দ্রাঘিমা (Longitude)
পৃথিবীর মধ্যস্থল বরাবর কৌণিক দূরত্ব। একটি ভূ-গোলকের উপর বিষুবরেখার উপর দিয়ে উত্তরমেরু থেকে দক্ষিণমেরু বরাবর অঙ্কন করা একাধিক অর্ধবৃত্তাকার রেখাকে দ্রাঘিমারেখা হিসাবে ধরা হয়। এগুলিকে মধ্যরেখা (মেরিডিয়ান)-ও বলা হয়।
দুটি মধ্যরেখার দূরত্ব সমান নয়। বিষুবরেখায় ১ ডিগ্রি=১১১ কিমি। ৩০° উত্তর বা দক্ষিণে এটি ৯৬.৫ কিমি। এইভাবে দূরত্ব কমতে থাকে যতক্ষণ না তা মেরুতে শূন্য কিমিতে দাঁড়ায়।
মোট ৩৬০টি দ্রাঘিমার মধ্যরেখা আছে। প্রধান মধ্যাংশ-এর দ্রাঘিমাংশ হল 0°, যা লন্ডনের গ্রিনউইচের কাছে রয়্যাল মানমন্দির দিয়ে গেছে। এই মধ্যাংশ দিয়ে পৃথিবীকে পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধে ভাগ করা হয়েছে।
দ্রাঘিমার প্রতিটি মধ্যরেখা এক একটি অর্ধবৃত্ত। ১৮০° মধ্যাংশ (আন্তর্জাতিক ডেট লাইন) ঠিক 0° মধ্যাংশের উলটোদিকে অবস্থিত। এই বিন্দুগুলিকে বলা হয় বিপরীত পৃথিবীপৃষ্ঠ বিন্দু।
পৃথিবীকে ২৪টি দ্রাঘিমাগত অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে, যার প্রতিটি ১৫° বা ১ ঘণ্টার পার্থক্যে অবস্থিত (৪মিনিট/ডিগ্রি)
দ্রাঘিমা ও সময় (Longitude and time)
একই মধ্যাংশের (মেরিডিয়ান) উপর থাকা জায়গাগুলির স্থানীয় সময় একই হয়। যেহেতু পৃথিবী ২৪ ঘণ্টায় পুরো ৩৬০° আবর্তন করে, এটি ১ ঘণ্টায় ১৫° অথবা ৪ মিনিটে ১° পথ অতিক্রম করে।
মনে রাখার জন্য একটি শব্দবন্ধ হল-East-Gain-Add (E.G.A) and West-Lose-Subtract (W.L.S)। কাজেই যদি লন্ডনে দুপুর (১২টা) হয় (0°-এর কাছে), ১৫° পূর্ব হবে লন্ডনের ১ ঘণ্টা আগে (দুপুর ১টা) আর চেন্নাই (৮০° পূর্ব) হবে আরও ৫ ঘণ্টা ২০ মিনিট আগে।
একই দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্থানীয় সময়ের বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট মধ্যাংশের স্ম্যকে সারা দেশের জন্য ‘মানদণ্ড সময়’ হিসাবে ধরা হয়।
সাধারণত গ্রিনউইচ মধ্যরেখা থেকে এইভাবে সমগ্র পৃথিবীকে একাধিক ‘সময় অঞ্চলে’ ভাগ করা হয়। বড়ো দেশগুলি যেমন রাশিয়া, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদির বেশি পূর্ব-পশ্চিম বিস্তার আছে, তাই এরা অনেক ‘সময় অঞ্চল’ (টাইম জোন) গ্রহণ করে। রাশিয়ার ১১টি ‘সময় অঞ্চল’ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ৫টি করে ‘সময় অঞ্চল’ আছে।
ভারতের দ্রাঘিমাগত বিস্তার প্রায় ৩০° এবং ভারতে মাত্র একটি ‘সময় অঞ্চল’ (টাইম জোন) আছে, ভারতের ৮২.৫° অবস্থানকে সময়ের মানদণ্ড ধরা হয় যা গ্রিনউইচ মানমন্দিরের থেকে ৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট বেশি।