সংবহনতন্ত্রের উপাদান
সংবহনতন্ত্রের উপাদান (Components of circulatory system):
সংবহনতন্ত্রের উপাদানগুলি হল হৃৎপিন্ড, ধমনি, শিরা ও জালক।
A) হৃৎপিন্ড (Heart):
হৃৎপেশীযুক্ত যে পাম্পযন্ত্র সারাদেহে রক্ত সঞ্চালন ঘটায় তাকে হৃৎপিন্ড বলে।
অমেরুদন্ডী প্রাণীদের দেহে হৃৎপিন্ডের গঠন খুবই সরল (পেশিযুক্ত থলির মতো) এবং পৌষ্টিকনালির পৃষ্ঠদেশ থাকে। মেরুদন্ডী প্রাণীদের দেহে হৃৎপিন্ডের গঠন জটিল (বিভিন্ন প্রকোষ্ঠযুক্ত) এবং পৌষ্টিকনালির অঙ্কদেশে অবস্থিত।
হৃৎপিন্ডের আবরণকে পেরিকার্ডিয়াম (Pericardium) বলে। এর দুটি স্তর থাকে। বাইরের প্যারাইটাল (Parietal) পেরিকার্ডিয়াম এবং ভিতরেরটি ভিসেরাল (Visceral) পেরিকার্ডিয়াম নিয়ে গঠিত। দুটি স্তরের মাঝে সেরাস তরল থাকে যা ঘর্ষণজনিত বাধা থেকে হৃৎপিন্ডকে রক্ষা করে। হৃৎপিন্ডের প্রাচীর হৃৎপেশি দ্বারা গঠিত। প্রাচীরের বাইরের পেশিস্তরকে মায়োকার্ডিয়াম এবং ভিতরের পেশিস্তরকে এন্ডোকার্ডিয়াম বলে।
হৃৎপিন্ডের ওপরের প্রকোষ্ঠকে অলিন্দ (Atrium) এবং নীচের প্রকোষ্ঠকে নিলয় (Ventricle) বলে। মাছের হৃৎপিন্ডে প্রধান দুটি প্রকোষ্ঠ; একটি অলিন্দ ও একটি নিলয়। মাছের হৃৎপিন্ডে সর্বদা দূষিত রক্ত প্রবাহিত হয় বলে এদের হৃৎপিন্ডকে ভেনাস হৃৎপিন্ড বলে। উভচরের হৃৎপিন্ডে প্রধান তিনটি প্রকোষ্ঠ; দুটি অলিন্দ ও একটি নিলয়। সরীসৃপের হৃৎপিন্ডেও (ব্যতিক্রম কুমির) তিনটি প্রকোষ্ঠ; কিন্তু নিলয়টি অর্ধবিভক্ত। উভচর ও সরীসৃপের হৃৎপিন্ডের নিলয়ে বিশুদ্ধ ও দূষিত রক্ত মিশে যায় বলে এদের হৃৎপিন্ডকে মিশ্র হৃৎপিন্ড বলে। কুমির, পক্ষী ও স্তন্যপায়ীর হৃৎপিন্ডে চারটি প্রকোষ্ঠ, দুটি অলিন্দ ও দুটি নিলয়।
মাছের হৃৎপিন্ডের মধ্য দিয়ে একটিমাত্র চক্রাকার পথে রক্ত সংবাহিত হয়, তাই এদের একচক্রী হৃৎপিন্ড বলে। উভচর, সরীসৃপ, পক্ষী ও স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে হৃৎপিন্ডের মধ্য দিয়ে প্রধান দুটি চক্রাকার পথে রক্ত সংবাহিত হয়, তাই এদের হৃৎপিন্ডকে দ্বিচক্রী হৃৎপিন্ড বলে।
B) ধমনি (Artery):
যে রক্তবাহের মাধ্যমে রক্ত হৃৎপিন্ড থেকে সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ে তাকে ধমনি বলে। ধমনির প্রাচীর পুরু এবং গহ্বর ছোটো। এর প্রাচীর ত্রিস্তরযুক্ত।
স্তর তিনটি ভিতরে থেকে বাহিরে ক্রমানুসারে।
- (1) আবরণী কলা গঠিত টিউনিকা ইনটিনা (Tunica Intena)
- (2) পেশিকলা গঠিত টিউনিকা মিডিয়া (Tunica Media) এবং
- (3) তন্তুময় কলা গঠিত টিউনিকা অ্যাডভেনটিশিরা (Tunica adventitia)।
ধমনির রক্ত লাল এবং বিশুদ্ধ ব্যতিক্রম ফুস্ফুসীয় ধমনি। ধমনির মধ্যে রক্তবেগে প্রবাহিত হয়। হৃৎপিন্ড থেকে উৎপন্ন মহাধমনি ভাগ হয়ে বিভিন্ন ধমনি ও উপধমনিরূপে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়েছে।
C) শিরা (Vein):
যে রক্তবাহ সমগ্র দেহ থেকে হৃৎপিন্ডে বহন করে আনে, তাকে শিরা বলে। ধমনির প্রাচীর পাতলা এবং গহ্বর বড়ো। এর প্রাচীরে তিনটি স্তর আছে; তবে মাঝের স্তরটি (টিউনিকা মিডিয়া) ধমনির চেয়ে পাতলা। শিরার রক্ত কালচে লাল এবং দূষিত (ব্যতিক্রম ফুসফুসীয় শিরা)। শিরার মধ্যে রক্ত ধীরে প্রবাহিত হয় এবং শিরার ভিতর কপাটিকা থাকে। সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম শিরা সারাদেহের জালক থেকে উৎপন্ন হয়ে পরস্পর যুক্ত হয়ে মাঝারি ও বড়ো শিরা এবং শেষে মহাশিরায় পরিণত হয়ে হৃৎপিন্ডের সাথে যুক্ত।
D) রক্তজালক (Capillary):
ধমনিকা ও সূক্ষ্ম শিরার সংযোগস্থলে একস্তর বিশিষ্ট অতিসূক্ষ্ম যে রক্তবাহকগুলি জালের আকারে অবস্থান করে, তাদের রক্তজালক বলে। রক্তজালকের একস্তর প্রাচীরকে এন্ডোথেলিয়াম (Endothelium) বলে।
ধমনি ও শিরার পার্থক্যঃ
নং | ধমনি | শিরা |
---|---|---|
১ | ধমনির মাধ্যমে রক্ত হৃৎপিন্ড থেকে দেহের বিভিন্ন অংশের জালকে পৌঁছোয়। | শিরামাধ্যমে রক্ত সারাদেহের জালক থেকে হৃৎপিন্ডে আসে। |
২ | ধমনির প্রাচীর পুরু (মধ্যস্তর বেশি পুরু) এবং গহ্বর ছোটো। | শিরার প্রাচীর পাতলা এবং গহ্বর বড়ো। |
৩ | ধমনি কপাটিকাবিহীন এবং এতে রক্ত বেগে প্রবাহিত হয়। | শিরা কপাটিকাযুক্ত এবং এতে রক্ত ধীরে প্রবাহিত হয়। |
৪ | ধমনির রক্ত লাল এবং বিশুদ্ধ। (ব্যতিক্রম ফুসফুসীয় ধমনি) | শিরার রক্ত কালচে লাল এবং দূষিত। (ব্যতিক্রম ফুসফুসীয় শিরা) |
৫ | এতে রক্তের চাপ বেশি এবং চুপসে যায় না। | এতে রক্তের চাপ কম এবং খালি অবস্থায় চুপসে যায়। |