সামুদ্রিক ঢেউ (Ocean Currents)
- সমুদ্রের এক অংশ থেকে অপর অংশে জলের প্রকৃত স্থানান্তরের ঘটনাকে বোঝায়।
- ঘনত্বের, লবণাক্ততায়, জলের তাপমাত্রার, পৃথিবীর আবর্তনের, উপকূলের গঠন ও বায়ুপ্রবাহের পার্থক্যের জন্য ঘটে।
- উত্তর গোলার্ধে সামুদ্রিক ঢেউ ঘড়ির কাঁটার অভিমুখে ও দক্ষিণ গোলার্ধে সামুদ্রিক স্রোত ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে প্রবাহিত হয়।
প্রশান্ত মহাসাগরের সামুদ্রিক স্রোত
- ১। উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ)- পূর্ব থেকে পশ্চিমে এই স্রোত বয়। যেমন, উত্তর আমেরিকা থেকে এটি ফিলিপিনসে পৌঁছয়।
- ২। কুরোশিও স্রোত (উষ্ণ)- ফিলিপিনস, তাইওয়ান ও জাপান উপকূল বরাবর উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত উক্ত কুরোশিও স্রোত গঠন করে।
- দক্ষিণ-পূর্ব জাপান থেকে এই স্রোত বিদ্যমান। পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে সমুদ্রের ডানদিক বরাবর প্রবাহিত হয়।
- উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে পৌঁছনোর পর এটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়-
- (ক) আলাক্সা স্রোত (উষ্ণ)- ব্রিটিশ কলম্বিয়া ও আলাস্কা উপকূল বরাবর।
- (খ) ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত (শীতল)- এটি ক্যালিফোর্নিয়া উপকূল বরাবর দক্ষিণ অভিমুখে প্রবাহিত হয়।
- ৩। ওয়াশিও স্রোত (শীতল)- এটি কামচটকা পেনিনসুলার পূর্ব উপকূল বরাবর প্রবাহিত হয়।
- ৪। ওখোস্ক স্রোত (শীতল)- উত্তরমেরু থেকে এসে ওয়াশিও স্রোতে মিলিত হয়।
- ৫। পূর্ব অস্ট্রেলিও স্রোত (উষ্ণ)- দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়।
- ৬। পেরু স্রোত (শীতল)- দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলবর্তী শীতল স্রোত।
আটলান্টিক সাগরের স্রোত-
- ১. গিনিয়া (Guinea) স্রোত (উষ্ণ)- পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে প্রবাহিত হয়।
- ২. ফ্লোরিডা স্রোত (উষ্ণ)- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূল বরাবর কেপ হাটারাস পর্যন্ত প্রবাহিত হয়।
- ৩. গালফ স্রোত (উষ্ণ)- কেপ হাটারাসের পিছন থেকে নিউফাউন্ডল্যান্ডের তীর পর্যন্ত যে ফ্লোরিডা স্রোত প্রবাহিত হয় তাকে গালফ স্রোত বলা হয়। গ্র্যান্ড ব্যাংক থেকে আটলান্টিক সাগরের পূর্ব অভিমুখে গালফ স্রোত প্রবাহিত হয়।
- ৪. আটলান্টিক ড্রিফট দুই ভাগে বিভক্ত-
- (ক) নরওয়েজিয়ান স্রোত- মূল স্রোত নরওয়ের উপকূল বরাবর প্রবাহিত হয়ে সাগরে প্রবেশ করে।
- (খ) ক্যানারি স্রোত- উত্তর আটলান্টিক ড্রিফট-এর দক্ষিণ শাখাটি এই নামে স্পেন-এর কাছে প্রবাহিত হয়।
- ৫. দুটি শীতল স্রোত- পূর্ব গ্রিনল্যান্ড স্রোত ও ল্যাব্রাডোর স্রোত আর্কটিক সাগর থেকে আটলান্টিক সাগরে প্রবাহিত হয়। এই দুই স্রোতের প্রভাবে নিউফাউন্ডল্যান্ডের চারপাশে বিখ্যাত কুয়াশার সৃষ্টি হয় (এই অঞ্চলটি বিশ্বের সেরা মৎস শিকারের জায়গা)।
- ৬। ব্রাজিল স্রোত (উষ্ণ)- দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল বরাবর উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়।
- ৭. বেনজুয়েলা (Benguela) স্রোত (শীতল)- শীতল স্রোত যা দক্ষিণ থেকে উত্তরে ‘কেপ অব গুড হোপ’-এর কাছে প্রবাহিত হয়।
- ৮. ফকল্যান্ড স্রোত (শীতল)- দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়ে ব্রাজিল স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।
ভারত মহাসাগরের স্রোত-
- উত্তর ভারত মহাসাগরের স্রোত মূল স্রোতের প্রকৃতির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিভিন্ন ঋতুর পরিবর্তনের সঙ্গে এই স্রোতের দিক পরিবর্তিত হয়।
- শীতকালে, উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়।
- মোজাম্বিক স্রোত-উষ্ণ স্রোত যা মোজাম্বিক চ্যানেল দিয়ে প্রবাহিত হয়।
- আগালহাস স্রোত- উষ্ণ স্রোত যা আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে প্রবাহিত হয়।
প্রধান জাহাজ চলাচলের উপযোগী খাল-
- কিয়েল খাল- লন্ডন ও বাল্টিক বন্দরের মধ্যবর্তী উত্তর সাগরের সঙ্গে বাল্টিক সাগরের ৯৮ কিমি লম্বা সংযোগকারী খাল।
- পানামা খাল- আটলান্টিক সাগরের সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরের সংযোগকারী ৫৮ কিমি লম্বা। ১৯১৪ সাল থেকে শুরু হয়।
- সুয়েজ খাল- ‘হাইওয়ে অব ইন্ডিয়া’ নামেও ডাকা হয়। এটি ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরকে সংযুক্ত করে। এটি ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে জলপথে যাতায়াত সুগম করে এবং আফ্রিকার পাশ দিয়ে না গিয়েও তা করা যায়। ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার ফার্ডিনান্ড ডে লেসেপস্ ১৮৬৯ সালে এটি তৈরি করেন। ১৬৯ কিমি লম্বা ও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খাল। এটির উত্তর প্রান্ত হল পোর্ট সেড ও দক্ষিণ প্রান্ত হল পোর্ট টোউফিক যা সুয়েজ সিটিতে অবস্থিত।
- প্রধান সাগরগুলি- বড়ো থেকে ছোটো-এই পর্যায়ক্রমে সাগরগুলি-হল (১) দক্ষিণ চিন সাগর (২) ক্যারিবিয়ান সাগর (৩) ভূমধ্যসাগর
প্রধান নদী সমূহ-
- বৃহত্তম নদী হল আমাজন যদিও এটি নীলনদের (দীর্ঘতম নদী) চেয়ে ২২২ কিমি কম দৈর্ঘ্যের। কারণ এখানে স্রোত সবচেয়ে বেশি এবং গভীর সমুদ্র যান চলাচলের যোগ্য। তৃতীয় দীর্ঘতম নদী হল ইয়াংচি যা চিনে অবস্থিত।