বারিমন্ডল (The Hydrosphere)
যে জলভাগ পৃথিবীর ৭১ শতাংশ পৃষ্ঠতল জুড়ে রয়েছে।
সমুদ্রের গড় গভীরতা প্রায় ৪ কিমি।
সমুদ্রতল
- মহাদেশের তলদেশের মতোই এটি অনিয়মিত।
সমুদ্রতলের চারটি প্রধান একক হল-
মহাদেশীয় ভাঁজ
- এটি সমুদ্রের উপকূলবর্তী অংশ যা খুব বেশি গভীর নয় এবং তলদেশের ঢাল মৃদু হয়।
- ১০০ ফ্যাদম (১ ফ্যাদম=১.৮ মিটার) পর্যন্ত গভীর হয়।
- যেখানে সমুদ্র উপকূলবর্তী অংশে বিস্তৃত সেখানে উক্ত সেলফ্ সরু হয়।
- প্রায় ২০ শতাংশ পেট্রোল ও গ্যাস এখানে পাওয়া যায়। এই অংশটি মৎস্য শিকারের পক্ষে সবচেয়ে উপযুক্ত। সামুদ্রিক জীবনের অস্তিত্ব এখানেই আছে।
- মোট সামুদ্রিক এলাকার ৭ শতাংশ এরা দখল করে।
মহাদেশীয় ঢাল
- মহাদেশীয় খাঁজ থেকে সমুদ্রের দিকে বিস্তৃত।
- কন্টিনেন্টাল সেলফ ও স্লোপের মধ্যে যে সীমানা তাকে বলা হয় অ্যান্ডেসাইট লাইন, যা অ্যান্ডেসাইট প্রস্তরের নামে নামকরণ করা হয়েছে।
- ২০০০ ফ্যাদম পর্যন্ত গভীরতা।
- সম্পূর্ণ সামুদ্রিক এলাকার ৮.৫% দখল করে আছে।
মহাদেশীয় উত্থান
- নানা বর্জ্য জমা হবার জন্য ঢালের পাদদেশে ঈষৎ উচ্চতা বিশিষ্ট একটি অঞ্চল দেখা যায়। এই অঞ্চলে তৈল জমা হয়ে থাকে।
অ্যাবিস বা গভীর সামুদ্রিক তল
- এটি সামুদ্রিক তলদেশের গভীর অংশ এবং মোট সামুদ্রিক তলদেশের প্রায় ৪০ শতাংশ জুড়ে আছে।
- এই অংশে সুউচ্চ শৈলশিরা, সমুদ্র গর্ভস্থ পর্বত, গভীর পরিখা ও গিরিখাত দেখা যায়।
- শৈলশিরা (Ridge) হল সমুদ্রের মধ্যে সুউচ্চ অঞ্চল, যেমন-মধ্য আটলান্টিক রিজ (ইংরেজি ‘এস’ আকৃতির), ভারত মহাসাগরীয় রিজ (ইংরেজি বিপরীত ‘ওয়াই’ আকৃতির)।
- কোনো রিজ সামুদ্রিক ত থেকে ১০০০ মিটারের বেশি উচ্চতা বিশিষ্ট হয়, তাকে সিমাউন্ট (Seamount) বলা হয়। যেসব সিমাউন্ট-এর শিখরদেশ সমতল হয় তাকে গাইয়োটস (Guyots) বলা হয়।
- রিজের কিছু অংশ বা আগ্নেয়গিরির চূড়া যখন সমুদ্রের উপরিতলে উঠে আসে তখন দ্বীপের সৃষ্টি হয় (যেমন হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ)।
- পরিখা সরু ও খাড়া প্রান্তিক নীচু জায়গা। যখন পৃথবীর অভ্যন্তরস্থ দুতি পাত একসাথে চলতে থাকে এবং একটি অপ্রটির উপর ঠেলে ওঠে তখন এই ধরণের সামুদ্রিক পরিখা সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে গভীর পরিখা হল চ্যালেঞ্জার ডিপ, যা প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা ট্রেঞ্চ-এর অংশ। এটি ফিলিপিনস-এর কাছে অবস্থিত এবং ১১ কিমির বেশি গভীর।
লবণতা
- বিশুদ্ধ জলে দ্রবীভূত লবণের অনুপাতকে লবণতা বলা হয়। সামুদ্রিক জলে গড় লবণতা হল ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ এক লিটার জলে ৩৫ গ্রাম লবণ।
- বেশি থেকে কম এই পর্যায়ক্রমে লবণতা যে উপাদানগুলিতে পাওয়া যায় সেগুলি হল-NACL, MGCL, MGSO4, CASO4, KSO4 ইত্যাদি। সবচেয়ে প্রাচুর্যপূর্ণ উপাদান হল ক্লোরিন।
- সবচেয়ে লবণতাঃ লেক ভ্যান (তুর্কি)-৩৩৩%, তারপর ডেড সি (২৪০%)। সবচেয়ে লবণতাপূর্ণ সমুদ্র হল রেড সি।
- লবণতার মূল উৎস হল লবণযুক্ত সামুদ্রিক প্রস্তরের দ্রবীভূত হওয়া।
- ক্রান্তিবৃত্তীয় অঞ্চলে এই লবণতা সবচেয়ে বেশি থাকে কারণ এখানে তাপমাত্রা বেশি থাকে। দ্বিতীয় স্থানে থাকবে নিরক্ষীয় অঞ্চল কারণ যদিও উক্ত অঞ্চলে উচ্চ তাপমাত্রা থাকে, এখানে বেশি বৃষ্টিপাতও হয়। মেরু অঞ্চলে কম লবণতা থাকে। হিমশৈল ও অত্যধিক তুষারপাতের কারণে শুদ্ধ জলের জোগান এর প্রধান কারণ।
- এর ফলে জলের আনুভূমিক সঞ্চালন হয়।
ঢেউ
- বাতাসের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হয়।
- ঢেউ এর ফলে জলের কোনো অগ্রগমন হয় না। অগভীর জলে ঢেউ ঢুকলে তা ভেঙে যায়। ঢেউ-এর উপরিভাগ সামনের দিকে এগিয়ে যায়। বাকি অংশের তীরের দিকে গিয়ে আবার ফিরে আসে।
- বেশিরভাগ সমুদ্রের ঢেউ-এর সর্বাধিক উচ্চতা প্রায় ১২ মিটার থাকে, তবে তা ১৫ মিতার উচ্চতারও হতে পারে। সুনামি হল সমুদ্রের গভীরে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূমিকম্পের দ্বারা সৃষ্টি হওয়া ঢেউ। ২০০৪ সালের ২৬শে ডিসেম্বর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূলে আঘাত হেনেছিল যে সুনামি তার প্রভাবে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।