রক্তের শ্রেণিবিভাগ
রক্তের শ্রেণিবিভাগ (Blood Group)
এক ব্যক্তির রক্ত অন্য ব্যক্তির দেহে সঞ্চারণের (Blood transfusion) সময় বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে বিজ্ঞানীরা রক্তে বিভিন্ন অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডির উপস্থিতি লক্ষ করেন এবং রক্তের বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ করেন, যেমন- ABO, Rh, MN প্রভৃতি। তবে সঞ্চারণের ক্ষেত্রে কেবল ABO ও Rh বিভাগ বিবেচ্য।
ABO শ্রেণিবিভাগঃ
লোহিতকণিকার গাত্রে উপস্থিত অ্যান্টিজেন বা অ্যাগ্লুটিনোজেন (A ও B) এবং রক্তরসে উপস্থিত অ্যান্টিবডি বা অ্যাগ্লুটিনিন ( ও )-এর উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার (Karl Landsteiner, 1901) রক্তের চারটি বিভাগ (A, B, AB এবং O) নির্ধারণ করেন, একেই ABO পদ্ধতি বলা হয়।
রক্তের চারটি বিভাগে কীপ্রকার অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি আছে তার ওপর ভিত্তি করেই নিরাপদ রক্তসঞ্চারণ সম্ভব। রক্তসঞ্চারণের সময় মনে রাখতে হবে গ্রহীতার অ্যান্টিবডি এবং দাতার অ্যান্টিজেন যেন একরকম না হয়। এরকম হলে লোহিতকণিকাগুলির পিন্ডভবন বা অ্যাগ্লুটিনেশন (agglutination) ঘটে।
কোন বিভাগের রক্তে কীপ্রকার অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি আছে এবং কাকে কোনো ব্যক্তি রক্তদান করতে পারে বা কার রক্ত গ্রহণ করতে পারে তা নিম্নে ছকের মাধ্যমে দেওয়া হল-
রক্তের বিভাগ | অ্যান্টিজেন বা অ্যাগ্লুটিনোজেন | অ্যান্টিবডি বা অ্যাগ্লুটিনিন | কোন্ গ্রুপের রক্ত গ্রহণ করতে পারে | কোন্ গ্রুপের রক্ত যুক্ত ব্যাক্তিকে দান করতে পারে। |
---|---|---|---|---|
A | A | (anti-B) | A,O | A, AB |
B | B | (anti-A) | B, O | B, AB |
AB | A এবং B | নেই | A, B, AB, O | AB |
O | নেই | (anti-A) এবং (anti-B) | O | A, B, AB, O |
‘O’ শ্রেণির রক্তে কোনো অ্যান্টিজেন না থাকায় সকলকে এই রক্ত দান করা যায়। তাই O শ্রেণির রক্তযুক্ত ব্যক্তিকে সার্বিক দাতা (Universal Donor) বলে। অপরদিকে AB-শ্রেণির রক্তে কোনো অ্যান্টিবডি না থাকায় AB-শ্রেণির রক্তযুক্ত ব্যক্তি সকল রক্ত গ্রহণ করতে পারে; তাই AB-শ্রেণির রক্তযুক্ত ব্যক্তিকে সার্বিক গ্রহীতা (Universal recipients) বলে।
Rh-শ্রেণিবিভাগঃ
ল্যান্ডস্টেইনার ও উইনার (Landsteiner and Winer, 1940) মানুষের লোহিতকণিকার গায়ে একধরনের অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির কথা বলেন যেটি প্রথম ‘রেসাস’ (Resus) বানরের দেহে পেয়েছিলেন; ওই অ্যান্টিজেনকে Rh ফ্যাক্টর বলে। যেসকল ব্যক্তির রক্তে Rh ফ্যাক্টর উপস্থিত তাদের রক্তকে Rh পজিটিভ (Rh+) বলে। যাদের রক্তে Rh ফ্যাক্টর নেই তাদের রক্তকে Rh নেগেটিভ (Rh-)বলে।
Rh+ রক্ত যদি Rh- রক্তযুক্ত ব্যক্তিকে দেওয়া হয় তার প্রথমবার কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু তার দেহে Anti-Rh পদার্থ বা অ্যান্টিবডি তৈরি হয় এবং দ্বিতীয়বার Rh+ রক্ত দিলে লোহিতকণিকা পুঞ্জীভূত হয়ে যায়। রক্তদানের পূর্বে তাই Rh- ফ্যাক্টরের অস্তিত্ব জানা প্রয়োজন।
সাদা চামড়ার মানুষদের প্রায় 85% ব্যক্তির Rh+ এবং কালো চামড়ার মানুষদের প্রায় 91% ব্যক্তির Rh+ রক্ত থাকে।
রক্তের শ্রেণিবিভাগের গুরুত্ব (Importance of Blood group):
(A) রক্তদানঃ দুর্ঘটনাজনিত কারণে রক্তপাত ঘটলে বা শল্যচিকিৎসার ক্ষেত্রে রক্তদানের প্রয়োজন হলে দাতা ও গ্রহীতার রক্তের বিভাগ অবশ্যই জানা প্রয়োজন।
(B) রক্তের বিভাগ বিশ্লেষণঃ রক্তের বিভাগ বিশ্লেষণের দ্বারা-(1) রোগ নির্ণয় (2) পিতৃত্ব নির্ণয় (3) দোষী-নির্দোষ নির্ণয় (4) সম্পর্ক নির্ণয় (5) জাতিতত্ত্ব ও নৃতত্ত্ব বিষয়ক গবেষণা ইত্যাদি করা যায়।