জীবাশ্মঘটিত প্রমাণ
জীবাশ্মঘটিত বা প্রত্নজীববিদ্যা সংক্রান্ত প্রমাণ (Palacontological Evidences)
জীবাশ্মের সংজ্ঞা (Definition of Fossil) :
পাললিক শিলাস্তরের মধ্যে প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষিত পুরাকালের কোনো জীবের সামগ্রিক দেহের বা দেহাংশের প্রস্তরীভূত অবস্থা, অবিকৃত দেহাংশ অথবা নরম শিলার ওপর জীবদেহের ছাপকে জীবাশ্ম বলে।
অভিব্যক্তিতে জীবাশ্মের গুরুত্ব :
- (1) ধারাবাহিক বিবর্তনের ইতিহাসে যে ফাঁকগুলি আছে সেগুলি বিভিন্ন জীবাশ্ম আবিষ্কারের ফলে সামান্য পূর্ণ হয়েছে।
- (2) জীবাশ্ম থেকে জানা যায় কোন্ জীবের উৎপত্তি কখন হয়েছে অথবা কোন্ সময় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
- (3) অধুনালুপ্ত জীবের গঠন, প্রকৃতি, ভৌগোলিক বিস্তার ও ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে জানা যায়- 1861 খ্রিস্টাব্দে জার্মানির ব্যাভেরিয়া অঞ্চলে আবিষ্কৃত আর্কিয়োপটেরিক্স নামে যে জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে পক্ষী ও সরীসৃপ উভয় শ্রেণির বৈশিষ্ট্য থাকায় সরীসৃপ থেকে পক্ষীশ্রেণির উদ্ভব ঘটেছে এটি বলা যায়।
ঘোড়ার বিবর্তনের জীবাশ্মঘটিত ব্যাখ্যা :
ঘোড়ার পূর্বপুরুষের বিভিন্ন জীবাশ্ম আবিষ্কারের ফলে ঘোড়ার বিবর্তন কীভাবে ঘটেছে তা জানা গেছে।
- (1) প্রায় 6 কোটি বছর পূর্বে 11 ইঞ্চির ইয়োহিপ্পাস (Eohippus) ছিল ঘোড়ার আদিপুরুষ। যার সামনের ও পেছনের পায়ে যথাক্রমে 4টি ও ওটি আঙুল ছিল এবং এর মাথা ও গলা ছোটো ছিল ।
- (2) ইয়োহিপ্পাস থেকে 24 ইঞ্চি উচ্চতার মেসোহিপ্পাস (Mesohippus)-এর সৃষ্টি হয়েছিল। যার দু-জোড়া পায়েই 3টি করে আঙুল ছিল।
- (3) এরপর মেরিচিপ্পাস (Merichippus)- এর উদ্ভব ঘটে। যার উচ্চতা ছিল 40 ইঞ্চি এবং যার পায়ের পাশের আঙুলগুলি মাটি স্পর্শ করত না।
- (4) মেরিচিপ্পাস থেকে 50 ইঞ্চির উচ্চতার প্লিয়োহিপ্পাস ( Pliohippus)-এর সৃষ্টি হয়েছে।
- (5) প্লিয়োহিপ্পাস থেকে 60 ইঞ্চি উচ্চতার আঙুলবিহীন ক্ষুরযুক্ত আধুনিক ঘোড়া ইকুয়াস (Equus)-এর সৃষ্টি হয়েছে।
উদ্ভিদের টেরিডোম্পার্ম (Pteridosperm) নামক যে জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে তাতে টেরিডোফাইটা ও জিম্নোস্পার্ম উভয় প্রকার উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য দেখে বলা যায় টেরিডোফাইটা থেকে জিম্নোস্পার্মের উদ্ভব ঘটেছে।
জীবন্ত জীবাশ্ম ( Living Fossil) : সূদূর অতীতে উদ্ভূত হয়েও যেসকল উদ্ভিদ বা প্রাণী কোনরকম পরিবর্তন ছাড়াই বেঁচে আছে (যাদের জীবাশ্ম ওজীবিত জীবের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই ) অথচ তাদের সমগোত্রীয় জীবেরা অবলুপ্ত হয়েছে, তাদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলে।
উদ্ভিদ জীবন্ত জীবাশ্ম : গিঙ্কগো বাইলোবা (Ginkgo biloba), ইকুইজিটাম (Equisetum), নিটাম (Gnetum) প্রভৃতি।
প্রাণী জীবন্ত জীবাশ্ম : স্ফেনোডন (Sphenodon), রাজকাঁকড়া বা লিমুলাস, (Limulus), সিলাকান্থ (Coelacanth), প্লাটিপাস, পেরিপেটাস প্রভৃতি।