মানুষের শ্বাসকার্য প্রক্রিয়া
মানুষের শ্বাসকার্য প্রক্রিয়া ( Mechanism of breathing in man )
মানুষের শ্বাসকার্য প্রক্রিয়া বা শ্বসনকৌশলের প্রধান দুটি পর্যায়–
(1) প্রশ্বাস বা শ্বাস গ্রহণ (Inspiration) এবং
(2) নিশ্বাস বা শ্বাসত্যাগ ( Expiration)।
এই দুই পর্যায়ের মধ্যবর্তী সময়ে গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে।
1. প্রশ্বাস (Inspiration) : বায়ুমণ্ডল থেক বায়ুপ্রবেশ করাকে প্রশ্বাস বলে ।
(i) বক্ষপিঞ্জরের সাথে যুক্ত বহিঃআন্তর পঞ্জরাস্থি পেশির ( Extarnal intercostal muscle) সংকোচন হয় এবং বক্ষপিঞ্জর কিছুটা উপরের দিকে ও সামনের দিকে এগিয়ে যায়, ফলে বক্ষগহ্বরের আয়তন থাকে ।
(ii) মধ্যচ্ছদা ( Diaphragm) : সংকুচিত হওয়ায় নীচের দিকে নেমে যায়, ফলে বক্ষগহ্বরের আয়তন বাড়ে ।
(iii) বক্ষগহ্বরে আয়তন বাড়ায় প্লুরার ভেতরের চাপ 10mm Hg পর্যন্ত কমে যায় এবং ফুসফুসের ভিতরের চাপ 2 mm Hg কমে যায় ।
(iv) ফলে বায়ুমণ্ডলের বায়ু বহিঃনাসারন্ধ্র, নাসাপথ, অন্তঃনাসারন্ধ্র, নাসা গলবিল গ্লটিস, শ্বাসনালি, ব্রঙ্কাস ও ব্রঙ্কিওল হয়ে ফুসফুসের বায়ুথলির মধ্যে প্রবেশ করে ।
2. গ্যাসীয় বিনিয়ম (Interchange of gases) : ফুসফুসের বায়ুথলির ভিতরের বায়ুর O2 রক্তজালকের রক্তে এবং রক্তের CO2 বায়ুথলির বায়ুতে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় চলে যায়।
3. নিশ্বাস (Inspiration) : ফুসফুস থেকে বায়ুমণ্ডলে বায়ু বের হওয়াকে নিশ্বাস বলে।
(i) অন্তঃআন্তর পঞ্জরাস্থি পেশি (Internal intercostal muscle) সংকোচনে ফলে এবং বহিঃআন্তর পঞ্জরাস্থি পেশির প্রসারণের ফলে বক্ষপিঞ্জর কিছুটা নেমে আসে এবং ভিতরের দিকে ঢুকে যায়।
(ii) মধ্যচ্ছদা প্রসারণের ফলে উপরের দিকে উঠে যায়। এই কারণে বক্ষগহ্বরের আয়তন কমে যায় এবং প্লুরা ও ফুসফুসের ভিতরের বায়ুর চাপ বেড়ে যায়।
(iii) ফলে ফুসফুসের থেকে CO2 -যুক্ত বায়ু উলটো পথে ফুসফুসের বায়ুথলি থেকে ব্রঙ্কিওল, ব্রঙ্কাস, ট্রাকিয়া, গ্লটিস, গলবিল, অন্তঃনাসারন্ধ্র, নাসাপথ, বহিঃনাসারন্ধ্র দিয়ে বেরিয়ে যায়।
উদ্ভিদ ও প্রানীর শ্বসনের পার্থক্য
নং | উদ্ভিদের শ্বসন | প্রানীর শ্বসন |
---|---|---|
১ | উদ্ভিদের কোনো নির্দিস্ট শ্বাস-অঙ্গ নেই। | প্রানীর নির্দিস্ট শ্বাস-অঙ্গ থাকে। যেমন—- ফুসফুস, ফুলকা ইত্যাদি । |
২ | উদ্ভিদের নিশ্বাস-প্রশ্বাস বলে কিছু হয় না; ব্যাপন প্রক্রিয়ায় O2 ও CO2 ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বাহিত হয়। | প্রানীর নিশ্বাস-প্রশ্বাসের দ্বারা O2 ওCO2 এর বিনিময় হয়। |
৩ | উদ্ভিদের দেহে O2 ও CO2 ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বাহিত হয়। | প্রানীর দেহে O2 ও CO2 রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে বাহিত হয়। |
৪ | শ্বসনের হার কম এবং দিনের বেলায় O2 গ্রহন ও CO2 বর্জন খুব কম হয়। | শ্বসনের হার খুব বেশি এবং দিবারাত্র সমান। |
শ্বাসবায়ুতে O2 ও CO2 -এর পরিমাণ
গ্যাস | প্রশ্বাস বায়ু | নিশ্বাস বায়ু | বায়ুথলির বায়ু |
---|---|---|---|
অক্সিজেন | 20.60% | 16.3% | 13.6% |
কার্বন ডাইঅক্সাইড | 0.03% | 4% | 5.3% |