রক্ততঞ্চন
রক্ততঞ্চন (Blood Coagulation)
সংজ্ঞাঃ
যে প্রক্রিয়ায় দেহের কোনো ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাতের কিছুক্ষণের মধ্যে তরল রক্ত অর্ধকঠিন থকথকে জেলির মতো পদার্থ পরিণত হয় তাকে রক্ততঞ্চন বা হিমোস্ট্যাসিস (Haemostasis) বলে।
রক্তক্ষরণের সময়কাল (Bleeding Time or B.T)= 2-6 মিনিট
রক্ততঞ্চনের সময়কাল (Clotting Time or C.T)= 2-8 মিনিট
রক্ততঞ্চনের পদ্ধতিঃ
রক্ততঞ্চন প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিত প্রধান তিনটি পর্যায়ে ঘটে-
1. থ্রম্বোপ্লাস্টিন উৎপাদনঃ ক্ষতিগ্রস্থ রক্তনালির অন্তআবরণীর ভিতরে অবস্থিত কোলাজেন তন্তুর সংস্পর্শে বিনষ্ট অণুচক্রিকা Ca++ আয়ন ও অন্যান্য ফ্যাক্টরের (XII, XI, X, VII প্রভৃতি) উপস্থিতিতে সক্রিয় থ্রম্বোপ্লাস্টিন উৎপন্ন করে।
2. থ্রম্বিন উৎপাদনঃ সক্রিয় থ্রম্বোপ্লাস্টিন Ca++ আয়নের উপস্থিতিতে নিষ্ক্রিয় প্রোথ্রম্বিনকে সক্রিয় থ্রম্বিনে পরিণত করে।
প্রোথ্রম্বিন --> থ্রম্বিন
3. ফ্রাইব্রিন উৎপাদন এবং তঞ্চনঃ সক্রিয় থ্রম্বিন ফাইব্রিনোজেনকে ফাইব্রিনে পরিণত করে। অদ্রবণীয় ফাইব্রিনতন্তু জালকাকারে বিন্যস্ত হয় এবং তাতে RBC ও WBC আটকে পড়ে থকথকে জেলির ন্যায় তঞ্চনপিণ্ড গঠন করে।
ফাইব্রিনোজেন --> ফাইব্রিন মনোমার --> ফাইব্রিন পলিমার --> পলিমার অদ্রবণীয় ফাইব্রিন।
অণুচক্রিকা প্লাগঃ
রক্ততঞ্চন শুরুর পূর্বে রক্তনালির সংকোচনের ফলে (নর অ্যাড্রিনালিন প্রভৃতি হরমোনের প্রভাবে) ক্ষতিগ্রস্থ রক্তবাহে অণুচক্রিকা দলবদ্ধভাবে অবস্থান করে; একে অণুচক্রিকা প্লাগ বলে। এই প্লাগের ভিতর ও বাইরে আলাদাভাবে রক্ত তঞ্চিত হয়।
রক্ততঞ্চনবিরোধী পদার্থ (Anticoagulant):
রক্তের-হেপারিন, অ্যান্টিথ্রম্বিন, হেপারান প্রভৃতি। বাইরের-সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের অক্সালেট, সোডিয়াম সাইট্রেট হিরুডিন (জোঁকের রস), EDTA= (ইথিলিন ডাইঅ্যামাইন টেট্রাঅ্যাসিটেট) প্রভৃতি।
রক্তবাহে রক্ত তঞ্চিত হয় না কেন?
- (1) রক্তের দ্রুতগতির জন্য অণুচক্রিকা দলবদ্ধ হতে পারে না।
- (2) অভগ্ন রক্তনালির গাত্র মসৃণ হওয়ায় অণুচক্রিকা বিদারিত হয় না। এবং
- (3) রক্তরসে তঞ্চনবিরোধী পদার্থ (হেপারিন, অ্যান্টিথ্রম্বিন) থাকায় রক্তবাহের মধ্যের রক্ত তঞ্চিত হয় না।
সিরাম (Serum) কী?
রক্ত জমাট বাঁধার পর যে ঈষৎ হরিদ্রাভ স্বচ্ছ তরল নিঃসৃত হয় তাকে সিরাম বলে। রক্তরসের সাথে এর প্রধান পার্থক্য এতে ফাইব্রিনোজেন থাকে না।