যৌনজনন
যৌনজনন (Sexual Reproduction)
সংজ্ঞা :
যে জনন পদ্ধতিতে দুটি গ্যামেটের মিলনে নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য সৃষ্টি হয়, তাকে যৌনজনন বলে।
প্রকারভেদ ও উদাহরণ (Types and Examples) :
প্রধানত দু-প্রকারে যৌনজনন দেখা যায়। যথা — সিনগ্যামি ও সংযুক্তি।
1. সিনগ্যামি (Sungamy) :
যেপ্রকার যৌনজননে জনন কোশাধার পরস্পর মিলিত না হয়ে জনন কোশাধারের বাইরে পুং ও স্ত্রী গ্যামেট স্থায়ীভাবে মিলিত হয়, তাকে সিনগ্যামি বলে।
এটি প্রধানত তিন প্রকারের হয়, যথা— আইসোগ্যামি, অ্যানাইসোগ্যামি ও উগ্যামি।
(a) আইসোগ্যামি (Isogamy) : এই প্রক্রিয়ায় একই আকৃতি ও প্রকৃতির গ্যামেটদ্বয় মিলিত হয়।
উদাঃ—ক্ল্যামাইডোমোনাস ডিবারিয়ানা নামক উদ্ভিদ, মনোসিস্টিস নামক প্রাণী ।
(b) অ্যানাইসোগ্যামি (Anisogamy) : এই প্রক্রিয়ায় ভিন্ন আকৃতির বা ভিন্ন প্রকৃতির গ্যামেটদ্বয় মিলিত হয়।
উদাঃ-ক্ল্যামাইডোমোনাস ব্রাউনি নামক উদ্ভিদ।
(c) উগ্যামি (Oogamy) : উগ্যামিকে একপ্রকার অ্যানাইসোগামি বলা যায়। এই প্রক্রিয়ায় ভিন্ন আকৃতির ও প্রকৃতির দুটি গ্যমেট মিলিত হয় যেখানে পুং-গ্যামেটটি ক্ষুদ্র ও সচল এবং স্ত্রীগ্যামেটটি বৃহৎ ও নিশ্চল।
উদাঃ—উডোগোনিয়াম নামক শৈবাল থেকে প্রায় সকল উন্নত উদ্ভিদ এবং প্রায় সকলপ্রকার প্রাণী।
2. সংশ্লেষ (Conjugation) :
যেপ্রকার যৌনজননে একই প্রজাতির দুটি জীব পাশাপাশি আসে এবং উভয়ের জননকোশাধার সংযুক্তি নালির দ্বারা যুক্ত হয়ে কোনো একটি জননকোশাধারের মধ্যে গ্যামেটদ্বয় মিলিত হয়, তাকে সংশ্লেষ বলে। উদাঃ—স্পাইরোগাইরা নামক উদ্ভিদ এবং প্যারামেসিয়াম নামক প্রাণী।
জাইগোস্পোর (Zygospore) : সংশ্লেষ ও আইসোগ্যামিতে একই আকৃতির গ্যামেটের মিলনে সৃষ্ট কোশ৷
জাইগোট (Zygote) : উগ্যামিতে ভিন্ন আকৃতির গ্যামেটের মিলনে সৃষ্ট কোশ।
নিষেক (Fertilization) : যে পদ্ধতিতে একটি পুং-গ্যামেট স্ত্রী-গ্যামেটের সাথে মিলিত হয়ে উভয়ের ক্রোমোজোমীয় উপাদান একত্রিত হয় এবং ডিপ্লয়েড কোশ উৎপন্ন হয়, তাকে নিষেক বলে।
বিভিন্নপ্রকার নিষেকের উদাহরণ :
(1) বহিঃনিষেক — ক্লামাইডোমোনাস, (উদ্ভিদ); মাছ, উভচর (প্রাণী)।
(2) অন্তঃনিষেক — উন্নত উদ্ভিদ; সরীসৃপ, পক্ষী, মানুষ।
(3) স্বনিষেক - আম, ধানসহ বেশিরভাগ উদ্ভিদ; ফিতাকৃমি।
(4)পরনিষেক — নারিকেল, তাল (উদ্ভিদ); ব্যাং, পাখি, মানুষসহ বেশিরভাগ প্রাণী।
গুরুত্ব ( Importance) :
A. যৌনজননের সুবিধাগুলি হল :
(1) বৈচিত্র্যেময় জীবগঠন : যৌনজননে মাতা ও পিতার বৈশিষ্ট্যগুলি অপতো একত্রিত হওয়ায় জীবদেহ বৈচিত্র্যময় হয়।
(2) প্রকরণ : মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় গ্যামেট গঠিত হওয়ায় অপত্যজীবে নতুন বৈশিষ্ট্য সংযোজিত হতে পারে।
(3) অভিযোজন : অপত্য জীবে অভিযোজন ক্ষমতা বেশি হয় ফলে অভিব্যক্তি ঘটতে পারে।
(4) উন্নত জীব : অপত্য জীব উন্নতমানের এবং সবল ও দীর্ঘায়ু হয়। কৃত্রিম উপায়ে নতুন ভ্যারাইটির জীব সৃষ্টি করা যায়।
(5) জনুক্রম : হ্যাপ্লয়েড দশা থেকে ডিপ্লয়েড দশার সৃষ্টি একমাত্র যৌনজননের মাধ্যমেই সম্ভব।
B. যৌনজননের অসুবিধাগুলি হল :
- (1) অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুটি জীবের প্রয়োজন হয় (একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী), তা ছাড়া এই প্রক্রিয়া ঘটতে পারে না।
- (2) এই প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ।
- (3) যৌনজননের সাফল্য সুনিশ্চিত না হওয়ায় অপত্য সৃষ্টির হার কম।