অধিকরণ কারক
ক্রিয়ার আধার অর্থাৎ স্থান, অবস্থা, বিষয় বা সময়কে অধিকরণ বলে। ক্রিয়ার সঙ্গে অধিকরণ সম্বন্ধযুক্ত পদকে অধিকরণ কারক বলে। যথা : বনে নানা জীবজন্তু থাকে। শুভংকর অঙ্কে কাঁচা। অধিকরণ কারক প্রধানত তিন শ্রেণির : (১) স্থানাধিকরণ বা আধারাধিকরণ (২) কালাধিকরণ (৩) বিষয়ধিকরণ বা ভাবাধিকরণ। (১) স্থানাধিকরণ : ক্রিয়া যে স্থানে অনুষ্ঠিত হয়, তাকে স্থানাধিকরণ বলা হয়। স্থানাধিকরণ তিন প্রকার- (ক) একদেশবোধক (খ) ব্যাপ্তিসূচক (গ) সামীপ্যসূচক অর্থাৎ নিকটত্ববোধক। (ক) একদেশবোধক : কোনো দেশের এক অংশে অবস্থিত এমন বোঝালে একদেশবোধক বা ঐকদেশিক স্থানাধিকরণ হয়। যথা-জঙ্গলে সাপ থাকে। (অর্থাৎ সমস্ত জঙ্গলে নয়, জঙ্গলের এক অংশে)। আমার মামা মহারাষ্ট্রে থাকেন। (অর্থাৎ মহারাষ্ট্রের এক অংশে)। (খ) ব্যাপ্তিসূচক : কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় নয়, বস্তুর সমগ্র স্থানে ব্যাপ্ত হয়ে আছে অর্থাৎ জুড়ে রয়েছে এই রকম বোঝালে সেটি ব্যাপ্তিসূচক বা অভিব্যাপক অধিকরণ হয়। যথা- ফলটিতে রস আছে। বাতাসে অক্সিজেন আছে। সরষেতে তেল আছে। (প্রথম বাক্যে বোঝাচ্ছে যে, ফলটির সর্বত্র রস আছে। দ্বিতীয় বাক্যে বোঝাচ্ছে যে, বায়ুর সর্বত্র অক্সিজেন আছে। ত্ররীতীয় বাক্যে বোঝাচ্ছে, গোটা সরষের মধ্যেই তেল আছে।) (গ) সামীপ্যসূচক : সমীপে অর্থাৎ নিকটে বোঝালে সামীপ্যসূচক অধিকরণ হয়। যথা- গাড়িটা গেটে অপেক্ষা করছে। (অর্থাৎ গেটের উপরে নয়, গেটের কাছে।) জানালায় দাঁড়ালে নদী দেখা যেত। (২) কালাধিকরণ : যে সময়ে ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় সেই সময়বাচক পদটি কালাধিকরণ হয়। যেমন-সন্ধ্যায় সকলে ফিরে এল। কালাধিকরণ দু রকম : (ক) ক্ষণসূচক (খ) ব্যাপ্তিসূচক। (ক) ক্ষণসূচক : যদি নির্দিষ্ট সময়ে বা অল্প সময়ে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তবে সেই সময়সূচক পদটি ক্ষণসূচক অধিকরণ হয়। যথা-সন্ধ্যা সাতটায় উঠে পড়লাম। বিকালবেলায় সবাই চলে গেল। (খ) ব্যাপ্তিসূচক : যদি দীর্ঘ সময় জুড়ে ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়, অর্থাৎ ক্রিয়া অনুষ্ঠানের কাল যদি ব্যাপ্ত হয়, তাহলে সেই কালবাচক পদটি ব্যাপ্তিসূচক অধিকরণ হয়। যথা- গ্রীষ্মকালে সমগ্র প্রকৃতি রুক্ষ,শুষ্ক হয়ে ওঠে। ‘শরতে আজ কোন্ অতিথি এল প্রাণের দ্বারে’। (রবীন্দ্রনাথ) আশ্বিনে বাঙালিরা পূজার উতসবে মেতে ওঠে। (৩) বিষয়ধিকরণ : যে বিষয়ে বা যে মনোভাবে ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়, তাকে বিষয়ধিকরণ বলে। যথা- শ্যামলী ইংরেজিতে কাঁচা, কিন্তু বাংলায় ভালো। ভদ্রলোক কবিতায় বিশেষ পটু। দৃঢ়চরিত্র ব্যাক্তি দুঃখে কাতর হন না। এই সুসংবাদে সকলে আনন্দে উৎফুল্ল হলেন। অধিকরণ কারকে বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগ : ১. এ বিভক্তি : পুকুরে মাছ আছে। সকালে এসো। মেয়ে ভূগোলে পটু। ২. য় বিভক্তি : মেলায় অনেক লোক এসেছে। সুনীল সন্ধ্যায় আসবে। ৩. তে বিভক্তি : বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এসেছেন। ৪. এতে বিভক্তি : যেসব স্থলে ‘এ’ বিভক্তি হয়, সেসব স্থলে ‘এতে’ বিভক্তিও হয়। যেমন, সকালেতে কেউ এল না। মায়া ভূগোলেতে দুর্বল। ৫. শূন্য : তুমি বরং কাল এসো। আগামী বছর তোমার বাড়ি যাও।