শ্বসনের তাৎপর্য
শ্বসনের তাৎপর্য (Significance of Repiration)
1. শক্তির মুক্তি (Release of Energy) :
(i) শ্বসনে শক্তির মুক্তি ঘটে । খাদ্যের মধ্যে সঞ্চিত স্থৈতিক শক্তি শ্বসন প্রক্রিয়ায় তাপশক্তিরূপে মুক্ত হয়, যার কিছুটা সাময়িকভাবে ATP এর মধ্যে জমা থাকে । পরে ATP থেকে শক্তিমুক্ত হয়ে দেহের পুস্টি, বৃদ্ধি, চলন, গমন, রেচন প্রভৃতি সকল শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয়। 180 গ্রাম গ্লুকোজের সঞ্চিত স্থৈতিক শক্তি সবাত শ্বসনে মুক্ত হলে 686 k-cal তাপশক্তি বের হয়। অবাত শ্বসন ও সন্ধানে প্রায় 50 k-cal তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন 2500-3000 k-cal তাপশক্তির প্রয়োজন যার উৎস শ্বসন প্রক্রিয়া।
(ii) জোনাকি, কিছু ছত্রাক (আর্মিলারিয়া), ব্যাকটেরিয়া এবং সামুদ্রিক প্রানীর (অ্যানথপ্টিলাম দেহে শ্বসনে উৎপন্ন শক্তি আলোকশক্তিতে পরিণত হয় ।
(iii) ইলেকট্রিক রে’মাছের দেহে শ্বসনে উৎপন্ন শক্তি বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
(iv) পক্ষী ও স্তন্যপায়ী প্রানীর দেহ সর্বদা উষ্ণ থাকে শ্বসনে উৎপন্ন শক্তির দ্বারাই।
2. অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষা :
সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলের CO2 -এর পরিমাণ কমে যেতে পারত এবং O2 -এর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারত। কিন্তু সকল জীব শ্বসন প্রক্রিয়ার জন্য (সবাত শ্বসন) বায়ুমণ্ডল থেকে O2 গ্রহণ করে এবং শ্বসনে উৎপন্ন CO2 বায়ুমণ্ডলে বর্জন করে। ফলে বায়ুতে CO2 -এর পরিমাণ কমে যেতে পারত এবং O2 -এর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারত । কিন্তু সকল জীব শ্বসন প্রক্রিয়ায় জন্য (সবাত শ্বসন) বায়ুমন্ডল থেকে O2 গ্রহণ করে এবং শ্বসনে উৎপন্ন CO2 বায়ুমন্ডলে বর্জন করে। ফলে বায়ুতে CO2 -এর পরিমাণ কমে যায় না এবং O2 -এর পরিমাণ বেড়ে যায় না । এইভাবে শ্বসন প্রক্রিয়া সালোকসংশ্লেষের বিপরীত বিক্রিয়া হয়ে বায়ুমণ্ডলে O2 ও CO2 -এর ভারসাম্য বজায় রাখে।
সালোকসংশ্লেষ ও শ্বসনের সম্পর্ক
(i) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় যে গ্লুকোজ উৎপন্ন হয় শ্বসন প্রক্রিয়ায় সেটি কাঁচা মালরূপে ব্যবহৃত হয়।
(ii) সালোকসংশ্লেষে যে O2 উৎপন্ন হয় তা শ্বসন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়।
(iii) শ্বসনে যে CO2 এবং H2O উৎপন্ন হয় তা সালোকসংশ্লেষে কাঁচামালরূপে ব্যবহ্রত হয়।
এইভাবে পরস্পর বিপরীতমুখী প্রক্রিয়া সালোকসংশ্লেষ ও শ্বসন পরস্পরের উপর নির্ভরশীল।
সালোকসংশ্লেষে ও শ্বসনের পার্থক্য
নং | সালোকসংশ্লেষ | শ্বসন |
---|---|---|
১ | এই প্রক্রিয়া কেবল সবুজ উদ্ভিদে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ঘটে। | এই প্রক্রিয়া সকল জীবে দিবারাত্র ঘটে। |
২ | O2 ও H2O কাঁচামাল লাগে । | গ্লুকোজ কাঁচামাল রূপে লাগে । |
৩ | ক্লোরোপ্লাস্টিড নামক অঙ্গানুর মধ্যে ঘটে। | সাইটোপ্লাজম ও মাইটোকনড্রিয়ার মধ্যে ঘটে। |
৪ | সৌরশক্তি স্থৈতিক শক্তিরূপে গ্লুকোজের মধ্যে জমা হয় এবং এটি একটি তাপগ্রাহী বিক্রিয়া। | স্থৈতিক শক্তি তাপশক্তি রূপে মুক্ত হয় এবং এটি একটি তাপমোচী বিক্রিয়া। |
৫ | এই প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ উৎপন্ন হয় এবং এটি উপচিতি বিপাক। | এই প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ জারিত হয়ে CO2 ও H2O উৎপন্ন হয় এবং এটি অপচিতি বিপাক। |
৬ | CO2 গ্রহণ O2 বর্জন ঘটে। | O2 গ্রহণ ও CO2 বর্জন ঘটে। |
৭ | আলোকদশা ও অন্ধকারদশা এর প্রধান পর্যায়। | গ্লাইকোলাইসিস ও ক্রেবস চক্র এর প্রধান পর্যায় । |
৮ | এর রাসায়নিক সমীকরণ :6CO6 + 12H2O C6H12H2O6 + 6H2O + 6O2 | C6H12O6 + 602 6CO2 + 6H2O + 686 k cal শক্তি |