অঙ্গজজনন
অঙ্গজ জনন (Vegetative Reproduction or Vegetative multiplication)
সংজ্ঞা (Definition) :
যেপ্রকার জনন পদ্ধতিতে জীবদেহের বিভিন্ন অংশ (উদ্ভিদের) মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সমগুণসম্পন্ন অপত্য সৃষ্টি হয়, তাকে অঙ্গজ জনন বা অঙ্গজ বংশবিস্তার বলে।
প্রকারভেদ ও উদাহরণ (Types and Example) :
অঙ্গজজনন প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম হতে পারে।
A. উদ্ভিদের দেহে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটিত প্রাকৃতিক অঙ্গজ জননের উদাহরণ :
1. দ্বিবিভাজন (Fission) পদ্ধতিতে ইস্ট, ক্ল্যামাইডোমোনাস প্রভৃতি এককোশী উদ্ভিদের কোশটি বিভাজিত হয়ে অপত্য উদ্ভিদ গঠিত হয়।
2. কোরকোদগম (Budding) পদ্ধতিতে ইস্ট-এর দেহে সৃষ্ট কোনো স্ফীত অংশ (কোরক) একটি অপত্য নিউক্লিয়াসসহ মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য ইস্টে পরিণত হয়।
3. খণ্ডভবন (Fragmentation) -এর মাধ্যমে স্পাইরোগাইরা-এর দেহখণ্ড হতে নতুন উদ্ভিদ গঠিত হয়।
4. পরিবর্তিত মৃদ্গত কাণ্ড (Modified underground stem)-এর মাধ্যমে আদা, আলু, পেঁয়াজ, ওল প্রভৃতির অপত্য গঠিত হয়।
5. পরিবর্তিত অর্ধবায়বীয় কাণ্ড (Modified sub-aerial stem)-এর মাধ্যমে শুশনি, স্ট্রবেরি, চন্দ্রমল্লিকা, কচুরিপানা প্রভৃতির বংশবৃদ্ধি হয়।
6. অস্থানিক মুকুলের মাধ্যমে পাথরকুচি পাতা ও পটল মূল নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি করে।
7. বুলবিল (Bulbil) নামক পরিবর্তিত পুষ্পমুকুলের দ্বারা চুপড়ি আলু বংশবিস্তার করে।
B. উদ্ভিদের দেহ থেকে কৃত্রিম উপায়ে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টির উদাহরণ :
1. শাখাকলম (Cutting) সৃষ্টির মাধ্যমে (কাণ্ডের অংশ কেটে মাটিতে স্থাপন করা হয়) গাঁদা, জবা, সজিনা প্রভৃতির কৃত্রিম অঙ্গজজনন ঘটানো যায়।
2. দাবাকলম (Layering) সৃষ্টির মাধ্যমে (মাটিসংলগ্ন গাছের শাখার পর্বযুক্ত অংশকে মাটি চাপা দেওয়া হয় এবং কয়েকদিন পর উৎপন্ন মূলসহ শাখা কেটে অন্যত্র স্থাপন করা হয়) লেবু, আঙুর প্রভৃতির অপত্য গঠিত হয়।
3. গুটিকলম (Gootee) তৈরি করে (গাছের শাখার কোনো অংশের ছাল তুলে সারমাটির প্রলেপ ও তার ওপর চট দিয়ে বেঁধে বেশ কয়েকদিন জল দেওয়ার পর সৃষ্টমূলসহ শাখা কেটে মাটিতে স্থাপন করা হয়) লিচু, পেয়ারা প্রভৃতির অপত্য গঠিত হয়।
4. জোড়কলম (Grafting) তৈরি করে (সাধারণ মানের মূলসহ একটি উদ্ভিদের কাণ্ডের সাথে একই প্রজাতির উন্নতমানের শাখা বা মুকুল বিশেষভাবে জোড় লাগানো হয়; যার নীচের অংশকে স্টক ও উপরের অংশকে সিয়ন বলে) গোলাপ, আম, জাম প্রভৃতির অপত্য উৎপন্ন করা হয়।
গুরুত্ব (Importance) :
A. অঙ্গজননের সুবিধাগুলি হল :
1. নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের সংরক্ষণ : অঙ্গজজননে জনিতৃ জীবের সকল বৈশিষ্ট্য অপত্যের মধ্যে থাকে। তাই বংশানুক্রমে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য সংরক্ষিত হয়।
2. দ্রুত বংশবিস্তার : খুব অল্পসময়ে অঙ্গজজননের মাধ্যমে বহু অপত্য উৎপন্ন করা যায়।
3. বীজবিহীন উদ্ভিদের বংশবিস্তার : যেসকল উদ্ভিদে কদাচিৎ বীজ উৎপন্ন হয় বা একেবারেই হয় না সেই উদ্ভিদে অঙ্গজ জনন একান্ত প্রয়োজন।
4. ফুল ও ফলের দ্রুত উৎপাদন : অঙ্গজজননে সৃষ্ট উদ্ভিদগুলিতে জনিতৃ দেহের কিছু হরমোন থাকায় অল্পসময়ে ফুল ও ফল উৎপন্ন হয়।
5. সহজসাধ্য প্রক্রিয়া : অঙ্গজজনন সহজেই সংঘটিত হয় এবং এতে কোনো ঝুঁকি থাকে না।
B. অঙ্গজননের অসুবিধাগুলি হল :
- (1) অঙ্গজজননে উৎপন্ন উদ্ভিদগুলিতে কোনো নতুন বৈশিষ্ট্যের সংযোজন ঘটে না।
- (2) উৎপন্ন উদ্ভিদের অভিযোজন ক্ষমতা কম হয় এবং দুর্বল ও স্বল্পায়ু হয়।
- (3) অভিব্যক্তির সম্ভাবনা না থাকায় প্রজাতির অবলুপ্তি ঘটতে পারে।