আলোক দশা
সালোকসংশ্লেষের প্রথম যে পর্যায়টি আলোকের উপস্থিতিতে ক্লোরোপ্লাস্টিডের গ্রানার মধ্যে, তাকে আলোকদশা বলে।
এই দশার প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি হল সূর্যালোক, জল, ক্লোরোফিল, NADP+ ADP ও iP । এই দশায় উৎপন্ন হয় NADPH + H+, ATP এবং O2।
আলোকদশায় বিভিন্ন ঘটনাগুলি নিম্নরূপ :
1. আলোক শোষণ এবং ক্লোরোফিলের সক্রিয়তা :
সূর্যালোকের ফোটন কণা শোষণ করে ক্লোরোফিল উত্তেজিত বা সক্রিয় হয় এবং উচ্চশক্তিসম্পন্ন ইলেকট্রন নির্গত করে জারিত হয়।
ক্লোরোফিল দুটি রঙ্গকতন্ত্রে অবস্থান করে, PSI ও PSII।
PSI (Photosystem–I or Pigment System–I) :
এতে প্রায় 300 রঙ্গকতন্ত্রে এগুলি হল ক্লোরফিল–a, ক্যারোটিন, জ্যান্থোফিল প্রভৃতি; যার বিক্রিয়াকেন্দ্রে (Reaction Centre) একটি সক্রিয় ক্লোরফিল–a থকে থাকে P–700 বলে।
PSII (Photosystem–II or Pigment System–II)–
এতে প্রায় 100 রঙ্গক থাকে। এগুলি হল ক্লোরোফিল–b, ক্যারোটিন, জ্যান্থোফিল, ক্লোরফিল–a প্রভৃতি; যার সক্রিয় ক্লোরোফিল–a- কে p-680 বলে।
সলোকসংশ্লেষে লাল (650-760 nm) এবং নীল (430-470 nm) আলোক সবচেয়ে কার্যকর।
2. ফটোলাইসিস (Photolysis) এবং অক্সিজেন উৎপাদন :
সক্রিয় জারিত ক্লোরোফিল জল ভেঙ্গে ইলেকট্রন (e) গ্রহণ করে। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে সক্রিয় ক্লোরোফিল কর্তৃক জলের ভাঙনকে (H+, C- ও O2 -তে ) ফটোলাইসিস বলে। জল ভেঙে যে অক্সিজেন উৎপন্ন হয় তা গ্যাসরূপে বেরিয়ে যায়।
সূর্যালোক2H2O ----> 4H++4e +O2
ক্লোরোফিল3. বিজারিত NADP (অর্থাৎ NADPH + H+) গঠন (Formation of NADPH + H+ ) :
ক্লোরোফিল থেকে নির্গত ইলেকট্রন এবং জলের ভাঙনে উৎপন্ন H+ আয়ন NADP+ -এর সাথে যুক্ত হয়ে NADPH + H+ গঠন করে।
NADP+ + 2H+ + 2e- --> NADPH + H+
পূর্বে মনে রাখা হত জল H+ ও OH- আয়নে ভাঙে এবং 4টি OH থেকে এক অনু O2 উৎপন্ন হয়। কিন্তু তাহলে 6 অণু O2 উৎপন্ন হতে 24 অনু জল ভাঙতে হত ; যা আসলে ঘটে না।
4. ফটোফসফোরাইলেশন (Photophosphory ) :
সূর্যালোকের প্রভাবে ক্লোরোফিল থেকে নির্গত তেজোময় ইলেকট্রন বিভিন্ন বাহকের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় যে শক্তি ছেড়ে দেয় তার দ্বারা ADP ও iP যুক্ত হয়ে উচ্চশক্তিসম্পন্ন ATP তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়াকে ফটোফসফোরাইলেশন বা সালোকসংশ্লেষীয় ফসফোরীভবন বলে।
এটি দু-প্রকারের — চক্রাকার ও অচক্রাকার।
সূর্যালোকADP + iP ---> ATP
7.3 Kcalফটোলাইসিস (Photolysis) :
যে প্রক্রিয়ায় সুর্যালোক শোষণ করে সক্রিয় ক্লোরোফিল জলকে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) ইলেকট্রন (e) এবং অক্সিজেনে ( O2) ভেঙে দেয়, তাকে ফটোলাইসিস বলে।
হিলবিক্রিয়া (Hill Reaction) :
বিজ্ঞানী রোবিন হিল (Robin Hill, 1937) আলোকের উপস্থিততে ভাঙন এবং অক্সিজেন উৎপাদন যে পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করেন, তাকে হিল বিক্রিয়া বলে।
সূর্যালোক2H2O + 2 পটাশিয়াম ফেরিক ---> 2 পটাশিয়াম ফেরাস অক্সালেট + O2
অক্সালেট ক্লোরোপ্লাস্টহিলবিকারক (Hill Reagent):
রোবিন হিল ব্যবহৃত পটাশিয়াম ফেরিক অক্সালেটকে এবং উদ্ভিদে উপস্থিত NADP -কে হিলবিকারক বলে।
ফোটন (Photons) কণা ও কোয়ান্টা (Quanta) :
তড়িৎচুম্বকীয় বিচ্ছুরণ রূপে সূর্যালোক যখন শূন্য মাধ্যমে যায় তখন তরঙ্গরূপে ব্যবহার করে, কিন্তু যখন কোনো বস্তুর উপর পড়ে তখন কণার স্রোতরূপে ব্যবহার করে ; ওই তেজোময় কণাকে ফোটন কণা বলে। ফোটন মধ্যস্থ শক্তির প্রকাশকেই কোয়ান্টা বলে।
কোয়ান্টাজোম (Quantosome) :
ক্লোরোপ্লাস্টিডের গ্রানার থাইলাকয়েডের মধ্যে যে ছোটো ছোটো চ্যাপটা ক্লোরোফিলপূর্ণ বটিকা থাকে, তাকে কোয়ান্টোজোম বলে।
ফটোফসফোরাইলেশন (Photophosphorylation) :
আলোকশক্তির দ্বারা সালোকসংশ্লেষের আলোকদশায় ADP -এর সাথে iP যুক্ত হয়ে উচ্চশক্তিসম্পন্ন ATP তৈরির পদ্ধতিকে ফটোফসফোরাইলেশন বলে।