অপাদান কারক
যে ব্যক্তি বা বস্তু থেকে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু বিচ্ছিন্ন হয়, উৎপন্ন হয়, মুক্ত হয়, গৃহীত হয়, বিরত হয়, নিবারিত হয়, ভয় পায়, লজ্জা পায়, রক্ষা পায় বা রক্ষা করে, সেই ব্যক্তি বা বস্তু অপাদান কারক। যথা- ছাদ থেকে জল পড়ছে। (বিচ্ছিন্ন হচ্ছে) দুধ থেকে দই তৈরি হয়। (উৎপন্ন) গানটা সোমার মুখে শুনেছি। (শুত) হে ঠাকুর, আমাকে এই বিপদে রক্ষা করো। (রক্ষা) লাইন দুটি গীতাঞ্জলি থেকে উদ্ধৃত। (গৃহীত) এবার এই কাজে ছুটি নাও। (বিরত) খাবার থেকে মাছিগুলো তাড়াও। (নিবারণঁ) বাঘকে সকল মানুষই ভয় পায়। (ভয়) আমার দাদাকে লজ্জা পাব্র কারণ নেই (লজ্জা) আবশেষে তিনি খাঁচা থেকে পাখিগুলোকে ছেড়ে দিলেন। (মুক্তি) অপাদান নানা প্রকার হতে পারে। যথা- ১) আধার অপাদান : যে আধার থেকে কোনো কিছু বিছিন্ন হয়, তাকে আধার-অপদান বলে। যেমন-‘আঁখি হতে অশ্রুধারা জরে অবিরল।’ ২) কালবাচক অপাদান : অপাদান যদি কাল বোঝায়, তাহলে তাকে কালবাচক অপাদান বলে। যথা- সকাল থেকে তোমার জন্যে অপেক্ষা করছি। সেদিন থেকে তার সঙ্গে দেখা নেই। ৩) অবস্থানবাচক অপাদান : অপাদান যদি কোনো কিছুর অবস্থান বোঝায়, তাহলে তাকে অবস্থানবাচক অপাদান বলে। যথা-ছাদ থেকে চেয়ে দেখলাম এক অপূর্ব দৃশ্য। বাড়ির দরজা থেকেই মামাকে আসতে দেখলাম। ৪) দূরত্বসূচক অপাদান : যে স্থান থেকে অন্য স্থানের দূরত্ব বোঝায়, তাকে দূরত্বসূচক অপাদান বলে । যথা- শহর এখান থেকে দু ক্রোশ দূরে। আমাদের বাড়ি থেকে স্টেশন এক মাইল দূর। ৫) উৎকর্ষবাচক বা তারতম্যবাচক অপাদান : যে ব্যক্তি বা বস্তুর চেয়ে অন্য কিছু বেশি কম বোঝায়, সেই ব্যক্তি বা বস্তুকে উৎকর্ষবাচক বা তারতম্যবাচক অপাদান বলে। যথা-সুতপার চেয়ে রীণা লম্বা। সত্যেনের চেয়ে সলল অঙ্কে কাঁচা। অপাদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগঃ বাংলায় অপাদান কারকে অনুসর্গই বেশি ব্যবহৃত হয়। বিভক্তি খুব কম ব্যবহৃত হয়। বিভক্তির মধ্যে এ, শূন্য, য়, কে, তে ইত্যাদি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ১. এ : ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা বিপদে আমি না যান করি ভয়।’ (রবীন্দ্রনাথ) এই উদ্ধৃতির ধ্যে ‘বিপদ’ অপাদান কার, কেন-না বিপদ থেকেই র্ষা করবার কথা বলা হয়েছে।এই পিতে অপাদান কারক ‘এ’ বিভক্তি ব্যবৃত হছে। দ্বিতীয় ছত্রেও ‘বিপদ’ ভয়ের কারণ রূপে উপস্থিত। এটিও তাই অপাদান কারক এবং এটিতেও ‘এ’ বিভক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। তবে গদ্যে এরক ব্যবহার কম। ‘আমি কি ডরাই কভু ভিখারি রাঘবে?’ (মধ্যসূদন)। এই বাক্যেও ‘রাঘব’ অপাদান কারক, কেন-না রাঘব এক্ষেত্রে ভয়ের কারণ রূপে কল্পিত হয়েছে। এখানেও অপাদান কারকে ‘এ’ বিভক্তি হয়েছে। ২. শূন্য : বিলাত ঘুরে এলাম। দিঘা বেড়িয়ে এসো। এসব বাক্যে ‘বিলাত’ পদটি ‘বিলাত থেকে’ এবং ‘দিঘা থেকে’ বোঝাচ্ছে। বিলাত এবং দিঘা এখানে অপাদান কারক। দুটি পদেই ‘শূন্য’ বিভক্তি। ৩. য় : তোমায় ভয় পাই না। আমায় ভয় পায় না। এই দুই ক্ষেত্রে ‘আমি’ এবং ‘তুমি’ ভয়ের কারণ, সুতরাং অপাদান কারক। দুই পদেই অপাদান কারকে ‘য়’ বিভক্তি হয়েছে। ৪. কে : রমা তোমাকে লজ্জা পায়। এই বাক্যে ‘তুমি’ লজ্জার কারণ, তাই অপাদান কারক। ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। ৫. তে : এই গানটা রেডিয়োতে শুনো। (অর্থাৎ, রেডিয়ো থেকে) এই বাক্যে ‘রেডিয়ো’ অপাদান কারক। এখানে অপাদান কারকে ‘তে’ বিভক্তি হয়েছে। ৬. এর : এখানে বেশ সাপের ভয়। ভূতের ভয় আমি করি না।