বিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
বিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
এই মহাবিশ্ব বা বিশ্বব্রহ্মান্ড বলে, গঠিত হয়েছে বহুলক্ষ নক্ষত্র পুঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত। এই নক্ষত্র পুঞ্জ প্রকৃতপক্ষে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে থাকা নক্ষত্রদের সমষ্টি।
প্রাচীন সময়ে মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান ছিল অস্পষ্ট। এবং সেই জ্ঞান শুধুমাত্র রহস্য ধর্মীয় ধারণার মধ্যে আবদ্ধ ছিল। ১৪০ খ্রিস্টাব্দে টালাম নামক গ্রিক পন্ডিত এই তত্ত্বের অবতারণা করেন যে, পৃথিবী এই মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং সূর্য ও অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তু পৃথিবীকে চারপাশে প্রদক্ষিণ করছে। ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে কোপারনিকাস যুক্তিসহ বোঝালেন যে, পৃথিবী নয়, সূর্যই এই মহাবিশ্বের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। কেপলার কোপারনিকাসের মতবাদ সমর্থন করলেন এবং বললেন সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থান করছে, কিন্তু মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে নয়। ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে হারনেল এটা পরিষ্কার করে দিলেন যে, সৌরজগৎ নক্ষত্রদের যে বিরাট পরিবার, যাকে ছায়াপথ বলি, তার একটি অংশ মাত্র।
এডুইন হাবল্ 1924 খ্রিস্টাব্দে প্রথম যুক্তিসহ ছায়াপথের যে অস্তিত্ব যা আকাশগঙ্গা থেকে অনেক বাইরে তার অস্তিত্ব প্রমাণ করলেন। তিনি প্রমাণ করলেন, ছায়াপথেরা উড়ন্ত রাস্তা (Flying way) একে অপরের থেকে। এবং যতদূরে তারা যাচ্ছে, তত দ্রুত তারা উড়ে যাচ্ছে। এর অর্থ এই যে, এই মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে বেলুনের মতো।
আমাদের ছায়াপথ হল আকাশগঙ্গা। এটা আকারের দিক থেকে কুন্ডলীকাকার। এটা গঠিত হয়েছে ১০০ বিলিয়নের বেশি নক্ষত্রদের নিয়ে যেগুলি আবর্তিত হচ্ছে এর কেন্দ্রের চারপাশে। আমাদের নিকটতম ছায়াপথের নাম Andromeda ।
বিগ-ব্যাং থিওরি এই মূল্যায়ন করেছে যে, প্রায় ১৫ বিলিয়ন বছর আগে মহাজাগতিক পদার্থগুলি অত্যন্ত চাপে ঘন অবস্থায় ছিল, সেখান থেকে একটি আদিম বিস্ফোরণের দ্বারা প্রসারণ শুরু হয়। এই বিস্ফোরণের ফলে ঘন সন্নিবিষ্ট গোলকটি ভেঙে যায় এবং এর টুকরোগুলো মহাকাশে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তারা আজও প্রতি সেকেন্ডে হাজার হাজার মাইল গতিতে ভ্রমণ করছে। এই সমস্ত তীব্র গতি সম্পন্ন পদার্থের টুকরোগুলিই আমাদের ছায়াপথ তৈরি করেছে। ছায়াপথ ও নক্ষত্রের সৃষ্টি প্রক্রিয়া সম্প্রসারণের গতিকে ব্যাহত করে না এবং সমস্ত বিস্ফোরণের ক্ষেত্রেই যা হয় তা হল। দূরবর্তী টুকরোটি তীব্রতম গতিতে অগ্রসর হয়।
পরবর্তীকালে স্পন্দনশীল (আন্দোলিত) বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তত্ত্ব সামনে আসে সেখানে বলা হয় আদিম আকৃতিতে বিস্ফোরণের ফলে সময় সময় বিশ্বব্রহ্মান্ড সমপ্রসারিত হয়, পুনরায় সঙ্কুচিত হয় এবং আবার বিস্ফোরিত হয়।
মহাকাশ-সম্পর্কিত পরিমাপের এককগুলি-
একক | বিবরণ |
---|---|
আলোকবর্ষ | শূন্যের মধ্য দিয়ে ৩×১০৫ কিমি/সে গতিতে একক বছরে আলোর দূরত্ব। |
অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট (A.U) | এটি পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্ব। এক আলোকবর্ষ ৬০,০০০ A.U এর সমতুল্য। |
পারসেক (Parsec) | সেই দূরত্ব যাতে পৃথিবীর কক্ষপথের ব্যাসার্ধ তার বৃত্তের পরিধির এক সেকেন্ডের কৌণিক অঞ্চলের সম্মুখকোণে অবস্থান করে। |
নক্ষত্ররা হল নিজস্ব আলো যুক্ত যারা এই ছায়াপথের ৯৮% উপাদান। বাকি ২% উপাদান গঠিত হয়, এর মধ্যে যে গ্যাস এবং ধুলো থাকে তার দ্বারা। নক্ষত্ররা গঠিত হয়, নক্ষত্রদের বিস্তৃত গ্যাস, এবং ধুলোর যে বিস্তৃত মেঘপুঞ্জ থাকে তাদের মহাকর্ষণ সংকোচন বল দ্বারা। নক্ষত্র সৃষ্টিকারী এই গ্যাস ও ধুলোর মেঘপুঞ্জ হাজার গুণ ঘন স্বাভাবিক নক্ষত্রদের গ্যাসের তুলনায়। এই নক্ষত্র সৃষ্টিকারী উপাদানগুলি হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসে পূর্ণ থাকে। একটি নক্ষত্রের রং নির্দেশ করে উপরিতলের তাপমাত্রার উপর। নীল রং নির্দেশ করে সর্বাধিক তাপমাত্রার। তারপর তাপমাত্রা অনুযায়ী যে গ্যাস গুলি আসে সেগুলি হল হলুদ, লাল ইত্যাদি।
একটি নক্ষত্রের আয়ুষ্কাল কোটি কোটি বছর। এই নক্ষত্রগুলি তৈরি হতে শুরু করে ছায়াপথে গ্যাস ও ধুলোর সংকোচনের ফলে। সংকোচনের ফলে তাপ উৎপন্ন হয়, যা পরে হাইড্রোজেন-এ রূপান্তরিত হয়। এই হাইড্রোজেন নিউক্লিয় ঘর্ষণের ফলে হিলিয়াম গ্যাসে পরিণত হয়, এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর তাপ ও আলো উৎপন্ন হয়।
দীর্ঘসময় ধরে একই ভাবে নিউক্লিয় ঘর্ষণ চললে হাইড্রোজেন গ্যাসের শূন্যতার সৃষ্টি হয় এবং হিলিয়াম গ্যাসের ভান্ডার ফুলে উঠতে থাকে এবং লাল আকার ধারণ করতে থাকে। এইভাবে উৎপন্ন নক্ষত্রদের অর্থাৎ যেগুলি আকারে প্রকান্ড তাদের রেড জায়ান্ট বলে।
নক্ষত্রের আকার সূর্যের আকারের মতো হলে তাকে White dwarf বলে। নক্ষত্রের আকার সূর্যের চেয়ে বড়ো কিন্তু সূর্যের আকারের দ্বিগুণের বেশি নয়, এমন নক্ষত্রদের Neutron star অর্থাৎ Pulser বলে। নক্ষত্রদের ওজন তিনগুনের বেশি হলে, মহাকর্ষ শক্তির দ্বারা তারা এতটাই সংকুচিত এবং ঘন হয়ে যায় এমনকি তাদের মধ্যে দিয়ে আলোও এই মহাকর্ষ বল থেকে রেহাই পায় না, তাই একে ব্ল্যাক হোল বলে।
সৌরজগতের বাইরে বৃহত্তম নক্ষত্র Sirius বা Dogstar, সৌরগজতের নিকটতম নক্ষত্র Proxima Centauri.