লোহিতকণিকা
লোহিতকণিকা বা এরিথ্রোসাইট বা R.B.C (Red Blood Corpuscles or Erythrocytes):
হিমোগ্লোবিনযুক্ত লাল রঙের নিউক্লিয়াসবিহীন দ্বিঅবতল রক্তকণিকাকে লোহিতকণিকা বলে।
সংখ্যাঃ পূর্ণবয়স্ক পুরুষে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে প্রায় 50 লক্ষ এবং স্ত্রীলোকে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে প্রায় 45 লক্ষ।
উৎপত্তিঃ
- (i) ভ্রূণের প্রথম অবস্থায় ভ্যাস্কুলোসা (Vasculosa) নামক ভ্রূণের অংশ থেকে এবং এরপর জন্মের একমাস পূর্ব পর্যন্ত যকৃত ও প্লীহা থেকে লোহিতকণিকার উৎপত্তি হয়।
- (ii) জন্মের একমাস পূর্ব থেকে শুরু করে পরিণত ব্যক্তিতে লাল অস্থিমজ্জার প্রোএরিথ্রোব্লাস্ট থেকে লোহিতকণিকা উৎপন্ন হয়।
আয়তনঃ লোহিতকণিকার গড় ব্যাস 7-8 m
গঠনঃ
- (i) মানুষসহ সকল স্তন্যপায়ীতে পরিণত লোহিকণিকা গোলাকার চাকতির মতো এবং দ্বিঅবতল (biconcave) হয়।
- (ii) কোশপর্দাতে স্পেকট্রিন প্রোটিন থাকায় স্থিতিস্থাপক হয় এবং দ্বিঅবতল আকৃতি বজায় রাখে।
- (iii) ধাত্রে কোনো নিউক্লিয়াস, মাইটোকনড্রিয়া, ER, গলগিবডি প্রভৃতি অঙ্গাণু থাকে না, ধাত্রের বেশিরভাগ অংশ লাল রংয়ের হিমোগ্লোবিনে পূর্ণ থাকে।
- (iv) অস্থিমজ্জার অপরিণত লোহিতকণাতে নিউক্লিয়াস থাকে।
জীবনকালঃ লোহিতকণিকা 120 দিন বাঁচে।
হিমোগ্লোবিনঃ এটি 94% প্রোটিন (2টি ও 2টি শৃঙ্খল) এবং 6% হিম (4টি) নিয়ে গঠিত। প্রতিটি হিমে চারটি পাইরোল চক্র একটি লৌহ অণুর (Fe++) সাথে যুক্ত হয়।
পরিণতিঃ
যকৃৎ ও প্লীহায় বৃদ্ধ ও ভঙ্গুর লোহিতকণিকা (পয়কিলোসাইট) বিদারিত হয়ে হিমোগ্লোবিন বেরিয়ে গেলে রেটিকিউলো এন্ডোথেলিয়াল (RE) তন্ত্রের আগ্রাসী কোশ হিমোগ্লোবিনকে ভেঙে দেয়। গ্লোবিন থেকে অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং হিম থেকে ফেরিটিন ও হিমোসাইডারিন এবং বিলিভার্ডিন ও বিলিরুবিন নামক পিত্তরঙ্গক উৎপন্ন হয়।
কাজঃ
- (i) লোহিতকণিকার প্রধান কাজ অক্সিজেনকে হিমোগ্লোবিনের সাথে অক্সিহিমোগ্লোবিন যৌগ রূপে (প্রতি হিমোগ্লোবিনের সাথে 4 অণু O2 যুক্ত হয়) এবং CO2 কে কার্বামিনো হিমোগ্লোবিন রূপে পরিবাহিত করা।
- (ii) অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করা।
- (iii) আয়নের (ধনাত্মক ও ঋণাত্মক) সাম্যাবস্থা বজায় রাখা।
- (iv) পিত্তরঙ্গক তৈরিতে সাহায্য করা।