মানুষের লিঙ্গ-নির্ধারণ
মানুষের লিঙ্গ-নির্ধারণ (Sex determination in Man)
মানুষ একলিঙ্গযুক্ত প্রাণী অর্থাৎ ভিন্নবাসী (Dioecious)। প্রাথমিক জননঅঙ্গ ও গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করে পুরুষ ও স্ত্রী মানুষ আলাদা করা যায়। একে যৌন- দ্বিরুপতা (Sexual dimorphism) বলে। কিন্তু কী কারণে একটি মানুষ পুরুষ বা স্ত্রী হয়। অর্থাৎ কীভাবে মানুষের লিঙ্গ নির্ধারিত হয় সে সম্পর্কে বহু প্রাচীন ব্যাখ্যা ছিল।
যেমন- মনে করা হত ভ্রূণের পুষ্টি ভালো হলে ভ্রুণটি স্ত্রী হবে এবং পুষ্টি কম হলে পুরুষ হবে। পরবর্তীকালে ম্যাক্ কুং (Mc Clung) 1902 খ্রিস্টাব্দে লিঙ্গনির্ধারক ক্রোমোজোম ( Sex Chromosome) আবিষ্কার করায় মানুষের সঠিক লিঙ্গ-নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে।
মানুষের লিঙ্গ-নির্ধারণ পদ্ধতি :
যৌন ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিন দ্বারা লিঙ্গ নির্ধারিত হয়। মানুষের ডিপ্লয়েড কোশের মোট 46টি (23 জোড়া) ক্রোমোজোমের মধ্যে 44টি (22 জোড়া) ক্রোমোজোম কোনো যৌন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে না ; তাই এদের অযৌন ক্রোমোজোম বা অটোজোম (Autosome) বলে।
কিন্তু বাকি 2টি ক্রোমোজোম যৌন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে বলে এদের যৌন ক্রোমোজোম (Sex Chromesome) বলে।
যৌন ক্রোমোজোম ‘X' ও 'Y' দু-প্রকারের হয়। পুরুষের ক্ষেত্রে একটি করে X’ও ‘Y’ ক্রোমোজোম থাকে এবং স্ত্রীর ক্ষেত্রে দুটি ‘X' ক্রোমোজোম থাকে। Y ক্রোমোজোমে পুংলিঙ্গ নির্ধারক জিন থাকে। এবং Y ক্রোমোজোমের উপস্থিতিই পুংলিঙ্গ নির্ধারণ করে। Y ক্রোমোজোম না থাকলে X ক্রোমোজোম স্ত্রীলিঙ্গ নির্ধারণ করে।
পুং ও স্ত্রী গ্যামেটের নিষেকের পর জাইগোট ‘XX’ যুক্ত হলে কন্যা হবে এবং 'XY' যুক্ত হলে পুত্র হবে।
বিজ্ঞানী মেরি লিয়ন (Mary Lyon, 1961)-এর মতে স্ত্রীলোকের দেহকোশে দুটি 'X' ক্রোমোজোমের মধ্যে যে-কোনো একটি প্রজননিক অর্থে নিষ্ক্রিয় হয়ে হেটোরোক্রোমাটিন রূপে অবস্থান করে; যাকে বারবডি (Barbody) বলে। বারবডির আবিষ্কর্তা হলেন মুরে বার (Murray Bar, 1944)।