সংক্ষিপ্ত বিবরণ
সূচনা (Introduction):
বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের প্রভাবে জীবদেহের ক্রিয়াকলাপ সর্বদা নিয়ন্ত্রিত হয়। আবার বহুকোশী উন্নত প্রাণীদেহের ক্রিয়াকলাপের বহিঃপ্রকাশ ঘটে পেশী সংকোচন-প্রসারণ অথবা গ্রন্থির ক্ষরণের মাধ্যমে। উদ্দীপকের প্রভাবে প্রাণীদেহের ক্রিয়াকলাপের এইরূপ বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে দেহের মধ্যে বিশেষ একটি অঙ্গতন্ত্র কাজ করে, যাকে স্নায়ুতন্ত্র বলে।
যেমন-প্রদীপের শিখায় হাত লাগলে তাপের প্রভাবে উদ্দীপিত হয়ে হাতের পেশির সংকোচন-প্রসারণ ঘটে এবং হাত সরে যায়-এই ক্রিয়াটি স্নায়ুতন্ত্রের সক্রিয়তাতেই সম্ভব হয়।
স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য (Main features of Nervous System)
- স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত ও কার্যগত একক হল নিউরোন।
- এটি কেন্দ্রীয়, প্রান্তীয় ও স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র নিয়ে গঠিত।
- উদ্দীপনা গ্রহণ ও প্রেরণ করাই এর প্রধান কাজ।
- এটি পেশির সংকোচন-প্রসারণ এবং গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উদ্দীপনায় সাড়া দেয়।
- দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
স্নায়ুতন্ত্রের সংজ্ঞা (Definition of Nervous System):
নিউরোন, নিউরোগ্লিয়া, প্রভৃতি উপাদান দ্বারা গঠিত যে তন্ত্র বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনা গ্রহণ ও প্রেরণ করে এবং পেশি ও গ্রন্থির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিবেশ এবং দেহের বিভিন্ন যন্ত্র ও তন্ত্রের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করে, তাকে স্নায়ুতন্ত্র বলে।
স্নায়ুতন্ত্রের কাজ (Functions of Nervous System):
উদ্দীপনা গ্রহণঃ দেহকে প্রভাবিত করে এমন বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনা গ্রহণ করা।
উদ্দীপনা প্রেরণঃ গৃহীত উদ্দীপনা গ্রাহক থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে এবং সেখান থেকে কারকে পাঠানো।
পরিবেশের সাথে সম্পর্ক রক্ষাঃ উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে পরিবেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
সমন্বয় সাধনঃ দেহের বিভিন্ন যন্ত্র ও তন্ত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
পেশি সংকোচন ও গ্রন্থির ক্ষরণঃ দেহের বিভিন্ন পেশির সংকোচন-প্রসারণ ঘটানো এবং গ্রন্থির ক্ষরণ ঘটানো।
বিশ্লেষণঃ গৃহীত উদ্দীপনার বিচার বিশ্লেষণ করা।
উদ্দীপক (Stimulus):
যেসকল বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ ভৌত অবস্থা বা রাসায়নিক পদার্থ জীবদেহে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে তাদের উদ্দীপক বলে।
উদাঃ- আলো, শব্দ, বায়ু প্রভৃতি বাহ্যিক উদ্দীপক এবং ক্ষুধা, বেদনা প্রভৃতি অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক।
সংবেদন (Sensation):
জীবদেহে যে অনুভব শক্তি বা সচেতনতার দ্বারা উদ্দীপকের উদ্দীপনা গৃহীত হয়, তাকে সংবেদন বলে।
উদাঃ-দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শ প্রভৃতি।
স্নায়ুস্পন্দন (Nerve impulse):
রাসায়নিক বিক্রিয়ার দ্বারা আয়নের (Na+, K+,Ca- প্রভৃতি) পরিবর্তন ঘটিয়ে স্নায়ুকোশসমূহের মধ্যে যে তরঙ্গ প্রবাহিত হয় তাকে স্নায়ুস্পন্দন বলে। এর গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে 0.5 মিটার থেকে 140 মিটার।
সাড়া (Response):
জীবদেহে উদ্দীপকে বা প্রভাবে যেসকল প্রতিক্রিয়া সৃষতি হয় তার বাহ্যিক প্রকাশকে সাড়া বা রেস্পনস্ বলে।
নিউরোব্লাস্ট (Neuroblast):
ভ্রূণ অবস্থার যে কোশ থেকে সকল নিউরোন গঠিত হয় তাকে নিউরোব্লাস্ট বলে।
নিউরোট্রোফিন (Neurotrophin):
নিউরোনের বৃদ্ধির জন্য ও বেঁচে থাকার জন্য যে প্রোটিন প্রয়োজন তাকে নিউরোট্রোফিন বলে।