বন্যজীবন সংরক্ষণ
বন্যজীবন সংরক্ষণ (Conservation of Wild life)
বন্যজীবনের সংজ্ঞা (Defination of Wildlife) :
গৃহপালিত প্রাণী ও কৃষিজ উদ্ভিদ ছাড়া বন্য পরিবেশে বসবাসকারী সকল স্তনপায়ী, পক্ষী, সরীসৃপ, উভচর, সন্ধিপদ, কম্বোজ প্রভৃতি শ্রেণির প্রাণী ও বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদকে একসাথে বন্যজীবন বলে।
বন্যজীবন হ্রাসের কারণ (Causes of Wildlife depletion) :
(1) অরণ্য নিধন : অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বনের গাছ কাটা।
(2) জনবিস্ফোরণ : জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে শহরের সীমা প্রসার, শহর পত্তন এবং চাষযোগ্য জমি বাড়ানোর ফলে বনভূমি ধ্বংস হয়ে বন্যজীবনের হ্রাস ঘটিয়েছে।
(3) শিকার : নিছক খেয়াল খুশিতে অথবা মাংসের লোভে শিকার হওয়ায় বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী আজ অবলুপ্তির মুখে।
(4) অর্থ উপার্জন : বিভিন্ন প্রাণীর মাংস, চামড়া, পালক, শিং, অস্থি প্রভৃতি খুব মূল্যবান। তাই অসাধু ব্যবসায়ীরা বন্যপ্রাণী নিধন করে বিদেশে ওইগুলি পাঠাতে চোরা শিকারিদের সহায়তা করে।
(5) বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া : বনভূমির বাস্তুতন্ত্রের কোনো একটি জীবের অবলুপ্তির ফলে অন্যটিও অবলুপ্ত হতে পারে। যেমন—বিভিন্ন তৃণভোজী প্রাণী শিকারের ফলে মাংসাশী প্রাণীদের খাদ্যাভাব ঘটায় বহু প্রাণী অবলুপ্ত হয়ে গেছে।
(6) পরিবেশ দূষণ : বায়ু, জল, মাটি বিভিন্নভাবে দূষিত হওয়ায় বন্যজীবনহানি বেড়ে চলেছে।
(7) জীবনোপযোগী ব্যবস্থার অভাব : উপযুক্ত বাসস্থান, খাদ্য, নিভৃতপ্রজনন স্থান, জল প্রভৃতির অভাব থাকায় এবং রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় বহু বন্য জীবন অবলুপ্ত হতে চলেছে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা (Necessity of Wildanimal Conservation):
- (1) বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন পুষ্টিস্তরের ভারসাম্য রক্ষা।
- (2) বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন প্রাণীর চামড়া, শিং, অস্থি প্রভৃতি বিদেশে পাঠানো।
- (3) পর্যটন ব্যাবসা-এর প্রসার ঘটিয়ে উপার্জন করা।
- (4) বৈজ্ঞানিক গবেষণা বিশেষত চিকিৎসা- বিজ্ঞানের গবেষণা করা।
- (5) বিরল প্রজাতিগুলিকে টিকিয়ে রাখা।
- (6) চিত্ত বিনোদন, গল্পগাথা, সাহিত্য, চিত্র, ভাস্কর্য্য প্রভৃতি সৃষ্টির অনুপ্রেরণা দান করা।
- (7) প্রয়োজনীয় দ্রব্য (মধু, মোম প্রভৃতি) সংগ্রহ করা।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উপায়– (Ways of Wildlife Conservation) :
(1)সরকারি প্রকল্প গঠন : বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প গঠন করা প্রয়োজন। এইজন্য ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় বনভূমি, অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত অরণ্য গঠন, পাখিরালয়, ব্যাঘ্রপ্রকল্প, গন্ডারপ্রকল্প, কুমিরপ্রকল্প, প্রভৃতির প্রতিষ্ঠা এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফাণ্ড (WWF) গঠন প্রভৃতি করা হয়েছে।
(2) আইন প্রণয়ন : আইন প্রণয়ন করে বন্যপ্রাণীর জীবন রক্ষার ব্যবস্থা করা। এই উদ্দেশ্যে ভারতে ভারতীয় বন আইন (1927), হস্তী ও গন্ডার সংরক্ষণ আইন (1932), বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ আইন (1972–74) প্রভৃতি আইন প্রণয়ন করে বন্য জীবজন্তু শিকার, কেনাবেচা প্রভৃতি বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
(3) বনভূমি গঠন : নতুন বনভূমি গঠন ও পুরানো বনভূমিকে রক্ষা করে বন্যপ্রাণীদের বাসস্থান সুনির্দিষ্ট করা।
(4) চোরাশিকারি দমন : উপযুক্ত পাহারার ব্যবস্থা করে চোরাশিকার বন্ধ করা।
(5) জলাশয় খনন : বন্যপ্রাণীর তৃষ্মা নিবারণের জন্য বনের মধ্যে জলাশয় না থাকলে জলাশয় খনন করা।
(6) শান্তিপূর্ণ বসবাসের ব্যবস্থা : বন্যপ্রাণীরা যাতে নিভৃতে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করতে পারে তার জন্য বনের পাশে কলকারখানা স্থাপন ও বনের মধ্যে মানুষের যথেচ্ছ বিচরণ বন্ধ করা।
(7) রোগনিরাময় : বন্যপ্রাণীদের রোগ সম্পর্কে অবহিত হয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
(৪) বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় : বন্যপ্রাণীদের খাদ্যশৃঙ্খল সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে যাতে সকল পুষ্টিস্তরের জীবের সমতা থাকে তার ব্যবস্থা করা।
(9) প্রাণী গণনা : বিভিন্ন প্রাণী গণনা করে তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
(10) গণচেতনা : সর্বোপরি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা।