ভারতীয় মৃত্তিকা
ভারতের কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (আই. সি. এ. আর) ভারতের মৃত্তিকাকে প্রধান আটটি ভাগে ভাগ করেছে।
পলিমাটি (Alluvial Soil)
নদীর স্রোত থেকে বয়ে আসা উপকরণ থেকে পলিমাটির সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের জন্য পৃথিবীর উর্বর মৃত্তিকার মধ্যে অন্যতম, সাধারণত নাইট্রোজেন ও হিউমাস কম থাকে বলে সারের প্রয়োজন হয়।
পাঞ্জাব থেকে আসামের সমতলভূমি, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটের নর্মদা ও তাপ্তি উপত্যকা, মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশার মহানদী সংলগ্ন অঞ্চল, অন্ধ্রপ্রদেশের গোদাবরী সংলগ্ন অঞ্চল, তামিলনাড়ুর কাবেরী উপত্যকা অধ্যায় এই মৃত্তিকা দেখা যায়।
পাললিক মৃত্তিকা (পলি মাটি)- এটি ভারতের সবচেয়ে বেশি স্থান জুড়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ মৃত্তিকা।
পলিমাটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয় যেমন-খাদার (নতুন পলিমাটি) এবং ভাঙ্গার (পুরানো এবং কাঁকরযুক্ত পলিমাটি)
কৃষ্ণমৃত্তিকা
এই মৃত্তিকাকে রেগুর মৃত্তিকা নামে ডাকা হয়। এবং এটি তুলা চাষের জন্য আদর্শ। হাজার হাজার বছর আগে দাক্ষিণাত্যের মালভূমিতে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে যে লাভা সঞ্চিত হয়েছে তা জমা বেঁধে কঠিন হয়ে এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।
এতে লৌহ এবং অ্যালুমিনিয়াম-এর উপস্থিতির জন্য রং কালো হয়, প্রধানত দাক্ষিণাত্যের মালভূমি-মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, এই সকল অঞ্চলে কৃষ্ণমৃত্তিকা দেখা যায়।
এই মৃত্তিকায় তুলাচাষ ছাড়াও ডাল, তৈলবীজ, ফল ও সবজি, তামাক এবং ইক্ষু চাষের পক্ষেও খুব ভালো।
এই মৃত্তিকার জলধারণ করার ক্ষমতা বেশি।
ফসফরাস, নাইট্রোজেন এবং জৈব্য পদার্থ কম থাকে।
লোহিত মৃত্তিকা-
গ্র্যানাইট ইত্যাদি প্রাচীন স্ফটিকযুক্ত শিলাও বিশ্লেষিত হয়ে এবং লৌহ ও ম্যাগনেসিয়াম-এর মতো ভূমিসম্পন্ন শিলা থেকে এই মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়। লোহার ভাগ এই মাটিতে বেশি থাকায় এই মাটির এইরকম নাম হয়েছে।
প্রায় সমগ্র তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, ওড়িশার কিছু অংশ, বকারখন্ড এবং বুন্দেলখন্ডে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।
এই মাটিতে নাইট্রোজেন, হিউমাস এবং ফসফরাস কম থাকে কিন্তু পটাশ বেশি থাকে।
ধান, মিলেট, তামাক এবং সবজি উৎপাদনের পক্ষে উপযোগী।
ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা-
উচ্চ বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রা যুক্ত অঞ্চলে দেখা যায়।
পশ্চিমঘাটের কিছু অংশে, পূর্বঘাট, রাজমহল পাহাড়, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, কেরালা, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, তামিলনাড়ু ইত্যাদি।
নাইট্রোজেন ও খনিজ কম থাকে।
চা, কফি, রবার, সিঙ্কোনা, নারকেল ইত্যাদি চাষে সবচেয়ে উপযোগী। এছাড়া এই মাটিতে ধান এবং মিলেটও প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়।
বনভূমি ও পার্বত্য মৃত্তিকা
এই ধরনের মৃত্তিকা সাধারণত বনভূমি আবৃত পাহাড়ের ধাপে দেখা যায়। বনভূমি বৃদ্ধির ফলে জৈব পদার্থের পচন বা বিশ্লেষণ থেকে এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।
হিমালয়ের উপত্যকায় দেখা যায়। এছাড়া দক্ষিণের পাহাড়ে এবং উপদ্বীপীয় অঞ্চলে দেখা যায়।
হিউমাসে অতি সমৃদ্ধ কিন্তু এতে পটাশ, ফসফরাস ও অম্ল কম থাকে। এতে সারের প্রয়োজন হয়।
এতে চা, কফি, মশলা, ফল ইত্যাদি উৎপন্ন হয়।
শুষ্ক ও মরু মৃত্তিকা
রাজস্থানের একটি বড়ো অংশ, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কিছু অংশ যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০ সেমির কম সেই অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়। মরুভূমির অবস্থানের জন্য এই রকম প্রভাব পড়েছে।
এই অঞ্চল বালিতে আবৃত এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির অন্তরায়।
পলি মৃত্তিকার চেয়ে এই মৃত্তিকায় ফসফেট অনেক বেশি থাকে। এতে নাইট্রোজেন কম থাকে, কিন্তু নাইট্রেট সারের ব্যবহারের ফলে ঘাটতি মেটানো হয়। এইভাবে ফসফেট ও নাইট্রেট ব্যবহারের ফলে সিক্ত অঞ্চলে মৃত্তিকাকে উর্বর করে তোলা হয়।
ইন্দিরা গান্ধী ক্যানেল কমান্ড এলাকায় চাষের ধরণ পরিবর্তন মরু মৃত্তিকার উপযোগিতার একটি জলন্ত উদাহরণ।
লবণাক্ত ও শরীর মৃত্তিকা-
বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, ও মহারাষ্ট্রের শুষ্ক অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়। রে, এল্লোর, উষর ইত্যাদি বিভিন্ন নামে এই মৃত্তিকা পরিচিত।
লবণের আধিক্যের জন্য এই মৃত্তিকা অনুর্বর এবং চাষের অনুপযোগী।
পিট ও স্যাঁতসেঁতে মৃত্তিকা-
মাটিতে প্রচুর পরিমাণে জৈব পদার্থ থাকে ও আর্দ্র অঞ্চলে দেখা যায়। দ্রবণীয় ধারণ জৈব পদার্থের 10%-40% থাকে।
কেরালার কোয়াট্টাম ও আলাপ্পুঝা জেলায় পিট মৃত্তিকা পাওয়া যায়। একে করি বলা হয়।
স্যাঁতসেঁতে মৃত্তিকা উত্তর বিহার, ওড়িশার উপকূল, তামিলনাড়ু পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপ্রদেশের কিছু অংশে দেখা যায়।
মৃত্তিকা ক্ষয়-
পাহাড়ি ও শুষ্ক অঞ্চলে ঘটে।
কারণ-বনভূমির ঘাটতি, জমির অপব্যবহার, পশুচারণ, ইত্যাদির ফলে ঘটেছে।
প্রতিরোধ-বনসৃজন, সঠিক উপায়ে বিজ্ঞানসম্মত চাষ আবাদ।