কর্ম কারক
যাকে নিয়ে বা যা নিয়ে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, সে বা তা কর্ম। ক্রিয়ার সঙ্গে কর্মসম্পন্ন যুক্ত পদকে কর্ম কারক বলে। যথা, বইটা পড়ো। -এই বাক্যে ‘বইটা’ কর্ম কারক। কর্ম নানা রকমের হতে পারে। নীচে বিভিন্ন প্রকার কর্মের উল্লেখ করা হল- (১) মুখ্য কর্ম ও গৌণ কর্ম : বাবা মকে গল্প বললেন। এই বাক্যে ‘বললেন’ ক্রিয়ার কর্ম দুটি-‘আমাকে’ এবং ‘গল্প’। আমাকে বললেন, সুতরাং ‘আমাকে’ কর্ম। আবার, ‘গল্প’ বললেন, সুতরাং ‘গল্প’ কর্ম। যেসব ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে, তাদের দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। এই বাক্যে ‘বললেন’ দ্বিকর্মক ক্রিয়া। তবে দ্বিকর্মক ‘বললেন’ ক্রিয়াপদটির সঙ্গে সরাসরি যোগ ‘গল্প’ পদটির। এই কর্মটি হল মুখ্যকর্ম। আরও ‘আমাকে’ হল গৌণ কর্ম অর্থাৎ অপ্রধান কর্ম। অর্থাৎ, দ্বিকর্মক ক্রিয়ার সঙ্গে যে কর্মের প্রত্যক্ষ যোগ থাকে তাকে মুখ্য কর্ম বলে। দ্বিকর্মক ক্রিয়ার যে কর্মের সঙ্গে পরোক্ষ যোগ থাকে, তাকে গৌণ কর্ম বলে। প্রায়ই দেখা যায়, গৌণ কর্ম মানুষ এবং মুখ্য কর্ম মানুষ ছাড়া অন্য কিছু। প্রদত্ত দৃষ্টান্তটিতেও তাই দেখা যাচ্ছে। তবে অনেক সময় গৌণ কর্ম মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীও হয়। যেমন-‘পাখিকে ছোলা খাওয়াও’। এই বাক্যে ‘পাখি’ গৌণ কর্ম, ‘ছোলা’ মুখ্য কর্ম। এবার নীচের দৃষ্টান্তগুলি লক্ষ্য করো- বাবা আমাকে গল্প বললেন। পাখিকে ছোলা খাওয়াও। ‘তোমায়’ গান শোনাব’ । প্রথম দৃষ্টান্তে ‘গল্প’ মুখ্যকর্ম, ‘আমাকে’ গৌণোকর্মে। গৌণকর্মে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে, ‘গল্প’ পদটিতে কোনো বিভক্তি নেই, অর্থাৎ এটিতে ‘শূন্য’ বিভক্তি হয়েছে। দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে, মুখ্যকর্ম ছোলা’র শূন্য বিভক্তি, গৌণকর্ম ‘পাখিকে’ পদটিতে ‘কে’ বিভক্তি রয়েছে। ত্ররীতীয় দৃষ্টান্তেরও মুখ্যকর্ম ‘গান’ পদটির শূন্য বিভক্তি, কিন্তু গৌণকর্ম ‘তোমায়’ পদটিতে ‘য়’ বিভক্তি ইয়ুক্ত হয়েছে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে- (১) দ্বিকর্মক ক্রিয়ার ক্ষেত্রে ‘কে’, ‘য়’ বা শূন্য ইত্যাদির বিভক্তির প্রয়োগ হয়। (কবিতায় ‘রে’ বিভক্তি হতে পারে।) (২) মুখ্যকর্মের শূন্য বভক্তি হয়। গৌণকর্মে ‘কে’ বা ‘য়’ বিভক্তি হয়। (কবিতায় ‘রে’ বিভক্তি হতে পারে।) বইটি পড়া হয়েছে। ছবিটা আমার দ্বারাই আঁকা হয়েছে।–এই ধরনের বাক্যে ‘বইটি’, ‘ছবিটা’ ইত্যাদি পদ আসলে কর্ম হলেও কর্তৃ কারকের মতো ব্যবহৃত হয়েছে। কর্মকে প্রধান করে এই রকম ভঙ্গিকে বাক্য গঠন করলে, সেই বাক্য রচনার ভঙ্গিকে বলে কর্মবাচ্য। সুতরাং এক্ষেত্রে কারক-বিভক্তি নির্নয় করতে বললে বলতে হবে, ‘কর্মবাচ্যে’ কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি। (২) উদ্দেশ্য কর্ম ও বিধেয়হ কর্ম : ছেলেরা বিমলকে চালাক ভাবে। চরিত্রকে ঐশ্বর্য মনে করবে। -প্রথম বাক্যে ‘ভাবে’ সমাপিকা ক্রিয়া। এই ক্রিয়াকে প্রশ্ন করলে দুটি কর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে। কাকে ভাবে? –বিমলকে? কী ভাবে?-চলাক। ‘চালাক’ এই কর্মটি ‘বিমল’ সম্পর্কে আরও কিছু বলছে। অর্থাৎ ‘চালাক’ কর্মটি ‘বিমল’ কর্মের পরিপূরক। এক্ষেত্রে ‘বিমল’ উদ্দেশ্য কর্ম এবং ‘চালাক’ বিধেয় কর্ম। দ্বিতীয় বাক্যে ‘চরিত্রকে’ উদ্দেশ্য কর্ম এবং ‘ঐশ্বর্য’ বিধেয়। এটাও লক্ষণীয় যে, উভয় বাক্যেই উদ্দেশ্যকর্মে বিভক্তি যুক্ত হয়েছে, কিন্তু বিধেয় কর্মে শূন্য বিভক্তি। (৩) সমাজধাতুজ কর্ম ও ধাত্বর্থক কর্ম : সবাই কী হাসাই হাসলাম । ছেলেটা কী ঘুমই না ঘুমাল। প্রথম বাক্যে ‘হাসলাম’ ক্রিয়াপদ এবং ‘হাসা’ কর্ম, দুই-ই ‘হাস্’ ধাতু থেকে গঠিত। তাই ‘হাসা’ কর্মকে বলা হয় সমধাতুজ কর্ম। দ্বিতীয় বাক্যে ‘ঘুম’ সমধাতুজ কর্ম। অর্থাৎ, বাক্যে ক্রিয়াপদ এবং কর্ম উভয়ই যদি একই ধাতু থেকে গঠিতজ হয়, তাহলে কর্মটিকে সমধাতুজ কর্ম বা ধাত্বর্থক কর্ম বলা হয়। (৪) কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্ম : হটাৎ বাঁশি বেজে উঠল।– এই বাক্যে ‘বাঁশি’ প্রকৃতপক্ষে কর্ম, কেন-না কেউ না বাজালে বাঁশি নিজে নিজে বাজতে পারে না। অথচ বাক্যটিতে দেখা যাচ্ছে, কর্মই কর্তার মতো কাজ করছে। যে ধরনের বাক্যবিন্যাসে কর্মই কর্তার মতো কাজ করে তাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলে। স্বভাবতই কর্মকর্তৃবাচ্যে কর্মকারকে কর্তার মতোই বিভক্তি হয়। (৫) ব্যাপ্তিবোধক কর্ম : যে সময় জুড়ে কাজ চলছে অথচ শেষ হছহে না, সেই সময়বোধক কর্মকে ব্যাপ্তিবোধক কর্ম বলা হয়। যথা, পাঁচদিন ধরে উৎসব চলছে। কর্ম কারকে বিভিন্ন ব্বক্তির প্রয়োগ : (১) শূন্য : নারাতণ বই পড়ছে। মুনমুন ছবি দেখছে। (২) কে : মেয়েটিকে ডকো। স্বপ্না আমাকে দেখছিল। এ দুটি দৃষ্টান্তে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। (৩) রে : ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা।’ ‘চল্ তোরে দিয়ে আসি সাগরের জলে।’ শুধু হপদ্যেই ‘রে’ বিভক্তি ব্যবহার হয়। (৪) য় : ‘তোমায় গান শোনাবো।’ আমায় কে যেন ডাকছে। -এরকম সামান্য কিছু দৃষ্টান্ত আছে যেগুলিতে কর্ম কারকে ‘য়’ বিভক্তি দেখা যায়। (৫) এ : দেবদ্বিজে একটু ভক্তি দেখিয়ো (অর্থাৎ দ্বেবদ্বিজকে) ‘কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে।’ (৬) র : আজকাল তোমার দেখা পাই না। কারুর পরোয়া করি না।