লসিকা
লসিকা (Lymph)
সংজ্ঞাঃ
কলারস থেকে উৎপন্ন লসিকাবাহে অবস্থিত হালকা হরিদ্রাভ, স্বচ্ছ, ক্ষারধর্মী তরল যোগকলাকেই লসিকা বলে।
লসিকাসৃষ্টিঃ
রক্তজালকের ধমনিকা প্রান্তে রক্তরসের বেশিরভাগ অংশ (50% থেকে 75%) বেরিয়ে কলারস (tissue fluid) গঠন করে। এর বেশির ভাগ অংশ (90%) রক্তজালকের উপশিরা প্রান্ত দিয়ে রক্তে ফিরে যায় এবং বাকি অংশ (10%) অতি সূক্ষ্ম বদ্ধ লসিকাজালকের মধ্যে প্রবেশ করে। লসিকাগ্রন্থি থেকে উৎপন্ন শ্বেতকণিকা (লিম্ফোসাইট ও অল্প মনোসাইট) এর সাথে যুক্ত হয়ে লসিকা গঠন করে।
লসিকার উপাদানঃ
লসিকা কোশ লিম্ফোসাইট এবং কখনও স্বল্প মনোসাইট কোশের পরিমাণ প্রতি ঘনমিমি রক্তে 1000-2000।
লসিকারসঃ
এর বেশিরভাগ অংশ জল (95%) বাকি (5%) কঠিন পদার্থ, এর মধ্যে জৈব পদার্থ হল স্বল্প প্রোটিন (অ্যালবুমিন, ফাইব্রিনোজেন প্রভৃতি), গ্লুকোজ, ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন প্রভৃতি। অজৈব পদার্থ হল ক্লোরাইড, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস প্রভৃতি।
লসিকা সংবহনঃ
কলাস্থান থেকে লসিকাজালকের মাধ্যমে গৃহীত লসিকা অন্তর্মুখী লসিকাবাহের মাধ্যমে লসিকাগুটিতে পৌঁছোয়। লসিকা এরপর লসিকাগুটিতে পরিস্রুত হয়ে বহির্মুখী লসিকাবাহের মাধ্যমে বামদিকে থোরাসিক ডাক্ট এবং ডানদিকে লিম্ফ্যাটিক ডাক্ট-এতে পৌঁছোয়। এই নালিদুটি থেকে লসিকা ডান ও বাম সাবক্লেভিয়ান শিরা এবগ্ন ডান ও বাম অভ্যন্তরীণ জুগুলার শিরার মাধ্যমে রক্তে ফিরে যায়।
লসিকাগ্রন্থিঃ
লসিকাবাহের সাথে যুক্ত স্ফীত গোলাকার গ্রন্থিকে লসিকাগ্রন্থি বলে। প্লীহা (Spleen) সবচেয়ে বড়ো লসিকাগ্রন্থি, লসিকাগ্রন্থির ভিতর দিয়ে লসিকাপ্রবাহের সময় এটি ছাঁকনির কাজ করে এবং তখন জীবাণু ধ্বংস করে। এছাড়া লিম্ফোসাইট উৎপন্ন করাও লসিকাগ্রন্থির কাজ।
লসিকার গুরুত্ব (Importance of Lymph):
- (1) পরিবহনঃ লসিকা রক্ত থেকে O2 ও পুষ্টি পদার্থগুলিকে কলাকোশে এবং কলাকোশ থেকে CO2 ও রেচন পদার্থগুলিকে রক্তে পৌঁছে দেয়।
- (2) প্রতিরক্ষাঃ লসিকাতে উপস্থিত লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি উৎপাদনের দ্বারা এবং মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে জীবাণু ধ্বংস করে।
- (3) লিপিড শোষণঃ ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলাইতে অবস্থিত লসিকাবাহের অন্ত্র থেকে লিপিড শোষণে সহায়তা করে।
- (4) তরল নিষ্কাশনঃ কোনো স্থানের অতিরিক্ত কলারসকে রক্তে ফিরিয়ে দেয়।
রক্ত ও লসিকার পার্থক্যঃ
নং | রক্ত | লসিকা |
---|---|---|
১ | এটি প্রধানত লালবর্ণের এবং রক্তবাহের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। | এটি হালকা হরিদ্রাভ এবং লসিকাবাহের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। |
২ | এতে লোহিতকণিকা, পাঁচপ্রকার শ্বেতকণিকা ও অণুচক্রিকা থাকে। | এতে লিম্ফোসাইট এবং কখনও স্বল্প মনোসাইট থাকে। |
৩ | এতে প্লাজমা প্রোটিন ও ফসফরাস বেশি এবং গ্লুকোজ ও ক্লোরাইড কম থাকে। | এতে প্লাজমা প্রোটিন ও ফসফরাস কম এবং গ্লুকোজ ও ক্লোরাইড বেশি থাকে। |
৪ | মেরুদন্ডীদের রক্তের সাথে কলাকোশের সরাসরি যোগাযোগ নেই। | লসিকার সাথে কলাকোশের সরাসরি যোগাযোগ আছে। |