সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়
ষ্ণ, ষ্ণ্য, ষ্ণেয়, ষ্ণায়ন : অপত্য অর্থে এই প্রত্যয়গুলি ব্যবহার হয়। যেমন- মনু + ষ্ণ = মানব। অর্থ-মনুর পুত্র। বা দিতি + ষ্ণ্য = দৈত্য। অর্থ-দিতির পুত্র। অনুরূপ : দনু = দানব। চণক _ ষ্ণ্য = চাণক্য। দশরথ + ষ্ণি = দাশরথি। সুমিত্রা + ষ্ণি = সৌমিত্রি। কুন্তী + ষ্ণেয় = কৌন্তেয়। গঙ্গা + ষ্ণেয় = গাঙ্গেয়। ভগিনী + ষ্ণেয় = ভাগিনেয়। দ্বীপ + ষ্ণায়ন = দ্বৈপায়ন। ষ্ণ, ষ্ণ্য, ষ্ণিক, ষ্ণীয় : আপাত অর্থে এই প্রত্যয়গুলি যে শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়, প্রত্যয়ান্ত শব্দটি “ওই সম্বন্ধীয়” অর্থ বোঝায়। যেমন- পৃথিবী + ষ্ণ = পার্থিব। অর্থ ‘পৃথিবী সম্বন্ধিয়’। অনুরূপ : দেব-দৈব। ঋষি-আর্য। পশু-পাশব। শরৎ-শারদীয়। ভারত-ভারতীয়। ভবৎ-ভবদীয়। ষ্ণ, ষ্ণ্য, ষ্ণিক, ষ্ণেয় : এই প্রত্যয় ‘ভক্ত বা উপাসক’ অর্থেও প্রযুক্ত হয়। যেমন-সূর্য + ষ্ণ = সৌর। অনুরূপ : বিষ্ণু-বৈষ্ণব। শিব-শৈব। শক্তি-শাক্ত। বুদ্ধ-বৌদ্ধ। ব্রহ্ম-ব্রাহ্ম। জিন-জৈন। গণপতি-গাণপত্য। পুতুল-পৌত্তলিক। অতিথি + ষ্ণেয় = আতিথেয়। ষ্ণ : এই প্রত্যয় ‘যা দিয়ে প্রস্তুত’ এবং ‘যেখান থেকে আগত’ অর্থে প্রযুক্ত হয়। যথা-তিল + ষ্ণ = তৈল। অর্থ : যা তিল দ্বরা প্রস্তুত। অনুরূপ : হিম-হৈম। পয়স্-পায়স। মিথিলা + ষ্ণ + মৈথিলি। মগধ-মাগধ। ইত : জাত বা যুক্ত অর্থে বিশেষ্য পদের সঙ্গে এই প্রত্যয় যোগ করে বিশেষণ পদ গঠন করা হয়। প্রত্যয়টির কোন অংশ ‘ইৎ’ হয় না। যেমন- অঙ্কুর + ইত = অঙ্কুরিত। পল্লব > পল্লবিত। কল্লোল > কল্লোলিত। মুকুল > মুকুলিত। পুলক > পুলকিত। ত্বরা > ত্বরিত। কলঙ্ক > কলঙ্কিত। গর্ব > গর্বিত। অনুরূপ : বিঘ্নিত, আতঙ্কিত, কলুষিত, বিতর্কিত, চিত্রিত, মর্মরিত, কন্টকিত, কবলিত। ইমন্ : বিশেষণ পদের ভাব বোঝাতে এই প্রত্যয় ব্যবহার করা হয়। যেমন গুরু + ইমন্ = গরিমন্, তা থেকে গরিমা। অনুরূপ : লঘু > লঘিমা। মহৎ > মহিমা। দীর্ঘ > দ্রাঘিমা। তনু > তনিমা। মধুর > মধুরিমা। বহু > ভূমা। ‘আছে’ অর্থে নীচের সব কটি প্রত্যয় ব্যবহার করা হয়- ইন্ : ধন-ধনিন্ (ধনী)। সুখ-সুখীন্ (সুখী)। জ্ঞান-জ্ঞানিন (জ্ঞানী)। বিন : মেধা-মেধাবিন্ (মেধাবী)। যশ-যশস্বী। তপস্-তপস্বী। মতুপ : মধু-মধুমান্। শ্রী-শ্রীমান্। বুদ্ধি-বুদ্ধিমান। বতুপ্ : ধন-ধনবান্। শালিন্ : বিত্ত-বিত্তশালী। ধন-ধনশালী। সমৃদ্ধিশালী, সম্ভ্রমশালী। ল : মাংস-মাংসল। শ্যাম-শ্যামল। শীত-শীতল। স্নেহল, মঞ্জুল। কুশল, চিত্রল, মৃদুল, শ্মশ্রুল, পেশল, ধুমল। ইল : পঙ্ক-পঙ্কিল। জটা-জটিল। ফেন-ফেনিল। আলু : দয়া-দয়ালু। নিদ্রা-নিদ্রালু। ময়ট্ : এই প্রত্যয়ের ‘ট’ লোপ পায়, ‘ময়’ থাকে। এর দ্বারা বিকার, ব্যাপ্তি ও স্বরূপ অর্থ বোঝায়। যেমন- স্বর্ণ + ময়ট্ = স্বর্ণময়। (অর্থ, স্বর্ণ দ্বারা গঠিত)। জল + ময়ট্ = জলময়, অর্থ : জলের দ্বারা ব্যাপ্ত। চিৎ + ময়ট্ = চিন্ময়, (স্বরূপ অর্থে)। র : শিখর (শেখর), মধুর, মুখর, ঊষর, পান্ডুর, নগর। তর, তম, ইয়স্, ইষ্ট : অতিশয় অর্থে এই প্রত্যয়গুলির ব্যবহার হয়। এ সম্পর্কে ‘বিশেষণ’ –এর আলোচনায় আগেই পড়েছে। চ্বি : পূর্বে ছিল না পরে হয়েছে অর্থে চ্বি প্রত্যয় হয়। যেমন-বশ্ + চ্বি + ভূ + ক্ত = বশীভূত। অনুরূপ : ঘনীভূত, কেন্দ্রীভূত, মন্দীভূত, অশ্মীভূত, প্রস্তরীভূত, বশীভূত, ভস্ম-চ্বি + ভূ + ক্ত = ভস্মীভূত। শিলীভূত, শ্রোতৃ-চ্বি + ভূ + অনট্ = শ্রোত্রীভবন। লঘু-চ্বি + কৃ + অনট্ = লঘুকরণ। অনুরূপ : বশীকরণ, দূরীকরণ, আর্দ্রীকরণ, জাতীয়করণ, নবীকরণ, সরলীকরণ, নিয়োগীকরণ, স্পষ্টীকরণ। কল্প : প্রায় বা সদৃশ অর্থে : যথা-পিতৃ + কল্প = পিতৃকল্প। ঋষিকল্প। মৃতকল্প। বিদ্বৎকল্প। সাৎ : পরিণত বা অর্পণ অর্থে সাৎ প্রত্যয় ব্যবহার হয়। ধূলি + সাৎ = ধূলিসাৎ। উদরসাৎ। অগ্নিসাৎ। ভূমিসাৎ, ভস্মসাৎ, আত্মসাৎ। ত্ব, তা : ভাব অর্থে এই দুই প্রত্যয় ব্যবহার হয়। যেমন-প্রভু + ত্ব = প্রভুত্ব। গুরু-গুরুত্ব। মহত-মহত্ত্ব। মনুষ্য-মনুষ্যত্ব। রাজ-রাজত্ব। ব্যক্তি-ব্যক্তিত্ব। মধুর + তা = মধুরতা। সাধু-সাধুতা। বাচাল-বাচালতা। লঘু-লঘুতা। সৎ-সততা।