নাইট্রোজেন চক্র
নাইট্রোজেন চক্র (Nitrogen Cycle)
সংজ্ঞা (Definition) :
যে চক্রাকার পথে নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডল থেকে জীবে এবং জীব থেকে মাটিতে ও মাটি থেকে বায়ুমণ্ডলে আবর্তিত হয়, তাকে নাইট্রোজেন চক্র বলে।
নাইট্রোজেন চক্র চারটি পর্যায়ে ঘটে :
- A. বায়ুর নাইট্রোজেন মাটিতে প্রবেশ,
- B. মাটির থেকে নাইট্রোজেন জীবদেহে প্রবেশ,
- C. জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেন মাটিতে পুনঃ প্রবেশ এবং
- D. মাটি থেকে নাইট্রোজেন বায়ুতে ফিরে যাওয়া ৷
A. বায়ুর N2, মাটিতে প্রবেশ বা বায়ুর থেকে N2 অপসারণ বা নাইট্রোজেন- স্থিতিকরণ (Nitrogen fixation) :
যে বিশেষ পদ্ধতিতে বায়ুর নাইট্রোজেন নাইট্রোজেন যুক্ত যৌগে পরিণত হয়ে মাটির নাইট্রোজেন যৌগ বৃদ্ধি করে তাকে নাইট্রোজেন সংবন্ধন বলে।
(a) জীবের দ্বারা :
(i) স্বাধীনজীবী জীবাণুর দ্বারা : অ্যাজোটোব্যাকটর (Azotobacter), ক্লসট্রিডিয়াম (Clostridium), বেইজেরিঙ্কিয়া (Baijerinckia) প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া বায়ুর মুক্ত নাইট্রোজেন গ্রহণ করে নাইট্রোজেন যৌগে (NO3) পরিণত করে। ওই জীবের মৃত্যুর পর নাইট্রোজেন যৌগ মাটিতে মিশে যায়।
(ii) নীলাভ সবুজ শৈবালের দ্বারা : নস্টক (Nostoc), অ্যানাবিনা (Anabaena) প্রভৃতি বিভিন্ন নীলাভ সবুজ শৈবাল ও বায়ুর মুক্ত নাইট্রোজেনকে নাইট্রোজেন, যৌগে পরিণত করে যা তাদের মৃত্যুর পর মাটিতে মিশে যায়।
(iii) মিথোজীবী জীবাণুর দ্বারা : রাইজোবিয়াম (Rizobium) নামক ব্যাকটেরিয়া লেগুমিনোসি (শিম্বীগোত্রীয়) গোত্রের উদ্ভিদের মূলে এবং জ্যান্থোমোনাস (Xanthomonas ) নামক ব্যাকটেরিয়া রুবিয়েসি গোত্রের উদ্ভিদের পাতায় অর্বুদ (Nodules) সৃষ্টি করে মিথোজীবীরূপে বাস করে এবং মুক্ত নাইট্রোজেনকে শোষণ করে নাইট্রোজেন যৌগে পরিণত করে। উদ্ভিদগুলি মারা যাওয়ার পর ওই নাইট্রোজেন যৌগ মাটিতে মিশে যায়।
(b) ভৌত প্রক্রিয়ায় :
(i) বিদ্যুৎস্ফুরণের সময় : বৃষ্টির সময় বজ্রপাতের ফলে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন একসাথে যুক্ত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন করে (N2 + O2 → 2NO)। এটি অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড গঠন করে (2NO + O2 → 2 NO2 )। বৃষ্টির জল বা জলীয় বাষ্পের সাথে ঐটি যুক্ত হয়ে নাইট্রাস ও নাইট্রিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে (2NO2 + H2O→ HNO2 + HNO3)। এই অ্যাসিড মাটিতে পড়ে মাটির ধাতব উপাদানের সাথে যুক্ত হয়ে নাইট্রাইট ও নাইট্রেট লবণ গঠন করে।
- (ii) কৃত্রিম উপায়ে অ্যামেনিয়া, ইউরিয়া প্রভৃতি তৈরির সময় বায়ুর নাইট্রোজেন শোষিত হয়।
B. মাটির নাইট্রোজেন জীবদেহে প্রবেশ :
উদ্ভিদেরা মাটির থেকে নাইট্রেট লবণ গ্রহণ করে প্রোটিন তৈরি করে। প্রাণীরা উদ্ভিদকে খাদ্যরূপে গ্রহণ করে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে।
C. জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেন মাটিতে পুনঃপ্রবেশ :
জীবের বর্জ্যপদার্থ এবং মৃত জীবদেহগুলি মাটিতে অবস্থিত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের দ্বারা বিয়োজিত হয়ে প্রথমে অ্যামোনিয়া, পরে নাইট্রাইট ও নাইট্রেট যৌগ গঠন করে।
- ⚫(i) অ্যামোনিফিকেশন (Ammonification) : যে প্রক্রিয়ায় জীবের নাইট্রোজেন যৌগ থেকে জীবাণুর দ্বারা অ্যামোনিয়া তৈরি হয় তাকে অ্যামোনিফিকেশন বলে। এটি ব্যাসিলাস মাইকয়ডেস (Bacillus mycoides) নামক ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা ঘটে।
- ⚫(ii) নাইট্রিফিকেশন (Nitrification) : যে প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জীবাণুর দ্বারা অ্যামোনিয়া থেকে নাইট্রাইট ও নাইট্রেট যৌগ উৎপন্ন হয় তাকে নাইট্রিফিকেশন বলে। নাইট্রোসোমোনাস (Nitrosomonas ) অ্যামোনিয়াকে নাইট্রাইট এবং নাইট্রোব্যাকটর (Nitrobacter) নাইট্রাইটকে নাইট্রেটে পরিণত করে। অ্যাসপারজিলাস (Aspergillus) নামক ছত্রাক নাইট্রিফিকেশন ঘটাতে পারে।
D. মাটি থেকে নাইট্রোজেন বায়ুতে ফিরে যাওয়া বা ডিনাইট্রিফিকেশন (De- nitrification) :
যে প্রক্রিয়ায় নাইট্রেট ও নাইট্রাইট যৌগ বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা ভেঙে গিয়ে মুক্ত নাইট্রোজেন বাতাসে ফিরে যায় তাকে ডি-নাইট্রিফিকেশন বলে। সিউডোমোনাস (Pseudomonas), থায়োব্যাসিলাস (Thiobacillus), ব্যাসিলাস ডিনাইট্রিফিক্যান্স (Bacillus denitrificans) প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া এই প্রক্রিয়া ঘটায়। এই প্রক্রিয়ার পরপর ধাপগুলি হল : নাইট্রেট (NO-3) → নাইট্রাইট (NO-2) → হাইপোনাইট্রাস অ্যাসিড (H2N2O2)→ নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) → নাইট্রোজেন (N2)।
নাইট্রোজেন চক্রের তাৎপর্য্য :
- (i) নাইট্রোজেন চক্রের মাধ্যমে পরিবেশের নাইট্রোজেনের সমতা বজায় থাকে।
- (ii) নাইট্রোজেন চক্রের মাধ্যমে জৈব পদার্থ থেকে পুনরায় উদ্ভিদ নাইট্রোজেন গ্রহণ করতে পারে।
⚫নাইট্রোজেন ফিক্সিং ব্যাকটেরিয়া :
স্বাধীনজীবী : অ্যাজোটোব্যাকটর, ক্লসট্রিডিয়াম, বেইজেরিঙ্কিয়া।
মিথোজীবী : রাইজোবিয়াম, জ্যান্থোমোনাস ।
⚫অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া : ব্যাসিলাস মাইকয়ডেস।
⚫নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া : নাইট্রোসোমোনাস, নাইট্রোব্যাকটর।
⚫ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া : ব্যাসিলাস ডিনাইট্রিফিক্যাস্, থায়োবাসিলাস,সিউডোমোনাস ।
⚫নাইট্রোজেন ফিক্সিং শৈবাল : নস্টক, অ্যানাবেনা।