logo Menu
বাংলা ইতিহাস ভূগোল সাধারণ জ্ঞান গণিত ভৌত বিজ্ঞান জীবন বিজ্ঞান ইংরেজি ভারতের সংবিধান অর্থনীতি শিশু মনস্তত্ত্ব পরিবেশ কম্পিউটার
     ❯   

বাংলা ব্যাকরণ চর্চা


বাংলা ব্যাকরণ

দল বিশ্লেষণ

দল মুক্তদল রুদ্ধদল ছন্দ জেনে রাখা ভালো

ধ্বনি পরিবর্তন

ধ্বনি পরিবর্তন স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ ব্যঞ্জনসংগতি(সমীভবন) স্বরসংগতি অপিনিহিতি অভিশ্রুতি জেনে রাখা ভালো

পদ ও পদের শ্রেণীবিভাগ

পদ বিশেষ্য পদ বিশেষণ পদ সর্বনাম পদ অব্যয় পদ ধাতু ও ক্রিয়াপদ মৌলিক ধাতু ও সাধিত ধাতু ক্রিয়ার কাল অতীত কাল বর্তমান কাল ভবিষ্যৎ কাল ক্রিয়ার ভাব সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া সকর্মক ও অসকর্মক ক্রিয়া জেনে রাখা ভালো

সন্ধি

বিসর্গ সন্ধি খাঁটি বাংলা সন্ধি

শব্দ গঠন

প্রত্যয় সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় বাংলা কৃৎ প্রত্যয় সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় জেনে রাখা ভালো

কারক ও বিভক্তি

বিভক্তি ও অনুসর্গ কারক কর্তৃ কারক কর্ম কারক করণ কারক নিমিত্ত কারক অপাদান কারক অধিকরণ কারক জেনে রাখা ভালো

উপসর্গ ও অনুসর্গ

উপসর্গ খাঁটি বাংলা উপসর্গ বিদেশি উপসর্গ অনুসর্গ জেনে রাখা ভালো

সমাস

সমাস কর্মধারয় সমাস তৎপুরুষ সমাস দ্বন্দ্ব সমাস দ্বিগু সমাস বহুব্রীহি সমাস নিত্য সমাস অব্যয়ীভাব সমাস অলোপ সমাস বাক্যাশ্রয়ী সমাস জেনে রাখা ভালো

বাক্য বিশ্লেষণ

বাক্য যোগ্যতা আকাঙ্ক্ষা আসক্তি

বাক্যের শ্রেণীবিভাগ

বাক্যের প্রকারভেদ সরলবাক্য জটিল বাক্য যৌগিক বাক্য নির্দেশক প্রশ্নবাচক অনুজ্ঞাবাচক প্রার্থনাবাচক সন্দেহবাচক আবেগবাচক শর্তসাপেক্ষ বাক্যান্তরকরণ জেনে রাখা ভালো

বাক্য পরিবর্তন

সরল বাক্য থেকে যৌগিক বাক্যে যৌগিক বাক্য থেকে সরল বাক্যে সরল বাক্য থেকে জটিল বাক্যে

সাধু ও চলিত রীতি

সাধু রীতি চলিত রীতি

লিঙ্গ

লিঙ্গ পুংলিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গ ক্লীব লিঙ্গ বিশেষণের স্ত্রী-লিঙ্গ লিঙ্গান্তর

বচন

একবচন বহুবচন

পুরুষ

উত্তম পুরুষ মধ্যম পুরুষ প্রথম পুরুষ

পদান্তর সাধন

পদান্তর বিশেষ্য থেকে বিশেষণ বিশেষণ থেকে বিশেষ্য

বাগ্‌ধারা ও প্রবাদ প্রবচন

বাগ্‌ধারা বাগ্‌ধারার প্রয়োগ

উপসর্গ


যে ভাষার নতুন শব্দ তৈরির শক্তি যত বেশি, সে ভাষা তত বেশি সমৃদ্ধ হতে পারে। এই গুণে সংস্কৃত ভাষা ছিল অপরিসীম শক্তিসম্পন্ন। বাংলা ভাষা মাতৃস্থানীয় সংস্কৃত থেকে এ গুণটি বহুল পরমাণে পেয়েছে। এই নতুন শব্দ তৈরির অন্যতম হাতিয়ার উপসর্গ। উপসর্গ এক ধরনের অর্থহীন (খুব কম সময়েই অর্থবান) বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি। এগুলি শব্দের আগে বসে শব্দের রূপগত এবং অর্থগত পরিবর্তন ঘটায়। নামটার মধ্যেও এই কাজের ইঙ্গিত আছে। উপ অর্থ সন্নিকট আর সর্গ অর্থ ত্যাগ। অর্থাৎ, ১. উপসর্গের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই। ২. এরা শব্দের আগে যুক্ত হয়। ৩. সংযোগের ফলে রূপ ও অর্থ সু-দিক থেকেই নতুন শব্দ তৈরি হয়। যে অর্থহীন বর্ণসমষ্টি কোনো ধাতু বা শব্দের আগে বসে তার রূপ ও অর্থের পরিবর্তন ঘটায়, তাকে উপসর্গ বলে। এবার উদাহরণ নেওয়া যাক। ⎷হৃ একটি ধাতু। এর অর্থ হরণ করা। এর সঙ্গে ঘঞ্‌ প্রত্যয়যোগে যে শব্দ গঠিত হয় তা বল ‘হার’। এই শব্দে উপ, আ, বি, সম্‌, পরি ইত্যাদি উপসর্গ যোগ করলে শব্দটির যে দ্বনিগত ও রূপগত পরিবর্তন ঘটে, তা নীচে দেখো- উপ + হার = উফার। আ + হার = আহার। খাওয়া। বি + হার = বিহার। ভ্রমণ করা। সম্‌ + হার = সংহার। হত্যা করা। পরি + হার = পরিহার। ত্যাগ করা। এই উদাহরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে একটি ধাতুঘটিত শব্দকে বিভিন্ন উপসর্গ কেমন করে রূপ ও অর্থ বদলে দেয়। আরও একটি উদাহরণ দেখো- ⎷ কৃ : আকার(মূর্তি), বেকার(বিগুণ), প্রকার(রকম), উপকার(আনুকুল্য), অপকার(ক্ষতি), অধিকার(দখল)। ⎷গম্‌ : আগমন(আশা), নির্গমন(বাইরে যাওয়া), অনুগমন(পিছনে পিছনে যাওয়া), প্রত্যাগমন(ফিরে আসা), উদ্‌গমন (ফুঁড়ে ওঠা)। ⎷চর : প্রচার(প্রকাশ), বিচার(মীমাংসা), আচার(রীতি), সঞ্চার(সংক্রমন), উপচার(উপকরণ)। ⎷ভূ : প্রভাব(প্রতাপ), পরাভাব(পরাজয়), বিভব(সম্পদ), অনুভব(বোধ), অভিনব(পরাজয়), উদ্ভব(উতপত্তি)। ⎷বদ্‌ : প্রবাদ(লোকশ্রুতি), অপবাদ(নিন্দা), সংবাদ(খবর), অনুবাদ(ভাষান্তর), বিবাদ(কলহ), প্রতিবাদ(প্রত্যুত্তর)। ⎷স্থা : প্রস্থান(চলে যাওয়া), সংস্থান(ব্যবস্থা), অবস্থা(দশা), অনুষ্ঠান(আয়োজন), প্রতিষ্ঠান(সংস্থা)। উপসর্গ ও প্রত্যয়ের পার্থক্য : উপসর্গ ও প্রত্যয়ের মধ্যে সমতা রয়েছে ব্যবহারের উদ্দেশ্যের দিক থেকে। দুই-ই ব্যবহার করা হয় নতুন শব্দ গঠনের উদ্দেশ্যে। অন্যভবে বললে, প্রত্যয় ও উপসর্গ শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তার অর্থের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। উভয়ের মধ্যে এটুকুই মিল। পার্থক্য প্রচুর। প্রথমত, উপসর্গ যুক্ত হয় শব্দের বা ধাতুর আদিতে। প্রত্যয় যোগ হয় শব্দের বা ধাতুর শেষে। দ্বিতীয়ত, উপসর্গটি যুক্ত হবার পরও স্পষ্ট চেনা যায়। কিন্তু প্রত্যয় শব্দের দ্বনি গঠনের পরিবর্তন আনতে পারে-বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আনে। তৃতীয়ত, একের বেশি উপসর্গ সর্বদাই একত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া একের বেশি প্রত্যয় একত্রে ব্যবহৃত হতে পারে না। একের বেশি উপসর্গের একত্রে ব্যবহার বিধি : একটি ধাতুর সঙ্গে একটিই মাত্র উপসর্গ যুক্ত হবে, তার বেশি হতে পারবে না এমন কোনো নিষেধ নেই। অনেক সময় পর পর অনেকগুল।ই উপসর্গও একসঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন- ব্যবহার>বি-অব- ⎷হৃ+ঘঞ্‌=ব্যবহার (দুটি উপসর্গ) । প্রত্যানুগমন>প্রতি-অনু-আ ⎷গম্‌+অনট্‌। (তিনটি উপসর্গ) । সমভিব্যাবহার>সম্‌-অভি-বি-আ- ⎷হৃ+ঘঞ্‌ (চারটি উপসর্গ)। অনুরূপ : অভ্যুদয়, দুঃসংবাদ, দুরপনেয়, প্রত্যুপকার, অত্যাচার, অধ্যবসায়, প্রত্যুত্তর, প্রণিপাত, অভিনিবেশ, নিঃসংকোচ, সম্প্রদান, অত্যুৎকৃষ্ট। লক্ষ্য করো, এই আলোচনায় আমরা শুধু ‘ধাতু’ ব্যবহার করেছি, ‘শব্দ’ কথাটি ব্যবহার করিনি। এর কারণ এই রীতি শুধু সংস্কৃতজ উপসর্গগুলির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। খাঁটি বাংলা ও বিদেশি উপসর্গগুলির ক্কখেত্রে এ নিয়ম খাটে না। বাংলা ও বিদেশি উপসর্গ একটির বেশি একত্রে ব্যবহৃত হয় না। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত উপসর্গগুলিকে তিন স্রেণিতে ভাগ করা যায়। ক. সংস্কৃতজ, খ. খাঁটি বাংলা, গ. বিদেশি। এবার একে একে এগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। ক. সংস্কৃতজ : সংস্কৃতজ উপসর্গের সংখ্যা ২০ টি। সেগুলি হল- প্র-পরা-অপ-সম-নি। অব-অনু-নির্‌(নিঃ), দুর্‌(দুঃ) বি। আধি-সু-উদ্‌-পরি-প্রতি। উপ-আ-অপি-অভি-অতি। যেহেতু গতি-উপসর্গগুলিও সংস্কৃতজ, তাই এগুলিও শুধু ধাতুর সংগেই ব্যবহৃত হয়। উপসর্গগতি উপসর্গ মিলিয়ে একাধিক একত্রে ব্যবহারেও বাধা নেই। এবারে উপসর্গ মোট সাত রকম অর্থ সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- প্র : এই উপসর্গ মোট সাত রকম অর্থ সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- ১. শ্রেষ্ঠত্ব : প্রখ্যাত, প্রগতি, প্রতাপ, প্রণত, প্রকৃষ্ট। ২. বেশি মাত্রায় : প্রগাঢ়, প্রচন্ড, প্রকোপ, প্রসক্তি, প্রখর, প্রকট। ৩. সূচনা মাত্র : প্রদোষ, প্রবেশ, প্রজা। ৪. দক্ষ : প্রবীণ, প্রবণতা। ৫. বিপরীত ভাব : প্রস্থান, প্রবাসী, প্রসাধন। ৬. পূর্ববর্তী : প্রপিতামহ। ৭. পরবর্তী : প্রশিষ্য। পরা : অন্তত তিন রকম অর্থ সৃষ্টি হয়। যেমন- ১. বেশি মাত্রায় : পরাক্রম, পরাকাষ্ঠা। ২. বিপরীত ভাব : পরাজয়, পরিবর্তন, পরাঙ্মুখ। ৩. সম্যক ভাব : পরামর্শ। অপ : তিন রকম অর্থে ‘অপ’ উপসর্গটি ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন- ১. খারাপ বা কুৎসিত অর্থে : অপকর্ম, অপবাদ, অপকার, অপমান। ২. স্থানান্তকরণ অর্থে : অপনয়ন, অপহরণ, অপসৃত। ৩. বিপরীত অর্থে : অপচয়, অপজ্ঞান, অপযশ, অপকীর্তি, অপকার, অপলাপ। সম্‌ : মূলত চার রকম অর্থে ব্যবহৃত হয়। ১. সম্যক অর্থে : সমাদর সমালোচনা, সংকীর্তন, সমাগত, সমীক্ষা, সমাকুল, সমুচিত, সম্প্রদান সমীক্ষা, সংস্কার, সংখ্যা। ২. একতা অর্থে : সংকলন, সংমিশ্রণ, সংহিতা, সমাবর্তন, সম্মোহন, সংসর্গ, সংস্রব, সমভিব্যাহার। ৩. ‘অভিমুখে’ অর্থে : সম্মুখে, সমক্ষে। ৪. ‘একই’ অর্থে : সমকক্ষ, সমকাল, সমতুল্য, সমপ্রাণ। নি : ১. অতিশয় অর্থে : নিগূঢ়, নিতল, নিদারুণ, নিত্যান্ত, নিরতিশয়। ২. সম্যক অর্থে : নিকষিত, নিক্ষেপ, নিঝুম, নিধেয়। ৩. নিষেধ অর্থে : নিবৃত্ত, নিষেধ, নিবারণ। ৪. নিন্দা অর্থে : নিকৃষ্ট, নিগ্রহ। ৫. অভাব অর্থে : নিবাত। ৬. বিন্যাস অর্থে : নিবেশ, অভিনিবেশ। ৭. বহির্গত অর্থে : নিঃস্বাস। অব : ১. ‘হীন’ অর্থে : অবনতি, অবজ্ঞাত, অবজ্ঞা। ২. ‘নিশ্চয়’ অর্থে : অবধান, অবতার, অবক্ষয়, অবধারণ, অবশেষ, অবলোকন, অবস্থান, অবসান। ৩. নিম্নগামিতা অর্থে : অবতরণ, অবগাহণ, অবরোহণ, অবনত, অবদমন। ৪. ‘বিচ্ছেদ’ অর্থে : ব্যবধান, অবকাশ, অবচ্ছেদ। অনু : ‘পশ্চাৎ’ অর্থ প্রধান। এ ছাড়াও নানা অর্থ হয়। ১. ‘পশ্চাৎ’ অর্থে : অনুক্রম, অনুগ, অনুজ, অনুচর, অনুধ্যান, অনুরাগ, অনুজীবী, অনুতপ্ত, অনুদৈর্ঘ্য, অনুধাবন, অনুনয়, অনুনাদ, অনুশিষ্য। ২. বারবার অর্থে : অনুক্ষণ, অনুদিন, অনুপ্রাস, অনুশীলন। ৩. অভুমুখে অর্থে : অনুকূল, অনুদিক, অনুসরণ। ৪. সম্যক অর্থে : অনুকৃত, অনুগত, অনুরূপ, অনুমোদন। ৫. অভ্যন্তর অর্থে : অনুপ্রবেশ। ৬. সদৃশ অর্থে : অনুকম্পা, অনুকরণ, অনুকার। নির : প্রধান অর্থ নেই। অন্য বহু অর্থেও এই উপসর্গের ব্যবহার হয়। ১. নেই অর্থে : নিশ্ছিদ্র, নির্বিংশ, নিস্তরঙ্গ, নিরুপমা, নির্বাক, নির্জর, নিরানন্দ, নিরাহার, নিবেদন, নিরবলম্বন, নিপরাধ, নিভিমান, নির্মল, নির্জিব, নির্বিশেষ, নিরক্ষর, নিরঙ্কুশ, নিরপত্য, নিরন্ন, নিরবধি। ২. সম্যক অর্থে : নির্ণয়, নির্ধারণ, নিশ্চুপ, নির্মূল, নির্বাণ, নির্ঝর, নির্দ্বন্দ্ব, নিরীক্ষণ। ৩. বহির্গত অর্থে : নির্গত, নিশ্বাস, নির্মুক্ত, নির্গম। ৪. অতিরিক্ত অর্থে : নিরতিশয়, নিরন্তর, নিরবচ্ছিন্ন। ৫. শেষ অর্থে : নিরক্ষর, নিরবশেষ, নিরাকরণ। দুঃ (দুর্‌) : খারাপ ও দুঃখসাধ্য প্রধান অর্থ। এছাড়াও নানা অর্থ আছে। ১. খারাপ অর্থে : দুঃশীল, দুঃসময়, দুস্থ, দুঃস্বপ্ন, দুঃখ, দুরদৃষ্ট, দুর্নাম, দুরন্বয়, দুরভিসন্ধি, দুরাত্মা, দুরদৃষ্ট, দুশ্চরিত্র, দুর্বুদ্ধি, দুর্নীতি, দুরাশয়। ২. দুঃখসাধ্য অর্থে : দুরতিক্রম্য, দুরত্যয়, দুরধিগম, দুরধ্যয়, দুরপনেয়, দুরবগম্য, দুর্জ্ঞেয়, দুরাকাঙ্খা, দুর্গম, দুর্গ, দুষ্কর, দুষ্প্রাপ্য, দুঃসাধ্য, দুর্বিষহ, দুর্ভর, দুশ্চিকিৎস্য, দুষ্প্রবেশ্য, দুস্তর। ৩. অভাব অর্থে : দুঃশাসন, দুরাচার, দুর্ভিক্ষ, দুর্বল, দুর্বিনয়। ৪. প্রশংসা অর্থে : দুঃসাহস, দুর্জয়, দুর্বার, দুর্মদ, দুর্মর, দুর্দান্ত। ৫. নাই অর্থে : দুরন্ত। বি : বিশেষ ও বিপরীত অর্থেই ‘বি’ উপসর্গের বেশি প্রয়োগ হয়। অন্য নানা অর্থেও হয়ে থাকে। ১. বিশেষ অর্থে : বিখ্যাত, বিকট, বিকশিত, বিকিরণ, বিক্রম, বিক্ষত, বিগ্রহ, বিঘ্ন, বিচ্ছেদ, বিজ্ঞ, বিজ্ঞান, বিজ্ঞাপন, বিতর্ক, বিদগ্ধ, বিচূর্ণ, বিদিত, বিদ্যুৎ, বিদ্রোহ, বিনত, বিন্যাস, বিনীত, বিবর্তন। ২. বিপরীত অর্থে : বিপক্ষ, বিকর্ষণ, বিকল্প, বিক্রয়, বিচেতন, বিজোড়, বিধর্মী, বিপথ, বিয়োগ, বক্রিতি, বিসর্জন, বিবাদ। ৩. অভাব অর্থে : বইগুণ, বিকল, বিকর্ণ, বিকার, বিজন, বিজাতি, বিতৃষ্ণা, বিদেহ, বিফল, বিবর্ণ, বিশ্রান্ত, বিনিদ্র। ৪. অতিরিক্ত অর্থে : বিকম্পিত, বিচক্ষণ, বিচঞ্চল, বিচিত্র, বিত্রস্ত। অধি : আধিপত্য ও আধিক্য প্রধান অর্থ। এছাড়াও নানা অর্থ হয়। ১. আধিপত্য : অধিকরণ, অধিকার, অধিগত, অধিগম্য, অধিপতি, অধিষ্ঠান, অধীন, অধীশ। ২. ঊর্ধ্বস্থিতি : অধিত্যকা, অধিশায়িত, অধিরোহণ। ৩. আধিক্য : অধিহার, অধ্যয়ন, অধ্যবসায়, অধ্যশন, অধ্যাদেশ(Ordinance)। ৪. বিশিষ্ট: অধিবক্তা, অধিরাজ। ৫. প্রায় অর্থে : অধিবৃত্ত, অধ্যায়। সু : প্রথম দুটি অর্থে বেশি ব্যবহার হয়। ১. ‘সুন্দর’ অর্থে : সুনাসা, সুবেশা, সুজলা, সুগ্রীব, সুচারু, সুনয়, সুকন্ঠ, সুকর্ম, সুকীর্তি, সুখ্যাতি, সুগত, সুগন্ধ, সুঘোষ, সুধাম, সুতনু, সুতল, সুদৃশ্য, সুপথ, সুপুরুষ, সুযোগ, সুসময়। ২. ‘বেশি’ অর্থে : সুপীত, সুকাতর, সুকুমার, সুকৃষ্ণ, সুগুপ্ত, সুচির, সুতিক্ত, সুতীক্ষ্ণ, সুতোষ, সুদক্ষিণ, সুদুষ্কর, সুদৃঢ়, সুধীর, সুনীল, সুপ্রতুল, সুকঠিন। ৩. অনায়াস অর্থে : সুকর, সুগম, সুজয়, সুদম, সুনাব্য, সুপাঠ্য, সুসাধ্য। ৪. সম্যক অর্থে : সুকৃতি, সুযোগ, সুজন, সুতপ্ত, সুধারা, সুধী, সুনিদ্রা, সুনীত, সুপক্ক, সুপ্রযুক্ত, সুদক্ষ। উদ্‌ : অতিশয় ও অতিক্রান্ত অর্থে প্রধানত ব্যবহৃত হয়। ১. অতিশয় অর্থে : উৎকৃষ্ট, উৎকর্ষ, উত্তাল, উত্তুঙ্গ, উৎফুল্ল, উদ্দীপ্ত, উৎকন্ঠিত, উত্তপ্ত, উৎত্রাস, উৎপিপাসু। ২. ঊর্ধ্ব অর্থে : উত্থান, ইত্তান, ইত্তোলন, উত্থিত, উৎপ্রাস। ৩. বিপরীত অর্থে : উৎক্রম, উদ্গমন, উত্থিত, উৎপ্রাস। ৪. উৎক্ষিপ্ত অর্থে : উৎকর, উৎক্ষেপণ, উৎপাটন, উৎখাত। ৫. অতিক্রান্ত অর্থে : উদ্বেল, উত্তীর্ণ, উৎকলিত, উৎকোচ, উত্ত্যক্ত, উল্লঙ্ঘন, উচ্ছল, উত্তল। পরি : ১. ‘সম্যকরূপে’ অর্থে : পরিবর্তন, পরিকীর্ণ, পরিগণিত, পরিখ্যাত, পরিগ্রহ, পরিতাপ, পরিদৃষ্ট, পরিপৃক্ত, পরিপ্লব, পরিবর্জন, পরিভাষ্য, পরিভোগ, পরিসমাপ্তি, পরিস্ফুট, পরিপূর্ণ, পরিপক্ক, পরিতুষ্ট। ২. ‘বিপরীত’ অর্থে : পরিপন্থী, পরিবাদ। ৩. অতিশয় অর্থে : পরিক্লিষ্ট, পরিপুষ্ট, পরিম্লান, পরিশুদ্ধ, পরিশ্রম। ৪. ব্যাপ্তি অর্থে : পরিকীর্ণ, পরিক্রম, পরিবৃত, পরিবেষ্টন, পরিব্রজ্যা, পরিভ্রমণ, পরিসর। প্রতি : অনুরূপ, বিপরীত ও বীপ্সা (বারবার) অর্থে বেশি ব্যবহৃত হয়। ১. অনুরূপ অর্থে : প্রতিমূর্তি, প্রতিবিম্ব, প্রতিকায়, প্রতিদান, প্রতিধ্বনি, প্রতিনাদ, প্রতিনিধি, প্রতিপণ, প্রতিফলন, প্রতিবস্তু, প্রতিবেদন, প্রতিম, প্রতিরূপ, প্রতিলিপি, প্রতিশব্দ। ২. বারবার(বীপ্সা) অর্থে : প্রতিক্ষণ, প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত, (পদে-পদে), প্রতিপাত্র, প্রত্যব্দ, প্রত্যহ, প্রত্যেক। ৩. বিপরীত অর্থে : প্রতিকার, প্রতিকৃত, প্রতিঘাত, প্রতিনায়ক, প্রতিপক্ষ, প্রতিবক্তব্য, প্রতিবন্ধ, প্রতিবাক্‌, প্রতিবীর/যোদ্ধা/মল্ল, প্রতিলোম, প্রতিস্পর্ধা, প্রতিস্রোত, প্রত্যুত্তর, প্রতিদ্বন্দ্বী। ৪. দিক বা সামীপ্য অর্থে : প্রতিকূল, প্রতিকন্ঠ, প্রতীচী, প্রত্যক্ষ। ৫. ‘অংশ’ বা ‘ছোটো’ অর্থে : প্রতিজিহ্বা, প্রত্যঙ্গ, প্রত্যন্ত। ৬. সম্যক বা অতিরিক্ত অর্থে : প্রতিভা, প্রতিশয়ন, প্রতিসিদ্ধ, প্রতিজ্ঞা, প্রতিষ্ঠা, প্রতিহিংসা, প্রতীত, প্রত্যয়, প্রত্যুষ, প্রতিপালন, প্রত্যুদ্‌গমন। অভি : একাধিক অর্থে প্রযুক্ত হয়। নীচে প্রধানগুলি দেওয়া হল- ১. দিক বা সামীপ্য অর্থে : অভিক্রম, অভিগত, অভিগামী, অভিপ্রায়, অভিমুখ, অভ্যাগত, অভিসার, অভিযান। ২. সম্যক অর্থে : অভিনিবেশ, অভিগৃহীত, অভিজাত, অভিজ্ঞ, অভিধা, অভিনন্দন, অভিনয়, অভিরুচি, অভিহিত, অভ্যুদয়, অভ্যুত্থান। ৩. বিপরীত বা বিরুদ্ধ অর্থে : অভিচার, অভিবাদ, অভিযোগ, অভিভব(পরাজয় বা ভাবাবেশ)। ৪. অতিরিক্ত অর্থে : অভিকম্পন, অভিতপ্ত, অভিনব, অভিবর্ষণ। অপি : এই উপসর্গগঠিত শব্দ বাংলায় কম ব্যবহার করা হয়। ১. অল্পত্ব অর্থে : অপিসিঞ্চিত। ২. সম্যক অর্থে : অপিধান (আচ্ছাদন), অপিনদ্ধ। উপ : ছোটো বা অপ্রধান বোঝাতে ‘উপ’ উপসর্গের ব্যবহার হয়। সামীপ্য ও অন্যান্য অর্থেও ব্যবহার আছে। ১. দিক বা নিকট অর্থে : উপকন্ঠ, উপকূল, উপতীর্থ, উপনগরী, উপত্যকা, উপধান, উপনীত, উপন্যস্ত, উপযোচক, উপশ্রুত, উপসন্ন, উপস্থ, উপস্থিত, উপাগত, উপনয়ন। ২. ছোটো বা অপ্রধান অর্থে : উপকথা, উপচ্ছায়া, উপজিহ্বা, উপতন্ত্র, উপক্ষেত্র, উপপুরাণ, উপবন, উপভাষা, উপমন্ত্রী, উপমাতা (ধাত্রী), উপরূপক, উপশিষ্য, উপাচার্য। ৩. সম্যক অর্থে : উপকরণ, উপকার, উপকৃত, উপজাত, উপবিষ্ট, উপযুক্ত, উপযোগিতা, উপস্বত্ব, উপাসক, উৎপত্তি, উপন্যাস। ৪. হীন বোঝাতে : উপধর্ম, উপধাতু, উপপতি, উপপত্নী, উপবিদ্যা, উপরত্ন, উপসাগর, উপদেবতা, উপনেত্র। ৫. অতিশয় বোঝাতে : উপপীড়ন, উপরোধ, উপলক্ষণ। ৬. সদৃশ বা তুল্য অর্থে : উপপর্বত, উপবিষ, উপদ্বীপ, উপেন্দ্র, উপভোগ, উপবন। ৭. থেকে জাত বা মিলিত : উপনদী, উপবৃক্ষ, উপশাখা, উপশিরা। আ : নানা অর্থে প্রযুক্ত হয়। তার মধ্যে পর্যন্ত, সম্যক ও ঈষৎ অর্থ প্রধান। ১. পর্যন্ত বা ব্যাপ্ত অর্থে : আকর্ণ, আপাদ, আপাদমস্তক, আপামর, আপ্রাণ, আবাল্য, আভূমি, আমরণ, আমূল, আসমুদ্র, আমৃত্যু, আজানু, আকন্ঠ, আবক্ষ। ২. সম্যক অর্থে : আকীর্ণ, আখ্যা, আচ্ছন্ন, আকাঙ্কা, আকর্ষণ, আসত্তি, আসক্তি, আবন্টন, আপীত। ৩. ঈষৎ অর্থে : আকম্পন, আকুঞ্চন, আচঞ্চল, আপিঙ্গল, আমধুর, আশঙ্কা, আসিদ্ধ, আহত, আপক্ক, আভাস, আনত, আতপ্ত, আনীল, আপীত। ৪. বিপরীত অর্থে : আকাটা, আগত, আচালা, আছোলা, আঢাকা, আনাড়ি, আপাকা, আপত্তি। ৫. খারাপ অর্থে : আকাল, আগাছা, আঘাটা, আফলা, আনুনা। ৬. অতি অর্থে : আকুল, আপ্লাবন, আশ্রুত, আরক্ত। অতি: ১. অতিক্রান্ত অর্থে : অতিশয় অতিক্রম, অতিক্রান্ত, অতিপ্রাকৃত, অতিমাত্রা, অতীন্দ্রিয়, অত্যাচার, অত্যুৎপাদন, ২. অতিশয় অর্থে : অতিকায়, অতিতপ্ত, অতিদর্প, অতিপান, অতিবল, অতিভক্তি, অতিভোজ, অতিরঞ্জিত, অতিরিক্ত, অত্যাধিক, অত্যন্ত, অত্যল্প, অত্যহিত, অত্যাবশ্যক, অত্যাসক্ত, অত্যুক্তি, অত্যুগ্র, অত্যুজ্জ্বল, অত্যুৎকৃষ্ট, অত্যুষ্ণ, অতিবৃষ্টি। ৩. উৎকৃষ্ট অর্থে : অতিমানব। সংস্কৃত ভাষায় কুড়িটি উপসর্গই বাংলায় এসেছে। তবে এদের মধ্যে মাত্র প্রতি ও অতি উপসর্গ দুটিরই স্বতন্ত্র অব্যয়রূপে ব্যবহার হয়। যেমন- তব আচরণে সন্দেহ জাগে অতি- আড়ে আড়ে তুমি ঘন ঘন চাও ছাগ শিশুটির প্রতি। এই কুড়িটি উপসর্গ সম্পর্কে আরও দুটি কথা মনে রাখতে হবে। ১. প্রত্যেক উপসর্গের দ্বারা যেমন একাধিক অর্থ সৃষ্টি হয়, ঠিক তেমনি একই অর্থে বিভিন্ন উপসর্গের ব্যবহার হয়। ২. প্রত্যেক উপসর্গ যেমন স্বতন্ত্রভাবে ব্যবহৃত হয়, ঠিক তেমনি একের বেশি উপসর্গও একত্রে ব্যবহৃত হয়। যেমন- প্রত্যুপ্রকার (প্রতি + উপ)। অত্যাচার (অতি + আ)। অভিনিবেশ (অভি + নি)। নিঃসংকোচ (নিঃ + সং)। সমালোচনা (সম্‌ + আ)। সমভিব্যাহার (সম + অভি + বি + আ)। সংস্কৃতে আরও কতকগুলি অব্যয় উপসর্গের মতো ব্যবহৃত হয়। এদের গতি বা গতিউপসর্গ বলে। নীচে এগুলির ব্যবহার ও অর্থ দেওয়া হল- আবিঃ (আবিস্‌) : প্রকাশ্য, প্রস্ফুটিত বা দৃষ্টিগোচর হওয়া।। আবির্ভাব, আবিষ্কার, আবিষ্কর্তা, আবিষ্করণ, আবিষ্কৃত, আবির্ভবন, আবিষ্কৃয়া। অন্তঃ (অন্তর) : মধ্যে, প্রান্তে।। অন্তর্গত, অন্তগূঢ়, অন্তর্বর্তী, অন্তর্ভূক্ত। অন্তঃস্থিত, অন্তঃস্থ, অন্তরাত্মা, অন্তঃপুর, অন্তঃপাতী, অন্তঃপ্রকৃতি, অন্তঃশীলা, অন্তঃশূন্য, অন্তঃসত্ত্বা, অন্তঃসলিলা, অন্তরীক্ষ, অন্তর্দাহ, অন্তরঙ্গ। বহিঃ (বহিস্‌) : বাইরে, অনাবৃত্ত দেশে, পরে না বিপরীতে।। বহির্দেশ, বহিরঙ্গ, বহিরিন্দ্রিয়, বহির্গমন, বহির্জগত, বহির্বাস, বহির্মুখ, বহিশ্চর, বহিষ্করণ, বহিস্থ, বহির্ণয়ন, বহির্বাটি, বহির্বাণিজ্য, বহির্বিশ্ব। প্রাদুঃ (প্রাদুস্‌) : প্রকাশ্য, সভাব্য বা প্রবৃত্তি অর্থে ব্যবহৃত।। প্রাদুর্ভাব। তিরঃ (তিরস্‌) : বাঁকা, আড়াআড়িভাবে বা অ-প্রকাশ্য হওয়া। তিরোভাব, তিরোধান, তিরোহিত, তিরস্করণী, তিরস্কার, তিরস্কৃত। পুরঃ (পুরস্‌) : সমক্ষে, সামনে ।। পুরস্কার, পুরোহিত, পুরোধা, পুরঃসর, পুরঃফল, পুরস্করণ। অলম।। সম্যক অর্থে : অলংকার, অলংকর্তা, অলংকরণ, অলংকৃত, অলংকৃতি। সাক্ষাৎ।। প্রত্যক্ষ, তুল্য অর্থে : সাক্ষাৎকার, সাক্ষাৎলাভ, সাক্ষাদ্দশর্ন।