ভাইরাস
ভাইরাস (Virus)
সূচনা (Introduction)
পৃথিবীতে এমন কিছু অতি ক্ষুদ্র ও সরল জীব আছে যাদের দেহ কোশ দ্বারা গঠিত নয়। দেহে কেবল নিউক্লিক অ্যাসিড ও তাকে ঘিরে প্রোটিন থাকে। এরা কেবল সজীব কোশের মধ্যে বংশবিস্তার করতে পারে। এই ক্ষুদ্র জীবগুলিকে ভাইরাস (Virus) বলে। ভাইরাস কথার ল্যাটিন অর্থ বিষ (Poison)। বিজ্ঞানী আইভানোভস্কি (Dmitry 1. Ivanovsky, 1892) বলেন—তামাকগাছের মোজাইক রোগের কারণ একপ্রকার সংক্রামক তরল। বাইজেরিঙ্ক (M.W. Beigerinck, 1898) প্রথম ভাইরাস-এর নামকরণ করেন। পরবর্তীকালে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের আবিষ্কার হওয়ার ফলে ভাইরাস সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা সম্ভবপর হয়েছে।
ভাইরাসের সংজ্ঞা (Definition of Virus)
একরকমের নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA অথবা RNA) এবং প্রোটিন দ্বারা গঠিত অকোশীয়, কেবলমাত্র সজীব কোশের মধ্যে বংশবিস্তারে সক্ষম, কিন্তু অন্যত্র জড়ের মতো বৈশিষ্ট্যযুক্ত অতিসূক্ষ্ম জীবকে ভাইরাস বলে।
ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য
- (1) কোশপর্দা ও সাইটোপ্লাজম না থাকায় এরা অকোশীয়।
- (2) এরা কেবলমাত্র নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA অথবা RNA) এবং প্রোটিন আবরণ দ্বারা গঠিত।
- (3) অতিসূক্ষ্ম বলে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না।
- (4) কেবল সজীব কোশের মধ্যে প্রতিলিপি গঠনের (Replication) মাধ্যমে বংশবিস্তার করে।
- (5) দেহে কোন বিপাকক্রিয়া (শ্বসন, পুষ্টি, রেচন প্রভৃতি) হয় না।
- (6) দেহে শক্তি উৎপন্ন বা জমা হয় না।
- (7) বহিঃস্থ উদ্দীপকের দ্বারা উত্তেজনায় সাড়া দিতে পারে না।
- (৪) চলন ক্ষমতা নেই।
- (9) ভাইরাস গোলাকার, দণ্ডাকার, ঘনকাকারক বা ব্যঙাচির মতো হয়।
- (10) বহিঃকোশীয় অবস্থায় জড়ের মতো এবং অন্তঃকোশীয় অবস্থায় জীবের মতো আচরণ করে।
ভাইরাসকে জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী বস্তু বলা হয় কেন?
ভাইরাসের জীবের বৈশিষ্ট্য বর্তমান। যেমন- (i) প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড | (DNA বা RNA) দ্বারা গঠিত। (ii) নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে। (iii) সম্পূর্ণ | পরজীবী। (iv) পরিব্যক্তি হয়। (v) পোষককোশের মধ্যে বংশবিস্তার করতে পারে।। | আবার ভাইরাসের জড়ের বৈশিষ্ট্যও বর্তমান, যেমন- (i) উত্তেজনায় সাড়া দিতে। পারে না। (ii) চলন হয় না। (iii) বিপাকক্রিয়া হয় না। (iv) কেলাসিত করা যায়। (v) সাইটোপ্লাজম ও কোশপর্দা নেই এবং (vi) পোষককোশের বাইরে বংশবিস্তারে ক্ষম। এইজন্য ভাইরাসকে জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের বস্তু বলা হয়।ভাইরাসকে অকোশীয় বলা হয় কেন?
ভাইরাসের কোশপর্দা, নিউক্লিয়াস, সাইটোপ্লাজম, কোশ-অঙ্গাণু প্রভৃতি কোশীয় উপাদান কিছুই না থাকায় ভাইরাসকে অকোশীয় জীব বলা হয়।
ভিরিয়ন কী?
সংক্রমণযোগ্য সম্পূর্ণ ভাইরাসকে (প্রোটিন আবরণ ও নিউক্লিক অ্যাসিড দ্বারা গঠিত) ভিরিয়ন বলে।
ভাইরয়েড কী?
কেবল নগ্ন নিউক্লিক অ্যাসিড (RNA) দ্বারা গঠিত ভাইরাসকে ভাইরয়েড বলে। যেমন - PSTV (Potato Spindle Tuber Virus)
ক্যাপসিড ও ক্যাপসোমিয়ার কী?
ভাইরাসের প্রোটিন আবরণকে ক্যাপসিড এবং তার একককে ক্যাপসোমিয়ার বলে।