সংক্ষিপ্ত বিবরণ
অভিব্যক্তি বা বিবর্তন (Evolution)
সূচনা (Introduction)
আজকের এই পৃথিবী কি সবদিনই এইরকমই ছিল? এই সাগর, বনানী, প্রাণীকুল কি পৃথিবী সৃষ্টির সময় থেকেই ছিল এবং অপরিবর্তিতই থেকে গেছে? এসকল প্রশ্নের উত্তর জানবার জন্য বহু প্রাচীনকাল থেকেই বহু দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী এ বিষয়ে বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।
গ্রিক দার্শনিক অ্যানক্সিম্যান্ডার (Anoximander, 611-547 B.C.) বলেন বহু বৎসর ধরে মাছের পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে। জেনোফেনিস (Xenophanes, 570 475 B.C.) নামে এক দার্শনিক বিজ্ঞানী প্রথম সামুদ্রিক প্রাণীর জীবাশ্ম আবিষ্কার করে বলেন অতীতের প্রাণীর সাথে তাঁর সময়কার প্রাণীর মিল নেই। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল (Aristotle, 384–322 B.C.) জীব সৃষ্টি সম্পর্কে নতুন আলোকপাত করেন। তাঁর মতে, অজৈব পদার্থ থেকেই প্রথম জৈব পদার্থের সৃষ্টি হয়েছে এবং জীবজগতের বিভিন্ন জীবগোষ্ঠীর একটির থেকে আর-একটির উদ্ভব ঘটেছে। আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে ধারণা করা হয় সরল জীব থেকে অতি ধীরগতিতে ক্রমপরিবর্তন ঘটে জটিল জীবের উদ্ভব ঘটেছে। যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় এইভাবে নতুন জীবের সৃষ্টি হয় তাকে অভিব্যক্তি বা বিবর্তন (Evolution) বলে।
সংজ্ঞা (Definition) :
যে মন্থর অথচ গতিশীল জৈবিক প্রক্রিয়ায় ক্রমপরিবর্তনের মাধ্যমে সরলতর জীব থেকে ধাপে ধাপে জটিলতর বিভিন্ন জীবের উদ্ভব ঘটে, তাকে অভিব্যক্তি বা জৈব অভিব্যক্তি বলে।
ব্যাখ্যা (Explanation) :
সূর্য থেকে সৃষ্ট পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের আবির্ভাব এবং তার ক্রমজটিলতার,মধ্য দিয়ে উন্নত জীবের সৃষ্টিই হল অভিব্যক্তি। আজ থেকে প্রায় 460 কোটি বছর পূর্বে সূর্যের থেকে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়। আদি পৃথিবীর গ্যাসীয় অবস্থা থেকে ক্রমে তাপবিকিরণ করে শীতল ও কঠিন হওয়ার সময় পৃথিবীর ঘূর্ণায়মান অবস্থার জন্য ভারী উপাদানগুলি কেন্দ্রের দিকে এবং হালকা উপাদানগুলি পরিধির দিকে অবস্থান করতে থাকে। এরপর বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্রমপরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক উপায়েই অজৈব পদার্থ থেকে জৈব পদার্থের উৎপত্তি হয়েছে; যাকে বলা হয় রাসায়নিক অভিব্যক্তি।
বিজ্ঞানী হেকেল (Haeckel), ওপারিন, (Oparin), মিলার (Miller) প্রভৃতি বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের মতে প্রায় 260 কোটি বৎসর পূর্বে রাসায়নিক অভিব্যক্তির ফলে সমুদ্রের জলে প্রথম প্রাণের উদ্ভব ঘটেছে যার সংক্ষিপ্তসার নিম্নরূপ :
পারমাণবিক C, H, O, N প্রভৃতি ↓ মহাজাগতিক রশ্মি H2O,CH3,CO2 , NH3 , HCN প্রভৃতি ↓ সরল শর্করা, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড, N, বেস ↓ প্রোটিন, নিউক্লিয়োটাইড ↓ নিউক্লিয়োপ্রোটিন ↓ কোয়াসার্ভেট ↓ ভাইরাস জাতীয় আদি জীব এরপর জৈব অভিব্যক্তি ঘটে নিম্নরূপে : ভাইরয়েড → ভাইরাস → প্রোক্যারিয়োটিক জীব ↓ ইউক্যারিয়োটিক জীব এককোশী ছত্রাক এককোশী শৈবাল এককোশী প্রাণী ↓ ↓ ↓ বহুকোশী ছত্রাক বহুকোশী শৈবাল ছিদ্ৰাল প্রাণী ↓ ↓ মসবর্গ একনালিদেহী ↓ ↓ ফার্ন বর্গ কৃমিজাতীয় প্রাণী ↓ ↓ ব্যক্তবীজী অঙ্গুরিমাল ↓ ↓ গুপ্তবীজী সন্দ্বীপদ কম্বোজ ↓ কণ্টক ত্বক ↓ কর্ডাটা মৎস্য ↓ উভচর ↓ সরীসৃপ পক্ষী স্তন্যপায়ী