শ্বাসরঙ্গক
শ্বাসরঙ্গক (Respiratory Pigments):
শ্বসনের গৃহীত অক্সিজেন এবং শ্বসনে উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড সংবহনের জন্য যেসকল রঙ্গক সংবহনতন্ত্রে উপস্থিত থাকে তাদের শ্বাসরঙ্গক (respiratory pigments) বলে।
কয়েকপ্রকার শ্বাসরঙ্গকঃ
হিমোগ্লোবিনঃ এটি লৌহযুক্ত যুগ্মপ্রোটিন। এর রং লাল। এটি অঙ্গুরিমাল, শম্বুক প্রভৃতি অমেরুদন্ডীর রক্তরসে এবং মেরুদন্ডীর লোহিতকণিকায় থাকে।
হিমোসায়ানিনঃ এটি তাম্রযুক্ত যুগ্ম প্রোটিন। এর রং নীল (O2-বিযুক্ত অবস্থায় বর্ণহীন)। এটি চিংড়ি প্রভৃতি কবচীশ্রেণির প্রাণী এবং মোলাস্কার রক্তরসে থাকে।
ক্লোরোক্রুওরিনঃ এই তাম্রঘটিত সবুজ রঙ্গকটি পলিকেটের রক্তরসে থাকে।
পিনাগ্লোবিউলিনঃ এই ম্যাঙ্গানিজঘটিত বাদামি রঙ্গকটি শামুকের রক্তরসে থাকে।
মায়োগ্লোবিনঃ এই লৌহঘটিত লাল রঙ্গকটি হৃৎপেশি ও অস্থিপেশিতে থাকে।
লেগ-হিমোগ্লোবিনঃ এই লৌহঘটিত লাল বাদামি রঙ্গকটি লেগুমিনোসি গোত্রভুক্ত উদ্ভিদের অর্বুদে অবস্থান করে রাইজোবিয়ামের শ্বসনের জন্য O2 সরবরাহ করে।
হিমোগ্লোবিন ও হিমোসায়ানিনের পার্থক্যঃ
নং | হিমোগ্লোবিন | হিমোসায়ানিন |
---|---|---|
১ | এটি লৌহযুক্ত যুগ্ম প্রোটিন। | এটি তাম্রযুক্ত যুগ্ম প্রোটিন। |
২ | এটির রং O2 -যুক্ত ও O2-বিযুক্ত উভয় অবস্থায় লাল। | এটির রং O2 -যুক্ত অবস্থায় নীল ও O2-বিযুক্ত উভয় অবস্থায় বর্ণহীন। |
৩ | এটি অমেরুদন্ডীর রক্তরসে এবং মেরুদন্ডীর লোহিতকনিকায় থাকে। | এটি কবচীশ্রেণির অমেরুদন্ডীর রক্তরসে থাকে। |
রক্ত কেন বিশেষ তরল যোগকলা?
- (1) রক্তের ধাত্রটি তরল এবং ধাত্রের পরিমাণ কোশীয় উপাদানের তুলনায় বেশি।
- (2) রক্ত দেহের বিভিন্ন কলা ও অঙ্গসমূহের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।
- (3) রক্ত ভ্রূণজ মেসোডার্ম থেকে উৎপন্ন এবং ভিত্তিপর্দাবিহীন।
- (4) রক্তের কোশগুলি আদর্শ কোশ নয় এবং রক্ত নিজে পরিবাহিত হয়।-তাই বিশেষ তরল যোগকলা।
থ্রম্বোসিস (Thrombosis) কী?
রক্তবাহের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনাকে থ্রম্বোসিস বলে। করোনারি ধমনি ও গুরুমস্তিষ্কে রক্তসরবরাহকারী ধমনিতে রক্তজমাট বাঁধলে যথাক্রমে করোনারি থ্রম্বোসিস ও সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস বলে।
হিমোলাইসিস (Haemolysis)
লোহিতকণিকাকে লঘুসারক দ্রবণে (0.9 gm% NaCl দ্রবণের চেয়ে কম) রাখলে লোহিতকণিকা জল গ্রহণ করে ফুলে ওঠে এবং হিমোগ্লোবিন বেরিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে হিমোলাইসিস বলে।
ESR কী?
ওয়েস্টারগ্রেন প্রভৃতি পরীক্ষানলে রাখা অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট যুক্ত রক্তের লোহিতকণিকার থিতিয়ে পড়ার হারকেই Erythrocyte Sedimentation Rate বা ESR বলে।
রক্তের এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কত?
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের (70 kg) 5 লিটার রক্ত থাকে। প্রতি 100 ml রক্তে হিমোগ্লোবিনের গড় পরিমাণ 14.5 গ্রাম।
TC-DC কী?
শ্বেতকণিকার সামগ্রিক সংখ্যা গণনাকে টোটাল কাউন্ট (TC) এবং পাঁচপ্রকার আলাদাভাবে গণনাকে ডিফারেন্সিয়াল কাউন্ট (DC) বলে।
রক্তচাপ (Blood Pressure) কী?
রক্তবাহের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সময় রক্ত রক্তবাহের গাত্রে (প্রধানত ধমনিগাত্রে) যে পার্শ্বচাপ সৃষ্টি করে তাকে রক্তচাপ বা ব্লাডপ্রেসার বলে।
ধমনিগাত্রের রক্তচাপ কয়েক প্রকারের হয়, যথা-
- (1) সিস্টোলিক প্রেসারঃ হৃৎপিন্ডের নিলয় সংকোচনের সময় সর্বাধিক যা চাপ, এর মান 120 mmHg
- (2) ডায়াস্টোলিক চাপঃ হৃৎপিন্ডের নিলয় প্রসারণের সময় সর্বাধিক যে চাপ এর মান 80 mmHg
- (3) পাল্স্ প্রেসারঃ সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক প্রেসারের অন্তরফল। এর মান 40 mmHg
- (4) মিন প্রেসারঃ ডায়াস্টোলিক প্রেসার ও পাল্স্ প্রেসারের এক তৃতীয়াংশের যোগফল। এর মান 93.3 mmHg।
হিমোসাইটোমিটার কী?
এটি রক্তকণিকা গণনা করার যন্ত্র।
হিমোগ্লোবিনোমিটার বা হিমোমিটার কী?
এটি হিমোগ্লোবিন পরিমাপক যন্ত্র।
স্পিগসোম্যানোমিটার কী?
এটি রক্তচাপ মাপক যন্ত্র।