পশ্চিমবঙ্গের শিল্প
১. পাট শিল্প-
পাট শিল্প পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ শিল্প। ১৮৫৫ সালে ভারতের প্রথম পাটকল পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার রিষড়ায় স্থাপিত হয়েছিল। (জর্জ অকল্যান্ড নামে একজন ইংরেজ ও বাঙ্গালি ব্যবসায়ী বিশ্বম্ভর সেনের সহযোগিতায় এই পাটকলটি গড়ে ওঠে। হুগলী নদীর উভয় তীরে বর্তমানে প্রায় ৫৬টি পাটকল রয়েছে।)
২. চা শিল্প-
দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার তরাই-ডুয়ার্স অঞ্চলে চা বাগিচাগুলি গড়ে উঠেছে। এই রাজ্যে বর্তমানে প্রায় ৩০০টি বাগান রয়েছে। এইসব বাগানে প্রায় ৬,০০০টি ছোটো কারখানা, ৩৬৭টি বটলিফ কারখানা (Bought Leaf Factory) আছে। দার্জিলিংএর হ্যাপিভ্যালি, লাবাবু, তাকদা, আলুয়াবাড়ি এবং কার্শিয়াঙের মকাইবাড়ি প্রভৃতি প্রধান চা উৎপাদন কেন্দ্র।
৩. লোহা ও ইস্পাত শিল্প-
পশ্চিমবঙ্গে ২টি বৃহৎ সম্পূরিত (Integrated) লোহা ও ইস্পাত কারখানা (অ) বার্ণপুর-হীরাপুর-কুলটি ও (আ) দুর্গাপুর। দুর্গাপুরকে ‘ভারতের রূঢ়’ জার্মানীতে বিখ্যাত রাইন নদীর ডানতীরে একটি উপনদী হল রূঢ় নদী। রূঢ় উপত্যকায় উন্নতমানের কয়লা পাওয়া যায়। এই কয়লা খনিকে কেন্দ্র করে পৃথিবী বিখ্যাত ‘রূঢ়’ শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে। অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গে দামোদর উপত্যকার রাণীগঞ্জ আসানসোল অঞ্চলে কয়লা বলয়কে কেন্দ্র করে লৌহ-ইস্পাত সহ অনেক শিল্প গড়ে ওঠায় অনেকে দুর্গাপুরকে ‘ভারতের রূঢ়’ বলে।
৪. কার্পাস শিল্প-
ভারতের প্রথম কার্পাস বয়ন শিল্প ১৮১৮খ্রিঃ কলকাতার আছে বাউড়িয়াতে ফোর্টগ্লাসটারে স্থাপিত হয়েছিল। রাজ্যে কাঁচাতুলা উৎপাদিত না হলেও মহারাষ্ট্র ও গুজরাট থেকে আমদানিকৃত তুলার সাহায্যে বর্তমানে প্রায় ৩৭ টি কার্পাস বয়ন শিল্প কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। শ্রীরামপুর, রিষড়া, কোন্নগর, সোদপুর, বেলঘড়িয়া, হাওড়া, উলুবেড়িয়া প্রভৃতি কার্পাস বয়নশিল্পের প্রধান কেন্দ্র।
রাসায়নিক শিল্প
রাসায়নিক শিল্প | উৎপাদন অঞ্চল |
---|---|
সালফিউরিক অ্যাসিড | কলকাতা বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। |
সোডা অ্যাশ | হলদিয়াতে কারখানা গড়ে উঠেছে। |
কষ্টিক সোডা | টিটাগড় ও দুর্গাপুরে ২টি কারখানা |
রাসায়নিক সার | বার্ণপুর, দুর্গাপুর, রিষড়া (কয়লাভিত্তিক) ও হলদিয়া (খনিজ তেল ভিত্তিক) |
ঔষধ শিল্প | পানিহাটিতে বেঙ্গল কেমিক্যাল। রিষড়ায় অ্যালক্যালি কেমিক্যাল কর্পোরেশন |
ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প
স্থান | হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প | স্থান | ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প |
---|---|---|---|
দুর্গাপুর | খনি যন্ত্রপাতি নির্মাণ | চিত্তরঞ্জন | রেলইঞ্জিন তৈরির কারখানা |
যাদবপুর | বৈজ্ঞানিক সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি | খিদিরপুর | জাহাজ নির্মাণ |
রূপনারায়নপুর | টেলিফোনের তার | হিন্দমোটর | অ্যাম্বাসাডার কার ও বেডফোর্ড ট্রাক নির্মাণ |
শ্রীরামপুর | পাটকলের যন্ত্রপাতি | দমদম | রেলকোচ ও ভারী যন্ত্রপাতি |
আসানসোল ও কল্যাণী | সাইকেল কারখানা | ইচ্ছাপুর | |
সল্টলেক | ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স | কাশীপুর ও দমদম | সামরিক অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণ |
৭. কাগজশিল্প-
১৮৭০ সালে ভারতের প্রথম কাগজকল হাওড়ার বালিতে স্থাপন করা হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য কাগজশিল্প কেন্দ্রগুলি হল টিটাগড়, কাঁকিনাড়া, নৈহাটি, হালিশহর, বাঁশবেড়িয়া, ত্রিবেণী, চাকদহ, রাণীগঞ্জ, আসানসোল, ঝাড়গ্রাম।
৮. অ্যালুমিনিয়াম শিল্প-
রাজ্যের বৃহত্তম অ্যালুমিনিয়াম কারখানাটি আসানসোলের কাছে জেকেনগর নামক স্থানে গড়ে উঠেছে।
৯. চামড়া শিল্প-
কলকাতার কাছে কাঁচা চামড়া ট্যানিং হয় ট্যাংরাতে। এছাড়া বাটানগর বাটা সু কোম্পানি বিখ্যাত।
১০. পশ্চিমবঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প-
কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে কম্পিউটারকে ব্যবহার করবার ব্যাপারে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে পিছিয়ে নেই (অবশ্য কর্ণাটক রাজ্য এ বিষয়ে অগ্রণী)। টি.সি.এস, ইনফোসিস, উইপ্রো-সফটওয়্যার পরিষেবার তিন প্রধান ভারতীয় সংস্থা ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র নির্মাণ করেছেন। এই শিল্পে যে বিপুল সংখ্যক মানবসম্পদ দরকার তার চাহিদা মেটাতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ কলকাতায় ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাজারহাট দেশের মধ্যে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তির কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।