সুন্দরীর অভিযোজন
সুন্দরীর অভিযোজন (Adaptation of Sundari)
সুন্দরী একটি লবণাম্বু উদ্ভিদ। এর ইংরেজি নাম লুকিং গ্লাস ট্রি (Looking glass tree)। সমুদ্র উপকূলেNaCI, MgCI2, MgSO4 প্রভৃতি লবণের ভাগ বেশি থাকায় পর্যাপ্ত জল থাকলেও উদ্ভিদ তা গ্রহণে অক্ষম। তাই এই মাটিকে শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মৃত্তিকা (Physiologically dry soil) বলে)।
লবণাক্ত মাটিতে বসবাসকারী সুন্দরীর অভিযোজিত বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ :
1. মূল (Root) :
- (i) সুন্দরীর মূল মাটির গভীরে যায় না, মাটির অল্প নীচেই ছড়ানো থাকে।
- (ii) লবণযুক্ত, কর্দমাক্ত, রন্দ্রবিহীন ও জলমগ্ন মাটিতে অক্সিজেন কম থাকায় শ্বসনের জন্য মূলের শাখাপ্রশাখার অগ্রভাগ মাটির ওপরে খাঁড়াভাবে উঠে আসে এবং ছিদ্রযুক্ত ও অক্সিজেন শোষণে সক্ষম হয়। এগুলিকে শ্বাসমূল (Breathing roots) বা নিউম্যাটোফোর (Pneumatophores) বলে।
- (iii) কাণ্ডকে ধরে রাখার জন্য তক্তার মতো চ্যাপটা অধিমূল (Root buttress) বর্তমান।
- (iv) মূলের কোশের অভিস্রবণ চাপ থাকায় মূলের জলশোষণ ক্ষমতা বাড়ে।
2. কাণ্ড (Stem) :
- (i) সুন্দরীর কাণ্ড খর্বাকার গম্বুজের মতো এবং প্রতিকূল অবস্থা কাটানোর জন্য প্রচুর খাদ্যসঞ্চয় করে রাখে।
- (ii) কাণ্ডের ত্বক পুরু কিউটিকল ও মোমের আবরণযুক্ত।
- (iii) মিউসিলেজ থাকায় প্রচুর জলসঞ্চয় করে রাখে।
3. পাতা (Leaf) :
- (i) পাতা পুরু, রসালো ও চর্মবৎ।
- (ii) পাতার ত্বক পুরু কিউটিকল ও মোমের আবরণযুক্ত।
- (iii) পত্ররন্ধ্রগুলি নিমজ্জিত (Sunken)।
সুন্দরীর কয়েকটি শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন :
- (i) মূলের শ্বসনের জন্য শ্বাসমূল থাকে৷
- (ii) বাষ্পমোচন রোধ করার জন্য পুরু কিউটিকল ও নিমজ্জিত পত্ররন্ধ্র থাকে।
ম্যানগ্রোভ (Mangrove) :সমুদ্র উপকূলে ও নদীর মোহানার কাছে লবণাক্ত মাটিতে যেসকল উদ্ভিদ জন্মায় তাদের ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ বলে। যেমন—সুন্দরী, গেঁও, গরান প্রভৃতি।
জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম (Viviparous Germination) :কম অক্সিজেন ও লবণযুক্ত মাটিতে অঙ্কুরোদ্গম সম্ভব না হওয়ায় জনিতৃ উদ্ভিদে থাকা অবস্থাতেই বীজের অঙ্কুরোদ্গম ঘটে গদাকৃতি সবল বীজপত্রাবকাণ্ডযুক্ত অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টিকে জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম বলে। উদাহরণ—রাইজোফোরা, সেরিয়োপস প্রভৃতি।