয় প্রোটিনের বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেই অনাক্রম্যতা বা ইমিউনিটি বলে।
অ্যান্টিবডি (Antibody):
জীবদেহে বহিরাগত প্রোটিনকে (ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া) প্রতিরোধ ক্রার জন্য B-লিম্ফোসাইট কোশ থেকে যে প্রোটিন (ইমিউনোগ্লোবিউলিন) তৈরি হয় তাকে অ্যান্টিবডি বলে। এটি প্রধানত গামা-গ্লোবিউলিন জাতীয় প্রোটিন। এটি কার্যপ্রকৃতি অনুসারে চারপ্রকারের হয়, যথা-অ্যাগ্লুটিনিন, সাইটোলাইসিন, প্রেসিপিটিন ও অ্যান্টিটক্সিন।
অ্যান্টিজেন (Antigin):
বহিরাগত যেসকল প্রোটিন (ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া প্রভৃতির) দেহে প্রবেশ করলে দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তাদের অ্যান্টিজেন বলে। যেমন-ব্যাকটেরিয়ার পিলি বা ফ্লাজেলা, দুগ্ধ প্রোটিন, ভাইরাসের আবরণ প্রভৃতি।
অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডির পার্থক্যঃ
নং | অ্যান্টিজেন | অ্যান্টিবডি |
---|---|---|
১ | অ্যান্টিবডি উৎপাদনে বহিরাগত বস্তুকে অ্যান্টিজেন বলে। | অ্যান্টিজেনের প্রভাবে সৃশট অনাক্রমক বস্তুকে অ্যান্টিবডি বলে। |
২ | এটি প্রোটিনধর্মী। প্রধানত গ্লাইকো-প্রোটিন বা লাইপোপ্রোটিন। | এটি গামা-গ্লোবিউলিন জাতীয় প্রোটিন |
৩ | এটী ব্যাকটেরিয়ার পিলি, ফ্ল্যাজেলা বা লোহিতকণিকার গায়ে উপস্থিত প্রোটিন। | এটি B-লিম্ফোসাইট থেকে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন রক্তেরসে উপস্থিত প্রোটিন। |