জেনে রাখা ভালো
1. সালোকসংশ্লেষকে জারণ-বিজারন প্রক্রিয়া বলে কেন ?
সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় জল জারিত হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন ও অক্সিজেন উৎপন্ন হয় এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড বিজারিত হয়ে গ্লুকোজ উৎপন্ন হয় বলে একে জারণ-বিজারন প্রক্রিয়া বলে।
2. সালোকসংশ্লেষকে উপচিতি বিপাক বলে কেন ?
যে প্রক্রিয়ায় পরিবেশের কার্বন ডাইঅক্সাইডের কার্বন বা অঙ্গার প্রোটোপ্লাজমীর পদার্থে (যেমন গ্লুকোজ ) পরিণত হয় তাকে অঙ্গার আত্তীকরণ বলে। সালোকসংশ্লেষের সময় উক্ত প্রক্রিয়াটি ঘটে বলে সালোকসংশ্লেষকে অঙ্গার আত্তীকরণ বলে।
3. সালোকসংশ্লেষকে উপচিতি বিপাক বলে কেন ?
সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় H2O ও CO2 —এই সরল যৌগ থেকে গ্লুকোজ (C6H12O 6) এই জটিল যৌগ তৈরি হয় এবং এর ফলে উদ্ভিদের শুস্ক ওজন বেড়ে যায়, তাই সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াকে উপচিতি বিপাক বলে।
4. অক্সিজেনিক ও অ্যানক্সিজেনিক সালোকসংশ্লেষের উদাহরণ কী ?
অক্সিজেনিক—সবুজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ (O2 উৎপন্ন হয় ) । অ্যানক্সিজেনিক— ব্যাকটেরিয়ার সালোকসংশ্লেষ (O2 উৎপন্ন হয় না)।
5. সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন গ্লুকোজের মৌলগুলির উৎস কী কী ?
সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন গ্লুকোজের মধ্যে অবস্থিত হাইড্রোজেনের (H) উৎস জল এবং কার্বন (C) ও অক্সিজেনের (O) উৎস কার্বন ডাইঅক্সাইড।
6. সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন অক্সিজেনের উৎস কী ?
সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন অক্সিজেনের উৎস জল।
7. মূলে সালোকসংশ্লেষ হয় না কেন ?
মূলে ক্লোরোপ্লাস্টিড অনুপস্থিত এবং মাটির নীচে থাকায় আলো পৌঁছোয় না তাই মূলে সালোকসংশ্লেষ হয় না।
8. রাত্রে সালোকসংশ্লেষ হয় না কেন ?
রাত্রে আলোকের অনুপস্থিতির জন্য সালোকসংশ্লেষে প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান না থাকায় রাত্রে সালোকসংশ্লেষ হয় না।
9 সালোকসংশ্লেষের কয়েকটি ইলেকট্রন বাহকের নাম লেখো।
ইলেকট্রন বাহকের উদাহরণ ফেরিডক্সিন (Fd), প্লাস্টোকুইনোন (PQ) প্রভৃতি।
10. C3 ও C4 উদ্ভিদ বলতে কী বোঝো ?
বেশিরভাগ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষের অন্ধকারদশায় স্থায়ী যৌগ 3 কার্বন ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড । প্রথমোক্ত উদ্ভিদকে C3 উদ্ভিদ (যেমন—ধান) এবং শেষোক্ত উদ্ভিদকে C4 উদ্ভিদ (যেমন—আখ) বলে।
11. ক্লোরোসিস (Chlorosis) কী ?
আলোর অনুপস্থিতে বা কোনো মৌলের (MG, Fe) অভাবে উদ্ভিদের ক্লোরোফিল বিনস্ট হয়ে (ক্যারোটিন ও জ্যান্থোফিল নস্ট হয় না ) সবুজ অংশ হলদে হয়ে যায়, একে ক্লোরোসিস বলে।
12. সালোকসংশ্লেষীয় কার্য বর্ণালি (Action Spectrum) কাকে বলে ?
সূর্যালোকের বর্নালির লাল (610—700 nm) ও নীল (400-510 nm) অংশেই সালোকসংশ্লেষ ভালো হয়, তাই বর্নালির এই অংশকে সালোকসংশ্লেষীয় কার্য বর্নালি বলে।
13. সালোকসংশ্লেষ প্রতিরোধকারী রাসায়নিক পদার্থের নাম লেখো।
সালোকসংশ্লেষ প্রতিরোধকারী রাসায়নিক পদার্থ হল ক্লোরোফর্ম, ইথার, হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
14. সালোকসংশ্লেষে যে O2 উৎপন্ন হয় তার উৎস যে জল তা কীভাবে প্রমাণ করবে ?
অক্সিজেনের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ O18 দ্বারা এর প্রমান করা যায় । জলের অক্সিজেনকে তেজস্ক্রিয় করে (H2O18) যদি উদ্ভিদকে সরবরাহ করা হয় এবং সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন অক্সিজেন যদি তেজস্ক্রিয় (O218) হয়, তাহলে প্রমাণিত হয় যে সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন O2 –এর উৎস জল।
6CO2 + 12H2O18 ---> C6H12O6 + 6H2O + 60218
বিজ্ঞানী রুবেন ও ক্যামেন (1941) এই পরীক্ষাটি প্রমাণ করেন।
15. ‘Z’ প্রকল্প (z -scheme) কী ?
বিজ্ঞানী হিল ও বেন্ডাল -এর মতে সালোকসংশ্লেষের আলোকদশার বিক্রিয়াগুলি দুটি রঙ্গকতন্ত্রের মাধ্যমে ইংরেজি ‘z’ অক্ষরের মতো যুক্ত থাকে । একেই ‘z’ প্রকল্প বলে।
16. C3 ও C৪ চক্র কী ?
কেলভিন চক্রে প্রথম স্থায়ী যৌগ তিন কার্বন ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড, তাই এই চক্রকে C3 চক্র বলে । বিজ্ঞানী হ্যাচ এবং স্ল্যাক (Hatch and Slack, 1966) প্রমান করেন কিছু উদ্ভিদের (যেমন আখ) কেলভিন চক্রের পূর্বে আর একটি রাসায়নিক চক্র ঘটে এবং প্রথম স্থায়ী যোগ হিসাবে চার কার্বন অক্রালো অ্যাসিটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয় । এই চক্রকে C4 চক্র বা হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্র বলে।
17. ভেলামেন কী ?
অর্কিডজাতীয় পরাশ্রয়ী উদ্ভিদের বায়বীয় মূলের বাইরের দিকে স্পঞ্জি সবুজ আবরণ, যা জলীয় বাষ্প শোষণ করতে এবং কিছুটা সালোকসংশ্লেষ করতে পারে তাকে ভেলামেন বলে।
18. রাসায়নিক সংশ্লেষ ( Chemosynthesis) কী ?
যে প্রক্রিয়ায় কিছু ব্যাকটেরিয়া আলোকশক্তি ছাড়াই রাসায়নিক পদার্থের ভেঙে শক্তি সংগ্রহ করে খাদ্য তৈরি করে, সে প্রক্রিয়াকে রাসায়নিক সংশ্লেষ বলে । উদাঃ – বেগিয়াটোয়া, লেপ্ট্রোথ্রিক্স প্রভৃতি।
19. P.Q. (Photosynthetic Quotient) কী ?
সালোকসংশ্লেষে বর্জিত O2 এবং গৃহীত CO2 -এর অনুপাতকে ফটোসিন্থেটিক কোসেন্ট সালোকসংশ্লেষে বর্জিত O2 বা P.Q. বলে। PQ = সালোকসংশ্লেষে গৃহীত CO2
20. ক্ষয়পূরণ বিন্দু ( Compensation Point ) কী ?
দিনের বেলায় যে সময়ে নির্দিস্ট আলোকের তীব্রতায় ও নির্দিস্ট ] CO2 -এর ঘনত্বে উদ্ভিদের শ্বসনে উৎপন্ন CO2 -এর সমপরিমাণ CO2 সালোকসংশ্লেষে প্রয়োজন হয়, তাকে ক্ষয় বিন্দু বলে।
21. সালোকশ্বসন (Photorespiration) কী ?
তীব্র আলোকে ও বেশি O2 -এর ঘনত্বে ক্লোরোফিলযুক্ত কোশে জৈব যৌগ ( RuBP) জারিত হওয়ার পদ্ধতিকে সালোকশ্বসন বা ফটোরেস্পিরেশন বলে।
22. ক্লোরেল্লা নামক শৈবাল মহাকাশযানে ব্যবহৃত হয় কেন ?
ক্লোরেল্লা সবচেয়ে দ্রুত সালোকসংশ্লেষ ঘটাতে পারে এবং মহাকাশযানের CO2 অপসারিত করে ও O2 -এর জোগান দেয় তাই ক্লোরেল্লা মহাকাশযানে ব্যবহৃত হয়।