অভিব্যক্তি ও অভিযোজনের সম্পর্ক
অভিব্যক্তি ও অভিযোজনের সম্পর্ক (Relation between Evolution and Adaptation)
1. অভিযোজনের মাধ্যমেই অভিব্যক্তি ঘটে। পরিবর্তিত পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার জন্য জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এইসকল পরিবর্তন। বংশানুক্রমে পুঞ্জীভূত হয়ে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়। ল্যামার্কের 'অজিত বৈশিষ্ট্য' এবং ডারউইনের 'অনুকূল প্রকরণ'-কে অভিযোজনের সাথে তুলনা করা যায় । সুতরাং সদা পরিবর্তনশীল পরিবেশে জীবের অভিযোজনের মাধ্যমে ক্রমশ সরল জীব থেকে জটিল জীবের উৎপত্তি হয়, অর্থাৎ অভিব্যক্তি ঘটে।
2. অভিব্যক্তির পথে কোনো বৈশিষ্ট্যের অবলুপ্তি ঘটলে অভিযোজনের মাধ্যমে পুনরাবৃত্তি অসম্ভব। যেমন—সাপের পূর্বপুরুষের পা ছিল। কিন্তু সাপ গর্তে বাস সবার জন্য পা-এর অবলুপ্তি ঘটেছে। এখন সাপ যদি গর্তে বাস নাও করে তবুও সাপের তার তা উৎপন্ন হবে না।
3. অভিযোজন ঘটতে না পারলে অভিব্যক্তির সম্ভাবনা কমে যায়। যেমন- জীবন্ত জীবাশ্ম’গুলি পরিবেশের সাথে সম্পূর্ণভাবে অভিযোজিত হওয়ার ফলে তাদের মধ্যে নতুন করে অভিযোজন না ঘটায় তাদের থেকে বর্তমানে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটার সম্ভাবনা কম।
সুতরাং বলা যায় অভিযোজন হল কারণ এবং অভিব্যক্তি হল তার ফল।
অভিসারী অভিযোজন (Convergent adaptation) :
বিভিন্ন অসম্পর্কিত বা দূর সম্পর্কিত জীব একই পরিবেশে বসবাস করলে একইপ্রকার অভিযোজন ঘটে, একে অভিসারি অভিযোজন বলে। যেমন—জলে বসবাসকারী মাছ, কচ্ছপ, পেঙ্গুইন, তিমি সকলেরই জলজ অভিযোজন ঘটেছে।
অপসারি অভিযোজন (Divergent adaptation) এবং অভিযোজিত বিকিরণ (Adaptive radiation) :
নিকট সম্পর্কিত জীব ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে বসবাস করলে তাদের ভিন্ন প্রকারের অভিযোজন ঘটে, একে অপসারী অভিযোজন বলে। যেমন— তিমি ও মানুষ উভয়েই স্তন্যপায়ী হলেও তিমির জলজ অভিযোজন এবং মানুষের স্থলজ অভিযোজন ঘটেছে। বিজ্ঞানী অসবর্ন (Osborn) অপসারী অভিযোজন সম্পর্কে যে সূত্র প্রণয়ন করেন তাকেই অভিযোজিত বিকিরণ সূত্র বলে। তার মতে একটি বৃহৎ অঞ্চলের মধ্যে যত বেশি ভিন্ন পরিবেশ থাকবে তত বেশি অপসারী অভিযোজন ঘটবে। সুতরাং কোনো সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে জীবের ভিন্ন ভিন্ন অভিযোজনকেই অভিযোজিত বিকিরণ বলে।
দ্বিঅভিযোজন (Double adaptation) :
কোনো জীবের দুটি পৃথক পরিবেশে বসবাসের উপযোগী অভিযোজনকে দ্বিঅভিযোজন বলে। যেমন—ব্যাং-এর জল ও স্থলে অভিযোজন; পানিফল-এর জল ও স্থল উভয় পরিবেশে থাকার মতো পাতার অভিযোজন ।