করণ কারক
কর্তা যা দিয়ে কর্ম সম্পাদন করে, সেটা করণ। ক্রিয়ার সঙ্গে করণ সম্মন্ধযুক্ত পদকে করণ কারক বলে। যথা – ছুরি দ্বারা কাগজটি কাটো। এই বাক্যে ছুরি করণ কারক। নানা অর্থে নানা প্রকার করণ কারক হতে পারে- (১) সাধনাত্মক করণ : ক্রিয়া সম্পাদনের উপায়টি যদি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয়, অর্থাৎ তাকে যদি স্পর্শ করা যায় বা দেখা যায়, তাহলে তাকে সাদনাত্মক করণ বলে। যথ- বঁটি দিয়ে তরকারি কাটছে। ট্রেনে কলকাতা যাচ্ছিলাম। কোদাল দ্বারা মাটি কোপায়। (২) সমধাতুজ করণ : বাক্যে একই ধাতু থেকে করণ এবং ক্রিয়াপদ গঠিত হলে সেই করণকে সমধাতুজ করণ বলে। যথা-এবার তোমায় শক্ত বাঁধনে বেঁধেছি। এই বাক্যে বা&ধ্ ধাতু থেকে বাঁধন এই করণ এবং বেঁধেছি ক্রিয়াপদ গঠিত হয়েছে। (৩) উপায়াত্মক করণ : ক্রিয়া সম্পাদনের বস্তুটি যদি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য না হয়, তবে সেটিকে উপায়াত্মক করণ বলা হয়। যথা- বুদ্ধিতে এই ব্যাপারের ব্যাখ্যা মেলে না। -এই বাক্যে ‘বুদ্ধি’ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়, কেন-না বুধিকে স্পর্শ করা যায় না, ধরাও যায় না। তাই এক্ষেত্রেও বুদ্ধি উপায়াত্মক করণ। (৪) হেতুবোধক করণ : ছেলেটি ব্যাথায় ছটফট করছে। মেয়েটি লজ্জায় জড়সড় হয়ে উঠল।–এই দুটি বাক্যে দেখা যাচ্ছে, ব্যথা এবং লজ্জা দু-ই হেতু। যদি কোনো পদ হেতু বোঝায়, তবে তাকে হেতুবোধক করণ বলে। এই দুই বাক্যে ব্যথা এবং লজ্জা, দুই-ই হেতুবোধক করণ। (৫) লক্ষণবোধক করণ : (বা উপলক্ষ্মণাত্মক করণ) –এই জাতীয় করণ কোনো লক্ষণ বোঝায়। যথা, ভদ্রলোক জাতিতে বৌদ্ধ। আচরণে মানুষ চেনা যায়। (৬) কালাত্মক করণ : যে কাল বা সময়ের মধ্যে কোনো কাজ শেষ হয়, সেই কালবোধক পদ কালাত্মক করণ। যথা, দশ দিনে পরীক্ষা শেষ হল। চার দিনে উৎসব শেষ হবে। এই দুই বাক্যে যথাক্রমে ‘দশদিনে’ এবং ‘চারদিনে’ কালাত্মক করণ। (৭) অসমাপিকা ক্রিয়াত্মক করণ : অসমাপিকা ক্রিয়া যদি করণ কারকের মতো কাজ করে, তাহলে সেটিকে অসমাপিকা ক্রিয়াত্মক করণ বলে। যথা- হেসে আমায় ভোলাতে পারবে না। (অর্থাৎ হাসি দ্বারা)। (৮) দ্বিরিক্ত করণ (বা বীপ্সাত্মক করণ) : একই পদ দুবার পর পর করণ রূপে ব্যবহৃত হলে তাকে দ্বিরুক্ত করণ বা বীপ্সাত্মক করণ বলে। যথা- গানে গানে কবির ঝুলি ভরা ছিল। (অর্থাৎ বহু গান দ্বারা)। করণ কারকে বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগ : ১. এ : লাল পেনসিলে লেখো। বিস্কুটে খিদে মেটে না। তিনি কানে কম শোনেন। হাতে হাতে কাজটা করে ফেলো। ২. য় : রোজ নৌকায় গঙ্গাপার হই। ঝগড়ায় কাজ হবে না। ৩. তে : এ কালিতে লেখা যায় না। এখানে ট্রেন কয়লাতে চলে। ৪. য়ে : সাপ পায়ে চলে না। এটি দায়ে কাটা হয়েছে। ৫. শূন্য : ছেলেরা ফুটবল খেলছে। মেয়েরা ডাংগুলি খেলে না। ‘ঘোড়াসোয়ার, চাবুক মারো।’ ৬. র, এর : এই তরকারিটা মায়ের রান্না করা। এই ছহবিটি বাবার আঁকা। লোকটা লাঠির ঘায়ে আহত হল।