বদ্ধ রক্তসংবহন তন্ত্র
মানুষের বদ্ধ রক্তসংবহনঃ
মানুষের দেহে রক্ত সর্বদা হৃৎপিন্ড, ধমনি, শিরা ও জালকের মধ্যে প্রবাহিত হয়। হৃৎপিন্ড থেকে রক্ত ধমনির মাধ্যমে রক্তজালকে যায়। সেখান থেকে শিরার মাধ্যমে হৃৎপিন্ডে ফিরে আসে। হৃৎপিন্ডের বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনির মাধ্যমে সারা দেহের রক্তজালকে পৌঁছোয় এবং সেখান থেকে মহাশিরার মাধ্যমে দক্ষিণ অলিন্দে রক্ত প্রবেশ করে।
দক্ষিণ অলিন্দ থেকে দক্ষিণ নিলয় হয়ে রক্ত ফুসফুসীয় ধমনির মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছোয় এবং ফুসফুসের রক্তজালক থেকে ফুসফুসীয় শিরার মাধ্যমে রক্ত বাম অলিন্দে আসে। রক্ত এরপর বাম অলিন্দ থেকে বাম নিলয়ে পৌঁছোয়। এইভাবে মানবদেহে রক্তসংবহন ঘটে।
মানবদেহে সংবহন প্রধানত দু-প্রকার- সিস্টেমিক ও পালমোনারি সংবহন।
নিম্নে এগুলি আরও কয়েক প্রকার সংবহন বর্ণনা করা হল।
সিস্টেমিক সংবহন (Systemic circulation):
হৃৎপিন্ডের বাম নিলয় থেকে O2 -যুক্ত রক্ত মহাধমনির মাধ্যমে সারাদেহের রক্তজালকে পৌঁছোনো এবং সেখান থেকে CO2 -যুক্ত রক্ত মহাশিরার মাধ্যমে হৃৎপিন্ডের ডান অলিন্দে প্রবেশকে সিস্টেমিক সংবহন বলে। সিস্টেমিক সংবহন বিভিন্ন প্রকারের হয়। যেমন-
- (i) সেরিব্রাল সংবহন (Cerebral circulation)- মস্তিষ্কে রক্ত সংবহন।
- (ii) রেনাল সংবহন (Renal circulation)-বৃক্কে রক্ত সংবহন প্রভৃতি।
পালমোনারি সংবহন (Pulmonary circulation):
হৃৎপিন্ডের দক্ষিণ নিলয় থেকে CO2 -যুক্তরক্ত ফুসফুসীয় ধমনির মাধ্যমে ফুসফুসের রক্তজালকে পৌঁছোনো এবং সেখান থেকে O2 -যুক্তরক্ত ফুসফুসীয় শিরার মাধ্যমে হৃৎপিন্ডের বাম অলিন্দে প্রবেশকে ফুসফুসীয় বা পালমোনারি সংবহন বলে।
হেপাটিক পোর্টাল সংবহন (Hepatic portal circulation) :
প্লীহা ও অন্ত্রের রক্তজালক থেকে উৎপন্ন শিরা (পোর্টাল শিরা) যকৃতে পৌঁছে পুনরায় রক্তজালকে (সাইনুসয়েড) পরিণত হয়; যার থেকে উৎপন্ন শিরা (হেপাটিক শিরা) নিম্নমহাশিরার সাথে যুক্ত। এইভাবে অন্ত্রে ও প্লীহার রক্তজালক থেকে পোর্টাল শিরার মাধ্যমে রক্ত যকৃতের রক্তজালক এবং সেখান থেকে হেপাটিক শিরার মাধ্যমে হৃৎপিন্ডের দিকে রক্তসংবহনকে হেপাটিক পোর্টাল সংবহন বলে।
করোনারি সংবহন (Coronary circulation):
মহাধমনির গোড়া থেকে উৎপন্ন দুটো করোনারি ধমনির মাধ্যমে রক্ত অলিন্দ ও নিলয়ের প্রাচীরে পৌঁছোনো এবং সেখান থেকে করোনারি শিরার মাধ্যমে করোনারি সাইনাস হয়ে দক্ষিণ অলিন্দে শিরার প্রবেশকে করোনারি সংবহন বলে।