বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহ
বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহ (Energy Flow in Ecosystem )
সংজ্ঞা (Definition) :
যে প্রক্রিয়ায় বাস্তুতন্ত্রে উৎপাদক কর্তৃক সৌরশক্তি গৃহীত হয়ে বিভিন্ন খাদকের দেহে স্থানান্তরিত হয় তাকে শক্তিপ্রবাহ বলে।
বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহের নীতি :
- 1. সকল শক্তির মূল উৎস সূর্যালোক। উৎপাদকরা প্রথম এটি গ্রহণ করে।
- 2. শক্তির আবর্তন হয় না। অর্থাৎ পুনরায় সূর্যে ফিরে যায় না।
- 3. শক্তিপ্রবাহ সর্বদা একমুখী। শক্তি পূর্বের পুষ্টিস্তরে ফিরে আসে না।
- 4. প্রবাহিত শক্তির সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই কেবল রূপান্তর ঘটে। এটি তাপগতিবিদ্যার ermodynamics) প্রথম সূত্র অনুসরণ করে।
- 5. প্রতি পুষ্টিস্তরে শক্তি স্থানান্তরণের সময় কিছু শক্তির হ্রাস ঘটে। এটি গতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র অনুসরণ করে।
- 6. লিন্ডেম্যান (Lindemam, 1942) বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহের ‘দশ শতাংশ সূত্র’ (Ten Percent Law) প্রবর্তন করেন। তাঁর মতে প্রতিটি পুষ্টিস্তরে গৃহীত শক্তির 10 অংশ দেহগঠনে ব্যবহৃত হয়। যেমন—একটি হরিণ যদি 100 kg উৎপাদক গ্রহণ করে তাহলে 10 kg তার দেহ গঠনে লাগে।
বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহের পর্যায় :
তিনটি পর্যায়ে বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহ ঘটে।
1. শক্তি অর্জন (Acquisition of energy) : বাস্তুতন্ত্রে শক্তির মূল উৎস হল সূর্যালোক। উৎপাদক (সবুজ উদ্ভিদ) সালোসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় ওই সৌরশক্তিকে শোষণ করে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তররিত করে, যেটি খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তি রূপে জমা হয়। সূর্য থেকে পৃথিবীতে যে আলোকশক্তি পড়ে তার মাত্র 0.1% উৎপাদকেরা খাদ্যের মধ্যে আবধ্য করতে পারে।
2. শক্তি ব্যবহার (Use of energy) : উৎপাদক তার সংশ্লেষিত খাদ্যে যে পরিমান শক্তি আবদ্ধ করে তার কিছু অংশ শ্বসন ও রেচন প্রক্রিয়ায় তাপশক্তিরূপে পরিবেশে পরিত্যক্ত হয়, এবং কিছু অব্যবহৃত শক্তি দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। অংশটি আত্তীকরণ শক্তিরূপে জমা থাকে। ওই অবশিষ্ট আত্তীকরণ শক্তিকে প্রত্যক্ষ বা পরক্ষোভাবে প্রাণীরা খাদ্যরূপে গ্রহণ করে তাদের দেহে ব্যবহার করে।
3.শক্তি স্থানান্তকরণ (Transferance of energy) : উৎপাদক থেকে প্রাথমিক খাদক এবং পর্যায়ক্রমে গৌণ ও প্রগৌণ খাদকের দেহে শক্তির স্থানান্তকরণ ঘটে। প্রতি স্তরেই শক্তি স্থানান্তকরণের সময় কিছু শক্তির হ্রাস ঘটে।