সরলবাক্য
(১) আমি গান গাই।
(২) বালকেরা বিদ্যালয়ে যায়।
(৩) আমার বোন দেবীপুর বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ে।
(৪) বাউলটি গাইতে গাইতে নাচছে।
(৫) দা নিয়ে একজন আমার সঙ্গে এসো।
(৬) চন্ডীমন্ডপে দাদু দাঁড়িয়ে ছিলেন।
(৭) ছেলেবেলার কথা মনে জাছে।
ওপরের বাক্যগুলোর গঠন একটু লক্ষ করলে বোঝা যাবে বাক্যে কর্তা বা উদ্দেশ্য রয়েছে এবং সমাপিকা ক্রিয়া বা বিধেয় রয়েছে। বাক্যে একটিই সমাপিকা ক্রিয়া আছে-‘গাই’, ‘খায়’, ‘পড়ে’, ‘নাচছে’, ‘এসো’, ‘দাঁড়িয়ে ছিলেন’ ইত্যাদি। অসমাপিকা ক্রিয়া একাধিক হতে পারে- উদাহরণটি এবার দেখো-
(ক) আমি ঘুম থেকে উঠলাম।
(খ) মুখ-হাত ধুয়ে পড়তে বসলাম।
(ক) ও (খ) দুটোই সরল বাক্য। এবারে এ দুটো সরলবাক্যকে একটা সরল বাক্য করতে গেলে অসমাপিকা ক্রিয়া যোগ করে কীভাবে হচ্ছে লক্ষ করো।
‘আমি ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসলাম।’ উঠলাম সমাপিকা ক্রিয়াকে অসমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তর করে সরলবাক্য করলাম। তাহলে সরল বাক্য কাকে বলে ?
যে বাক্যে একটি কর্তা ও একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে তাকে সরল বাক্য বলে।
সরলবাক্য বিশ্লেষণ :
সরলবাক্য গঠনের শর্ত :
(১) সরল বাক্যে প্রথমে বসবে কর্তা বা উদ্দেশ্য। কর্তার কোনো বিশেষণ থাকলে তা কর্তা বা উদ্দেশ্যের আগে বসবে। যেমন- ‘বাড়ির বুড়ো সরকার খুঁতখুত করতে লাগল।’
এই বাক্যে ‘সরকার’ উদ্দেশ্যের পূর্বে ‘বুড়ো’ বিশেষণটি বসেছে।
(২) উদ্দেশ্য অংশে কোনো সম্বন্ধ বা সম্বোধন পদ থাকলে, তা উদ্দেশ্যের পূর্বে বসবে।
যেমন-‘আমার ছাত্র একাজ করেনি।’
আখানে ‘ছাত্র’ উদ্দেশ্যের আগে ‘আমার’ সম্বন্ধ পদটি স্থাপিত হয়েছে।
‘হে ঈশ্বর দেখা দাও’।
এখানে ‘হে’ নামক সম্বোধন পদটি ‘ঈশ্বর’ নামক উদ্দেশ্যের আগে স্থাপিত হয়েছে।
(৩) বিধেয় অংশে কর্ম থাকলে, তা সমাপিকা ক্রিয়ার পূর্বে স্থাপিত হবে।
যেমন-১। ‘গানের মাস্টারমশায় ছাত্রীকে গান শেক্ষাচ্ছেন।’
এখানে ‘গান’ কর্মটি বিধেয় অংশে অবস্থিত এবং কর্মটির সমাপিকা ক্রিয়া ‘শেখাচ্ছেন’-এর পূর্বে স্থাপিত হয়েছে।
(৪) সরল বাক্যের ক্রিয়াটি দ্বিকর্মক হলে গৌণকর্মটি মুখ্যকর্মের পূর্বে বসবে।
যেমন-প্রবীরবাবু আমাকে ইংরেজি পড়ান।
এখানে ‘আমাকে’ গৌণকর্মটি ‘ইংরেজি’ মুখ্যকর্মের পূর্বে স্থাপিত হয়েছে।
(৫) অধিকরণ কারক বিধেয় অংশের হলেও বাক্যের প্রথমে বসে।
যেমন-‘দেশে দেশে মোর দেশ আছে।’
এখানে ‘দেশে দেশে’ নামক অধিকরণ কারক বাক্যের প্রথমে স্থাপিত হয়েছে।
(৬) বাক্যের উদ্দেশ্য অংশের পর সমাপিকা ক্রিয়া বসে।
যেমন-আমি চলে যাই।
(৭) বিধেয় অংশের সমাপিকা ক্রিয়া বাক্যের একেবারে শেষে স্থাপিত হবে।
যেমন-‘পুরোহিত খুশি হয়ে বাসায় ফিরলেন।’
এখানে ‘ফিরলেন’ নামক সমাপিকা ক্রিয়াটি বাক্যের শেষে স্থাপিত হয়েছে।
(৮) কর্তার বিধেয় বিশেষণ থাকলে তা কর্তা ও ক্রিয়াপদের পরে বসে।
যেমন- ‘তাঁর মনটা ছিল শিশুর মতো সরল।’
এখানে কর্তার বিধেয় বিশেষণ হল ‘সরল’ এবং এই ‘সরল’ বিশেষণটি বাক্যের শেষে স্থাপিত হয়েছে।
(৯) সরলবাক্যের একটি কর্তা ও একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকা দরকার। তবে কর্তা কিংবা ক্রিয়া ছাড়াও একটি সরলবাক্য হতে পারে। যদি অর্থেক দিক থেকে কর্তা ও ক্রিয়া উপলব্ধি হয়।
যেমন-‘অনেককাল তোমাদের খবর নিতে পারিনি।’
এখানে কর্তা ‘আমি’ ঊহ্য তবুও এটি সরল বাক্য কারণ এখানে ‘আমি’ কর্তার ভাবটি উপলব্ধ হয়েছে।
(১০) শুধু ক্রিয়াপদের সরলবাক্য হতে পারে।
যেমন-প্রশ্ন-চললেন ?
এখানে ‘চললেন’ ক্রিয়াপদটিও একটি সরলবাক্য।