সালোকসংশ্লেষের তাৎপর্য
1. সৌরশক্তি আবদ্ধকরণ এবং খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তির রূপান্তর
সৌরজগতে শক্তির মূল উৎস হল সূর্য এবং কেবলমাত্র সালোকমাত্র প্রক্রিয়ায় মাধ্যমেই সৌরশক্তি জীবদেহের ব্যবহার্য শক্তিরূপে ধরা পড়ে । সালোকসংশ্লেষের আলোক দশায় প্রথমে সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিরূপে ATP -এর মধ্যে আবদ্ধ হয় । দুটি রঙ্গকতন্ত্রে অবস্থিত ক্লোরোফিল সৌরশক্তি শোষণ করে সক্রিয় হয় । এই শোষিত সৌরশক্তি ADP -এর সাথে iP কে যুক্ত করে ATP তৈরিতে কাজে লাগে । এক মোল ATP -এর মধ্যে 7.3k Cal তাপশক্তি জমা হয় ।
ADP + iP ATP
7.3k -calআলোকদশায় ATP -এর মধ্যে সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি অন্ধকারদশায় গ্লুকোজ গঠনের জন্য ব্যবহৃত হয় । ফলে গ্লুকোজের (শর্করাজাতীয় খাদ্য) মধ্যে ওই শক্তি স্থৈতিক শক্তিরূপে জমা হয়। এক মোল গ্লুকোজের (180 গ্রাম) মধ্যে 686 k-cal তাপশক্তি জমা থাকে । গ্লুকোজ থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন খাদ্যের মধ্যে ওই শক্তি জমা হয় এবং খাদ্যের মাধ্যমে উৎপাদকের দেহ থেকে খাদ্য- খাদকের সম্পর্কের ভিত্তিতে বিভিন্ন জীবে ওই শক্তি সঞ্চারিত হয়।
2. গ্লূকোজের শ্বেতসারে রূপান্তর এবং সঞ্চয়ী অঙ্গে এর পরিবহণ
সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন জলে দ্রবণীয় গ্লুকোজ দিনের বেলায় প্রাথমিকভাবে সবুজ কোশেই জলে অদ্রবণীয় শ্বেতসারে পরিণত হয়ে জমা থাকে। রাত্রিবেলায় ওই শ্বেতসার পুনরায় জলে দ্রবণীয় গ্লুকোজ পরিণত হয় এবং ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে উদ্ভিদের বিভিন্ন সঞ্চয়ী অঙ্গে প্রেরিত হয়। সঞ্চয়ী অঙ্গে পৌঁছে গ্লুকোজ থেকে শ্বেতসার ও অন্যান্য শর্করা, প্রোটিন , লিপিড প্রভৃতি সংশ্লেষিত হয় এবং ভবিষ্যতের জন্য খাদ্যরূপে জমা থাকে। উদ্ভিদের বিভিন্ন সঞ্চয়ী অঙ্গ হল কান্ড (আলু, ওল) ; ফল (আম, কলা, কুমড়ো) ; বীজ (ধান, গম, ছোলা) প্রভৃতি।
3. কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অক্সিজেন ভারসাম্য (CO2 –O2 balance)
সালোকসংশ্লেষ বায়ুমণ্ডলে CO2 এবং O2 –এর একটি নির্দিস্ট মাত্রা বজায় রাখে ।
CO2 -এর পরিমাণ 0.03% এবং O2 –এর পরিমাণ 20.60% ।
সকল জীবের শ্বসনে এবং বিভিন্ন বস্তুর দহনে CO2 উৎপন্ন হয় এবং O2 খরচ হয় । ফলে পরিবেশ CO2 -এর পরিমাণ বেড়ে যেতে এবং O2 –এর পরিমাণ কমে যেতে পারত। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না । কারণ, সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় সবুজ উদ্ভিদ পরিবেশের CO2 গ্রহণ করে এবং পরিবেশে O2 বর্জন করে । ফলে পরিবেশ CO2 ও O2 -এর ভারসাম্য রক্ষিত হয়।
4. মানবসভ্যতার বিভিন ক্ষেত্রে সালোকসংশ্লেষের অবদান
সালোকসংশ্লেষের ফলে গঠিত উদ্ভিদদেহ বিভিন্নভাবে ব্যবহ্রৃত হয়।
(i) জ্বালানি রূপে কয়লা, পেট্রোল, শুকনো উদ্ভিদদেহ প্রভৃতি বিভিন্ন যন্ত্র চালাতে ও রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়।
(ii) নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদি রূপে কাঠের আসবাবপত্র, তুলোর বস্ত্র, রবার, কাগজ, বেয়ন, নাইলন , গঁদ , রজন, ধুনো প্রভৃতি উদ্ভিদ থেকেই সংগৃহীত হয়।
(iii) ঔষধ রূপে ব্যবহৃত পেনিসিলিন, রেসারপিন, কুইনাইন প্রভৃতিও উদ্ভিদ সৃস্ট।
(iv) পেট্রোলিয়ামের বিকল্পরূপে উদ্ভিদদেহ থেকে উৎপন্ন হাইড্রোকার্বন ভবিষ্যতে জ্বালানি সমস্যা সমাধানের আশার আলো জাগায়। যেমন — বট্রিয়োক্কাস (Botryococcus) নামক শৈবালে প্রচুর হাইড্রোকার্বন উৎপন্ন হয়।