রুইমাছের অভিযোজন
রুইমাছের অভিযোজন (Adaptation of Rohu fish)
রুই মাছ একটি মুখ্য জলজ প্রাণী। এটির জলজ অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ।
1. দেহাকৃতি (Body shape) :
জলের রোধ অতিক্রম করে দ্রুত সাঁতার কেটে অগ্রসর হওয়ার জন্য রুইমাছের দেহটি মাকুর মতো হয়েছে।
2. পাখনা (Fins) :
রুইমাছের গমনাঙ্গ হিসাবে মোট সাতটি পাখনা থাকে। জলের চাপে ছিঁড়ে না যায় এমনভাবে পাখনাগুলি গঠিত। পাখনার কাঠামো দৃঢ় করার জন্য পাখনারশ্মি (Fin-rays) বর্তমান। মাছের যুগ্ম বক্ষ ও শ্রোণিপাখনা এবং অযুগ্ম পৃষ্ঠ, পায়ু ও পুচ্ছ পাখনা বর্তমান।
- (i) পুচ্ছপাখনা সাঁতার কাটতে ও দিক পরিবর্তন,
- (ii) পৃষ্ঠ ও পায়ু পাখনা দেহের আয়তন বৃদ্ধি করে সোজাভাবে এগিয়ে যেতে,
- (iii) বক্ষপাখনা জলে ডুব দিতে ও স্থিতিশীল থাকতে এবং
- (iv) শ্রোণিপাখনা ভেসে উঠতে। ও কিছুটা স্থিতিশীল থাকতে সহায়তা করে।
3. বায়ুথলি (Air-bladder) :
উদরগহ্বরে অবস্থিত অগ্র ও পশ্চাদ্ প্রকোষ্ঠযুক্ত বায়ুপূর্ণ থলি বা বায়ুথলি থাকে। অগ্রপ্রকোষ্ঠে অবস্থিত রেডগ্রন্থি (Red gland) গ্যাস উৎপন্ন করতে এবং পশ্চাদ্ প্রকোষ্ঠে অবস্থিত রেটিয়া মিরাবিলিয়া (Retia mirabilia) নামক রক্তজালক গ্যাস উৎপন্ন করতে পারে। এইভাবে বায়ুস্থলির বায়ু কমিয়ে বা বাড়িয়ে মাছ যথাক্রমে ডুবে যেতে বা ভেসে উঠতে পারে।
4. স্পর্শেন্দ্রিয় রেখা (Lateral line) :
দেহের দু-পাশে কানকোর পেছন থেকে। লেজ পর্যন্ত বিশেষ রেখা ইন্দ্রিয়রূপে কাজ করে, যাকে স্পর্শেন্দ্রিয় রেখা বলে। এটির দ্বারা মাছ জলের কম্পন অনুভব করে জলের চাপ, গভীরতা ও স্রোতের দিক নির্ধারণ এবং শব্দগ্রহণ করতে পারে। এছাড়া জলের তাপ, pH মাত্রা প্রভৃতিও বুঝতে পারে।
5. দেহাবরণ ও শ্লেষ্মা (Body covering and mucus) :
রুইমাছের দেহ সাইক্লয়েড আঁশ দ্বারা ঢাকা থাকে। এবং আঁশের ওপর পিচ্ছিল মিউকাস থাকে। এগুলি আত্মরক্ষায় এবং আঘাত বা ঘর্ষণজনিত বাধা থেকে মাছের দেহকে রক্ষা করে।
6. ফুলকা (Gills) :
মাছের শ্বাসঅঙ্গ হল চারজোড়া ফুলকা। চিরুনির মতো ফলকাপাতে অবস্থিত রক্তজালক দ্বারা জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ এবং CO2 বর্জন করতে পারে। ফুলকাগুলি যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য কানকো (Operculum) দ্বারা ঢাকা থাকে।
7. নিকটিটেটিং পর্দা (Nictitating membrane) :
পল্লববিহীন চক্ষুদুটিকে জলের আঘাত থেকে রক্ষা করে সহজে দেখতে পাওয়ার জন্য স্বচ্ছ নিকটিটেটিং পর্দা দ্বারা ঢাকা থাকে।
৪. মায়োটোম পেশি (Myotome muscles) :
মাছের মেরুদণ্ডের দু-পাশে ‘v’-আকৃতির মায়োটোম পেশির সংকোচন-প্রসারণের দ্বারা মাছের দেহটি আন্দোলিত হয়, যা মাছকে সাঁতার দিতে সহায়তা করে।
9. নাসারন্ধ্র (Nostrils) :
কেবল বহিঃনাসারন্ধ্র থাকে, যা ঘ্রাণকার্যে সহায়তা করে।
10. কর্ণ (Ear) :
কেবল অন্তঃকর্ণ থাকে, যার কাজ ভারসাম্য রক্ষা করা।