বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর (Layers of Atmosphere)
ট্রপোস্ফিয়ার
- ভূত্বকের সবচেয়ে কাছের স্তর। ঘনত্ব মেরুদেশ থেকে বিষুবরেখা পর্যন্ত যথাক্রমে ৮ কিমি থেকে ১৬ কিমি পর্যন্ত মাত্রাভেদ হয়।
- সমস্ত আবহাওয়াগত ঘটনা এই স্তরে ঘটে।
- ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি এবং এতে জলীয় বাষ্প, আর্দ্রতা ও ধূলিকণা থাকে।
- এই স্তরে উপস্থিত ধূলিকণা জলীয় বাষ্প ধরে রাখে ও গোধূলি বা ঊষাকালের আলো এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূর্যের লাল রং দেখতে সাহায্য করে।
- এই স্তরে প্রতি ১৬৫ মিটারে ১° সেঃ করে তাপমাত্রা হ্রাস হয়। একে বলে নরমাল ল্যাপস রেট অব টেম্পারেচার।
- ট্রপোপজ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার থেকে ট্রপোস্ফিয়ারকে আলাদা করে।
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
- এখানে নামমাত্র জলীয় বাষ্প থাকে এবং কোনো ধূলিকণা থাকে না।
- বড়ো বড়ো উড়োজাহাজ ওড়ার আদর্শ অঞ্চল।
- এই অঞ্চলে ওজোন থাকে (২৫-৩০ কিমি ভূপৃষ্ঠের উপরে), যাকে বলে ওজোনোস্ফিয়ার এটি সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি শুষে নেয়। তাই এই স্তরে অপেক্ষাকৃত বেশি তাপমাত্রা থাকে।
মেসোস্ফিয়ার
- প্রায় ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।
- এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমে এবং ৮০ কিমি উচ্চতায় প্রায় ১০০° সেঃ তাপমাত্রায় নেমে আসে।
আয়নোস্ফিয়ার
- প্রায় ৫০০-৬০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
- বিদ্যুৎবাহী পদার্থ (আয়ন) যা বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত করে, তা থাকার জন্য এই স্তরের উক্ত নামকরণ হয়েছে।
- ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়তা থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়ার এটা মূল কারণ।
- পতিত উল্কাপিন্ড থেকে এটি পৃথিবীর রক্ষা করে কারণ বেশির ভাগ উল্কাপিন্ড এই স্তরে জ্বলে যায়।
এক্সোস্ফিয়ার
- এই স্তরে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি খুব দুর্বল।
- উচ্চসীমা অনিশ্চিত।
- এর বাইরের অংশকে বলা হয় ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।
- আয়নমুক্ত বস্তুগুলির কম্পাঙ্ক উচ্চতার বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ে। উচ্চ বায়ুমণ্ডলে প্রবল দ্রবীভূত আয়নযুক্ত পদার্থের দুটি বেষ্টনী আছে। এদের বলা হয় ভ্যান অ্যালেনস্ রেডিয়েশান বেল্ট। ভিতরের বেষ্টনীটি পৃথিবীর ভূত্বক থেকে প্রায় ২৬০০ কিমি উপরে থাকে আর বাইরের বেষ্টনীটি প্রায় ১৩০০০ থেকে ১৯০০০ কিমি উপরে থাকে। এই স্তরে পৃথিবীর বহিঃস্তরের চুম্বকীয় শক্তির প্রভাবে আটকে থাকা সূর্যের প্রোটন, ইলেকট্রন ও অন্যান্য তড়িৎচৌম্বকীয় পদার্থ থাকে।
- পৃথিবীর ও বাইরের মহাবিশ্বের যে সীমারেখা তাকে বলা হয় ম্যাগনেটোপস।
দ্রষ্টব্য- সূর্যের থেকে নির্গত বিদ্যুৎপ্রবাহী বস্তু যা ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০ কিমি উপরে পৃথিবীর চৌম্বকীয় শক্তির প্রভাবে আটকে থাকে তার ফলে মেরুজ্যোতির সৃশ্তি হয়। এই উজ্জ্বল প্রভা উচ্চ অক্ষাংশ বিশিষ্ট অঞ্চলে রাত্রিবেলা দেখা যায়। এটি আলোর বক্ররেখা, ঢেউ বা রশ্মি হিসাবে দেখা যায়। নর্দান হেমিস্ফিয়ারে এই আলোকে সুমেরু প্রভা ও সাউদার্ন হেমিস্ফিয়ারে এই আলোকে কুমেরু প্রভা বলা হয়।
ভূপৃষ্ঠে আপতিত সূর্যকিরণ (আইসোলেশন) ও হিট বাজেট (উষ্ণতার হিসেব)
- আইসোলেশন হল ভূপৃষ্ঠে আপতিত সূর্যতেজ। এটি বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ একমাত্র উৎস।
- সূর্য থেকে আগত সমস্ত তেজ ভূপৃষ্ঠ শোষণ করে না। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত সৌর বিকিরণের অনুপতিকে বলা হয় আলবেডো।
- ভূপৃষ্ঠে পতিত সর্বদাই সূর্যকিরণের হার ক্রান্তিরেখা বরাবর সবচেয়ে বেশি, বিষুবরেখা বরাবর অপেক্ষাকৃত কম, আর মেরুদেশে সবচেয়ে কম।
- যদিও পৃথিবী সর্বদাই নিয়মিতভাবে সূর্যালোক পায়, কিন্তু পৃথিবীর তাপমাত্রা মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকে। এর কারণ হল আইসোলেশন-এর দ্বারা যে তাপমাত্রা লাভ হয় তার সমপরিমাণ তাপমাত্রা বায়ুমণ্ডল ক্ষয় করে। এইভাবে প্রায় একই তাপমাত্রা বজায় রাখার প্রক্রিয়াকে হিট বাজেট বা উত্তাপ ভারসাম্য বলা হয়।
- যদইও পৃথিবী ও তার বায়ুমণ্ডল বিকিরণের ভারসাম্য বজায় রাখে, কিন্তু সেখানে অক্ষাংশগত তারতম্য হয়। বায়ু ও সামুদ্রিক স্রোতের মাধ্যমে নিম্ন অক্ষাংশ থেকে উচ্চ অক্ষাংশে সৌরশক্তি বা উত্তাপ স্থানান্তরিত হয়।