আগ্নেয়গিরি (Volcanoes)
আগ্নেয়গিরি হল একটি গোলাকার নির্গমন মুখ যা দিয়ে উত্তপ্ত পদার্থ যেমন গ্যাস, জল, গলিত লাভা ও পাথরের টুকরো পৃথিবীর অভ্যন্তরের তীব্র উত্তপ্ত অঞ্চল থেকে নির্গত হয়।
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বিভিন্ন পরস্পর সম্বন্ধীয় পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত-
- (১) পৃথিবীর অভ্যন্তরে তেজস্ক্রিয় পদার্থের চ্যুতির কারণে যে তাপ উৎপন্ন হয় তার ফলে পৃথিবীর গভীরে তাপমাত্রা প্রতি ৩২ মিটারে ১° করে বৃদ্ধি পায়।
- (২) বিভিন্ন প্লেটগুলি ভেঙে যাবার জন্য পরবর্তী প্রস্তরের উপর চাপ কমে গিয়ে গলিতাঙ্কের নিম্নগামী হওয়ার ফলে ম্যাগমা বা লাভার উৎপত্তি হওয়া।
- (৩) জলের উত্তাপ বাড়ার ফলে গ্যাস ও জলীয় বাষ্পের উৎপত্তি হওয়া
- (৪) গ্যাস ও বাষ্পের চাপে লাভার উপরে উঠে আসা।
- (৫) অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা। প্লেটের সীমানার সঙ্গে এই অগ্ন্যুৎপাতের সম্পর্ক আছে।
আগ্নেয়গিরির শ্রেণিবিভাগ- নানা ভাগে আগ্নেয়গিরির বিভাজন করা হয়-
১। অগ্ন্যুৎপাতের সময়কালের ভিত্তিতে করা বিভাজন-
- (ক) সক্রিয় আগ্নেয়গিরি- যে আগ্নেয়গিরি একতা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়-যেমন হাওয়াই এর মৌলা লোয়া, সিসিলির এটনা, ইতালির ভিসুভিয়াস, ভূমধ্যসাগরের স্ট্রোমবোলি ইত্যাদি।
- (খ) সুপ্ত আগ্নেয়গিরি- যে আগ্নেয়গিরি দীর্ঘ সময় ধরে শান্ত অবস্থায় আছে কিন্তু যে-কোনো সময় তার জেগে ওঠার সম্ভাবনা আছে, যেমন-জাপানের ফুজিয়ামা, ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাটোয়া, আন্দামানের ব্যারেন আইল্যান্ড আগ্নেয়গিরি ইত্যাদি।
২। অগ্ন্যুৎপাতের ধরণের উপর করা বিভাজন-
- (ক) সেন্ট্রাল ইরাপ্সন টাইপ অথবা এক্সপ্লোসিড টাইপ- যেমন হাইয়ান টাইপ, ট্রোমবোলিয়ান টাইপ, ভলক্যানিয়ান টাইপ, পেলিয়ান টাইপ, ভিসুভিয়াস টাইপ ইত্যাদি।
- (খ) ফিসার ইরাপ্সন অথবা কোয়ায়েট ইরাপ্সন টাইপ- প্রচুর পরিমাণ লাভা ধীরে ধীরে ফাটলের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসে সংলগ্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে আসা লাভা জমে জমে একটি লাভাপূড়্রণ মালভূমির আকার নেয়। যেমন-দাক্ষিণাত্যের মালভূমি ইত্যাদি।
আগ্নেয়গিরির বিস্তার
পৃথিবীর মোট সক্রিয় আগ্নেয়গিরির প্রায় ১৫% ‘কন্ট্রাকটিভ বা ডাইভারজেন্ট প্লেট মার্জিন’-এ দেখা যায়, অন্যদিকে প্রায় ৮০% আগ্নেয়গিরি ‘ডেসট্রাক্টিভ বা কনভারজেন্ট প্লেট মার্জিন’-এ দেখা যায়।
(ক) প্রশান্ত মহাসাগরীয় বেষ্টনী বা রিং অবু ফায়ার- এটি কামচটকা পেনিনসুলা, কুরেল আইল্যান্ড, জাপান দ্বীপপুঞ্জ, ফিলিপিনস, নিউ গিনিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং সলোমন আইল্যান্ড। এটি আন্টার্কটিকা ও আমেরিকার পশ্চিম উপকূল বরাবর বিস্তৃত।
(খ) মধ্য-মহাসাগরীয় বেষ্টনী- আল্পান পর্বতমালার বেষ্টনীভুক্ত আগেন্যগিরি, ভূমধ্যসাগর ও পূর্ব আফ্রিকার ত্রুটিপূর্ণ অঞ্চল যেমন, স্ট্রোমবলি, ভিসুভিয়াস, এটনা, কিলিমাঞ্জারো ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত।
(গ) মধ্য-আটলান্টিক বেষ্টনী- যাতে ফাটলের মধ্য দিয়ে লাভা উদ্গিরণ হয় যেমন-আইসল্যান্ড, ক্যানারি আইল্যান্ড, কেষা ভারডে, আজারেস ইত্যাদি।