বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem)
বাস্তুতন্ত্র ও বাস্তুবিদ্যা কী ? What is Ecosystem and Ecology)
পরিবেশের অন্তর্গত জীব ও অজীব পদার্থের মধ্যে সর্বদা বিভিন্ন উপাদানের বিনিময় ঘটছে। এই বিনিময় নির্দিষ্ট নিয়মে চলে। জীব ও অজীব পদার্থের এই বিনিময় রীতিকে Ecosystem, নামে বিজ্ঞানী ট্যানস্লে (A. G. Tansley, 1935) প্রথম আখ্যা দেন। কেনডাই (Kendeigh, 1968), ওডাম (Odum, 1971) প্রভৃতি বিজ্ঞানীদের দেওয়া সংজ্ঞা থেকে বলা যায়—যে বিশেষ পদ্ধতিতে কোনো বসতিস্থানের জীবগোষ্ঠীগুলি একে অপরের সাথে এবং ওই বসতি অঞ্চলের অজৈব পরিবেশের সাথে মিথষ্ক্রিয়া করে একটি সুস্থিত তন্ত্র গঠন করে, সেই ক্রিয়া পদ্ধতিকে বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem) বলে।
জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীব ও অজৈব পরিবেশের মিথষ্ক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, তাকে বাস্তুবিদ্যা (Ecology) বলে।
বাস্তুতন্ত্রের উপাদান (Components of Ecosystem)
বিজ্ঞানী ওডাম (Odum, 1966) বাস্তুতন্ত্রের উপাদানগুলিকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করেছেন।
- A. কার্যভিত্তিক ভাগ—1. স্বভোজী উপাদান, 2 পরভোজী উপাদান।
- B. সাংগঠনিক ভাগ—1. অজীব উপাদান, 2 উৎপাদক, 3. খাদক, 4. বিয়োজক।
এখানে আলোচনার সুবিধার্থে বাস্তুতন্ত্রকে সামগ্রিক ভাবে প্রধান দু-ভাগে বিভক্ত করা হল—
- A. অজীব উপাদান (Abiotic Compenents)
- B. সজীব উপাদান (Biotic Components )
A. অজীব বা অ্যাবায়োটিক উপাদান (Abiotic Components) :
জীব ছাড়া পরিবেশের সকল উপাদানগুলিকে (মাটি, জল, বায়ু, অজৈব লবণ, জৈব পদার্থ) একসাথে অ্যাবায়োটিক উপাদান বলে। এর প্রধান তিনটি ভাগ নিম্নরূপ :
- (a) ভৌত উপাদান (Physical Components) : সূর্যালোক, উষ্মতা, বায়ু, জল, মাটি প্রভৃতি।
- (b) অজৈব পদার্থ (Inorganic Substances) : নাইট্রোজেন, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, লৌহ, ফসফেট, কার্বনেট, সালফেট প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার খনিজ লবণ।
- (c) জৈব পদার্থ (Organic Substances) : মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ মাটিতে অবিয়োজিত বা অর্ধবিয়োজিত অবস্থায় থাকে।
B. সজীব বা বায়োটিক উপাদান (Biolic Conponents) :
জল, মাটি, বায়ু সকল স্থানে বসবাসকারী সকল প্রকার জীব (স্বভোজী ও পরভোজী) হল সজীব উপাদান। একে তিনভাগে ভাগ করা যায়; যথা—উৎপাদক, খাদক ও বিয়োজক।
(a) উৎপাদক (Producer) : ম্যাক্রোস্কোপিক ও মাইক্রোস্কোপিক সকল স্বভোজী জীব, যারা অজৈব উপাদান (H,O ও CO) থেকে সৌরশক্তির সহায়তায় সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপন্ন কবে, তারা হল উৎপাদক। এরা সাধারণত ক্লোরোফিলযুক্ত সবুজ উদ্ভিদ। এছাড়া সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়া ও রাসায়নিক সংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদিও উৎপাদক।
(b) খাদক (Consumer) : যেসকল জীব পরভোজী এবং খাদ্য তৈরি করতে না পেরে উৎপাদক থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে খাদ্য গ্রহণ করে তাদের খাদক বলে। সকল প্রাণীই খাদক। এদের ম্যাক্রোকনজিউমারও বলা হয়।
খাদকের প্রকারভেদগুলি হল—
(i) প্রাথমিক বা প্রথম সারির খাদক (Primary Consumer) : যেসকল খাদক সরাসরি উৎপাদককে খাদ্যরূপে গ্রহণ করে তাদের প্রাথমিক খাদক বা তৃণভোজী (Hervivorous) বলে। যেমন—জুপ্লাঙ্কটন, জলজ ও স্থলজ কীটপতঙ্গ, হরিণ, ছাগল, ইঁদুর প্রভৃতি।
(ii) গৌণ বা দ্বিতীয় সারির খাদক (Secondary Consumer) : প্রাথমিক খাদককে যারা খাদ্যরূপে গ্রহণ করে, তাদের গৌণখাদক বলে। যেমন—ব্যাং, বিড়াল, টিকটিকি, ছোটো মাছ, বাঘ, সিংহ প্রভৃতি।
(iii) প্রগৌণ বা তৃতীয় সারির খাদক (Tartiary Consumer) : গৌণ খাদককে যারা খাদ্যরূপে গ্রহণ করে, তাদের প্রগৌণ খাদক বলে। যেমন—বাজপাখি, ময়ূর, কুমির, বোয়াল প্রভৃতি। কখনও চতুর্থ সারির খাদকও থাকে।
(c) বিয়োজক বা পরিবর্তক (Decomposer or Transformer) : যেসকল আণুবীক্ষণিক জীব মৃত উদ্ভিদ বা প্রাণী দেহের জটিল জৈব পদার্থকে ভেঙে প্রথমে সরল জৈব পদার্থ ও শেষে অজৈব পদার্থে পরিণত করে, তাদের বিয়োজক বা পরিবর্তক বা মাইক্রোকন্জিউমার বলে। যেমন—বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্যান্য কিছু আণুবীক্ষণিক জীব।
⚫খাদক ও বিয়োজক সকলকে একসাথে পরভোজী উপাদান বলে।
⚫গৌণ ও প্রগৌণ খাদকদের একসাথে মাংসাশী (Carnivorous) বলে।
⚫অনেকে বিয়োজক ও পরিবর্তক আলাদা অর্থে ব্যবহার করেছেন। সেক্ষেত্রে বিয়োজক বলা হয় তাদের, যারা জটিল জৈব পদার্থ থেকে সরল জৈব পদার্থ তৈরি করে এবং পরিবর্তক বলা হয় তাদের, যারা সরল জৈব পদার্থকে অজৈব পদার্থে পরিণত করে।
⚫জীবভর (Biomass) : একটি নির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্রের সকল জীবের মিলিত ভর।
⚫বায়োম (Biome) : নির্দিষ্ট জলবায়ুর দ্বারা প্রভাবিত নির্দিষ্ট জীবগোষ্ঠী।
⚫পপুলেশন (Population) : নির্দিষ্ট বসতিতে একই প্রজাতির সকল জীব।
⚫জীব সম্প্রদায় বা বায়োটিক কমিউনিটি (Biotic Community) : কোনো নির্দিষ্ট বসতিতে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত সকল জীবগোষ্ঠী ।
⚫অটইকোলজি (Autecology) : বাস্তুতন্ত্রের একটি জীব সম্পর্কে আলোচনা।
⚫সিনইকোলজি (Synecology) : বাস্তুতন্ত্রের সকল জীব সম্পর্কে আলোচনা ।
⚫ইকোলজিক্যাল নিচ্ (Ecological Niche ) : বাস্তুতন্ত্রে একটি নির্দিষ্ট জীবের অবস্থান ও ভূমিকা ৷