সংক্ষিপ্ত বিবরণ
সূচনা (Introduction)
জীবদেহের সজীব কোশগুলিতে সর্বদা উপচিতি ও অপচিতিমূলক বিপাক ক্রিয়া চলছে। এইসকল বিপাক ক্রিয়ায় (প্রধানত অপচিতি বিপাকে) উপজাত বস্তু (By product) রূপে এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন হয় যা দেহের প্রয়োজনে লাগে না উপরন্তু কোশের ক্ষতি করে। জীবদেহের এইসকল বিপাকজাত দূষিত পদার্থগুলিকে রেচনপদার্থ বলে। রেচনপদার্থগুলিকে দেহ থেকে বের করে দেওয়া খুবই প্রয়োজন। যে পদ্ধতিতে ওইসকল দূষিত পদার্থ নির্দিষ্ট অঙ্গের মাধ্যমে দেহ থেকে বেরিয়ে গিয়ে (প্রাণীদের ক্ষেত্রে) অথবা দেহের নির্দিষ্ট স্থানে জমা হয়ে উদ্ভিদের ক্ষেত্রে দেহকে সুস্থ রাখে তাকেই রেচন বলে।
রেচনের প্রধান বৈশিষ্ট্য (Main features of Excretion)
1)উদ্ভিদের নির্দিষ্ট রেচন অঙ্গ না থাকলেও প্রাণীর রেচন অঙ্গ আকছে, যার মাধ্যমে রেচনপদার্থ দেহ থেকে বেরিয়ে যায়।
2)উদ্ভিদের রেচনপদার্থ দেহের নির্দিষ্ট স্থানে জমা থাকে অথবা কোনো উদ্ভিদ অঙ্গ (ফল, পাতা) মোচনের মাধ্যমে রেচনপদার্থ ত্যাগ করে।
3)রেচন একটি অপচিতি বিপাক
4)রেচনপদার্থ দেহ থেকে অপসারিত হলে দেহ সুস্থ থাকে।
সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা (definition and Explanation)
1)যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় জীবদেহের বিপাকে উৎপন্ন অপ্রয়োজনীয় দূষিত পদার্থগুলি অদ্রাব্য কেলাস বা কোলয়েড রূপে নির্দিষ্ট কলাকোশে জমা হয় (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে) অথবা নির্দিষ্ট অঙ্গের মাধ্যমে দেহ থেকে বের হয়ে যায়, তাকে রেচন বলে।
2)জীবদেহে শর্করা বিপাকের ফলে CO2 , গঁদ প্রভৃতি; প্রোটিন বিপাকের ফলে অ্যামোনিয়া, ইউরিয়া, উপক্ষার প্রভৃতি এবং লিপিড বিপাকের ফলে কিটোনবডি, বান তৈল প্রভৃতি উৎপন্ন হয়। এগুলি দেহের অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকারক। এগুলিকে উৎপন্ন কোশ থেকে অপসারিত না করলে কোশের মৃত্যুও ঘটতে পারে। রেচন-পদার্থগুলি উদ্ভিদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্থানে জমা হয় এবং অঙ্গমোচনের মাধ্যমে কিছুটা দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। প্রাণীদের ক্ষেত্রে রেচনপদার্থগুলি রেচন অঙ্গের মাধ্যমে দেহতরল থেকে আলাদা হয়ে রেচনতন্ত্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে নির্গত হয়।
রেচনের প্রয়োজনীয়তা (Importance of Excretion)
1)দেহ সুস্থ রাখাঃ রেচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিকারক পদার্থগুলি অপসারণের ফলে দেহ সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে।
2)কলাকোশের উপাদানসমূহের সমতা রক্ষাঃ রেচনের মাধ্যমে দেহের কলাকোশে জলসহ বিভিন্ন জৈব ও অজৈব উপাদানের পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকে।
3)প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাঃ প্রকৃতি থেকে জীব যেসকল উপাদান জীবনধারনের জন্য গ্রহণ করে সেগুলির বেশিরভাগ (প্রধানত প্রানীদের) রেচনের মাধ্যমে জীবদেহ থেকে প্রকৃতিতে ফিরে আসে।
4)মানব কল্যাণঃ উদ্ভিদের বিভিন্ন রেচনপদার্থ-যেমন গঁদ, রজন, ট্যানিন, উপক্ষার প্রভৃতি মানুষের ওষুধ প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন কাজে লাগে।
5)এছাড়া দেহে অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা এবং দেহতাপ নিয়ন্ত্রণেও রেচনের ভূমিকা রয়েছে।
বর্জ্যপদার্থ (Waste Product): দেহের বিপাক অথবা পরিপাকে উৎপন্ন সকল অপ্রয়োজনীয় পদার্থগুলিকে একসাথে বর্জ্যপদার্থ বলে। উদাঃ-সকল রেচন পদার্থ ও মল।
রেচনপদার্থ (Excretory Product): দেহের বিপাকে উৎপন্ন ক্ষতিকর অপ্রয়োজনীয় পদার্থকে রেচনপদার্থ বলে। উদাঃ-
N2 -যুক্ত রেচনপদার্থঃ
- (i) উদ্ভিদের সকল উপক্ষার
- (ii) প্রাণীর ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া, ক্রিয়েটিন প্রভৃতি।
N2 -বিহীন রেচনপদার্থঃ
- (i) উদ্ভিদের গঁদ, রজন, ধাতব কেলাস প্রভৃতি
- (ii) প্রাণীর কিটোনবডি, CO2 প্রভৃতি।
বর্জন (Egestion): বিপাক ছাড়া অন্যভাবে (পরিপাক) তৈরি ক্ষতিকারক পদার্থ বেরিয়ে যাওয়ার পদ্ধতিকে বর্জন বলে।
ক্ষরণ (Secretion): বিপাকে উৎপন্ন প্রয়োজনীয় পদার্থের গ্রন্থি থেকে বের হওয়াকে ক্ষরণ বলে।