সমাস
পাড়ায় একটি লোক সাপ নিয়ে এসেছে খেলা দেখাবার জন্যে। একটি ছেলে দেখতে চলেছে। সে তার বন্ধুকে বলল, ‘আমি সাপের খেলা দেখতে যাচ্ছি’। ছেলেটি ঠিকই বলেছে। তবে ‘সাপের খেলা’ এই শব্দ দুটিকে আলাদা ভাবে না বলে একসঙ্গে বলা যায় ‘সাপখেলা’ ।
এইভাবে অনেক সময় আমরা পাশাপাশি শব্দগুলিকে আলাদাভাবে না বলে একসঙ্গে বলি।
যেমন, জবা নামক ফুল=জবাফুল, বিলাত থেকে ফেরত=বিলাতফেরত, পঞ্চ অধিক দশ=পঞ্চাদশ, ভাই এবং বোন=ভাইবোন ইত্যাদি।
তবে যেমন খুশি এটা করা যায় না। ‘বাঁদরের নাচ’ এই দুটি শব্দের সমাস করে ‘বাঁদরনাচ’ করা যায়। কিন্তু ‘আমি বাঁদরের’ এই দুটি পদের সমাস হয় না। ‘নাচ দেখতে’ অথবা ‘দেখতে যাচ্ছি’ ইত্যাদিকেও একপদ করা যায় না। পাশাপাশি পদের মধ্যে অর্থের মিল বা সংগতি থাকলে তবেই সমাস করা যায়, নচেৎ নয়।
সমাস : অর্থসংগতি বজায় রেখে পরস্পর সম্বন্ধবিশিষ্ট দুই বা ততোধিক পদ মিলিত হয়ে যখন একপদে পরিণত হয় তখন তাকে সমাস বলে ।
‘গাছ থেকে পাড়া = গাছপাড়া’, এই সমাসটির ক্ষেত্রে ‘গাছ’ এবং ‘পাড়া’ এই দুটি পদের মধ্যেই আসলে সমাস হয়েছে। তাই এ দুটি পদকে সমস্যমান পদ বলা হয়।
‘গাছ থেকে পাড়া’ এই অংশে সমস্যমান পদ দুটির সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই সম্পূর্ণ অংশটিকে বলা হয় ব্যাসবাক্য (বা বিগ্রহবাক্য বা সমাসবাক্য)। ‘গাছপাড়া’ পদটিকে বলা সমস্তপদ। সুতরাং-
যেসব পদ নিয়ে সমাস হয় সেগুলিকে সমস্যামান পদ বলে, যে ব্যাক্যাংশে সমস্যমান পদগুলির সম্বন্ধ বোঝায় তাকে ব্যাসবাক্য (বা বিগ্রহবাক্য বা সমাসবাক্য) বলে এবং সমাসের ফলে গঠিত পদকে সমস্তপদ বলে।
সন্ধি ও সমাস :
সন্ধি : পাশাপাশি দুটি শব্দ দ্রুত উচ্চারণের ফলে অনেক সময় আগের শব্দটির শেষ বর্ণ এবং পরের শব্দটির প্রথম বর্ণের মধ্যে মিলন ঘটে। এই মিলনকে সন্ধি বলে।
সমাস : পরস্পরের মধ্যে অর্থের সম্পর্ক আছে এমন একাধিক শব্দকে একশব্দে পরিণত করার নাম সমাস।
সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য :
সমাস ও সন্ধির কাজই হল সংক্ষেপ করা এবং সৌন্দর্য সৃষ্টি করা । কিন্তু উভয়ের মূলগত পার্থক্য আছে ।
নং | সন্ধি | সমাস |
---|---|---|
১ | সন্ধি ধ্বনির সঙ্গে ধ্বনির মিলন । | সমাস পদের সঙ্গে পদের মিলন । |
২ | সন্ধিতে দুটি অর্থ পৃথকভাবে বজায় থাকে । | সমাসে অনেক ক্ষেত্রে তৃতীয় অর্থ প্রাধান্য পায় । যেমন - বহুব্রীহি সমাস । |
৩ | সন্ধিতে বিভক্তি থাকে না । | অলোপ সমাসের ক্ষেত্রে বিভক্তি থাকে । |
৪ | সন্ধিতে কোনো নতুন পদের আগমন ঘটে না । | সমাসের ক্ষেত্রে নতুন পদের আগমন ঘটতে পারে । |
৫ | সন্ধিতে পদগুলি ক্রম অনুযায়ী সজ্জিত থাকে । আগের পদ পরে বসে না । | সমাসে পদের ক্রম সর্বদা রক্ষিত হয় না । |
৬ | সন্ধির মিলন উচ্চারণ কেন্দ্রিক । | সমাসের মিলন অর্থকেন্দ্রিক । |
৭ | সন্ধিতে দুটি পদেরই মিলন হয় । | সমাসে দুইয়ের বেশি পদেরও মিলন হতে পারে । |
৮ | সন্ধির দ্বারা সৃষ্ট পদটি হল তৎসম । | সমাসের ক্ষেত্রে সৃষ্ট পদটি অনেক সময় অর্ধতৎসমও হয় । |
সমাস সংক্রান্ত পরিভাষা ও তাদের ব্যাখ্যা
সমাস গঠনে প্রেক্ষিতে সমাস সংক্রান্ত পরিভাষাগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা প্রয়োজন ।
পরস্পর পদের সমাসে - সমস্তপদ , সমস্যমান পদ , পূর্বপদ , পরপদ , ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য প্রভৃতি প্রসঙ্গগুলি এসে যায় ।
লেখচিত্র ভিত্তিক উদাহরণটি বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি সহজে বোঝা যাবে ।
সমস্তপদ / সমাসবদ্ধ পদ ঃ
সমস্যমান পদ ঃ
পূর্বপদ ঃ
পরপদ ঃ
ব্যাসবাক্য / বিগ্রহবাক্য ঃ
সমাসের শ্রেণীবিভাগ
নানা রকম সমাস আছে। যথা- দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, কর্মধারয়, বহুব্রীহি, অব্যয়ীভাব। (দ্বিগু নামে আর এক ধরনের সমাস আছে-সে সম্পর্কে পরবর্তী শ্রেণিতে আলোচনা হবে।) এখন একে একে এই পাঁচ রকম সমাস সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
পূর্বে সংস্কৃতে সমাস ছিল চার প্রকার - দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি ও অব্যয়ীভাব ।
সমাসের শ্রেণীবিভাগ
উদাহরণ বিশ্লেষণ ঃ
- ১. 'দুর্ভিক্ষ' (ভিক্ষার অভাব) শব্দটিতে অভাবের অর্থপ্রধান , পূর্বপদ 'দুঃ' সেই অভাবের অর্থ বহন করছে । [অব্যয়ীভাব]
- ২. বালিকাবিদ্যালয় ( বালিকাদের জন্য বিদ্যালয়)। পরপদ 'বিদ্যালয়ের' অর্থ প্রধান । [তৎপুরুষ]
- ৩. ভাইবোন (ভাই ও বোন)। পুূর্বপদ 'ভাই' ও পরপদ 'বোন' উভয়ের অর্থই প্রধান । [দ্বন্দ্ব]
- ৪. বীণাপাণি (বীণা পাণিতে যার) । 'বীণা' এবং 'পাণি' কোনো পদের অর্থ প্রধান নয়। দুই মিলে অপর একটি পদ সরস্বতীর অর্থ ব্যক্ত করছে। [বহুব্রীহি]
- ৫. নীলাকাশ (নীল যে আকাশ) । 'নীল' বিশেষণ 'আকাশ' বিশেষ্য । পরপদ 'আকাশের' অর্থ প্রধান ।
- ৬. সপ্তাহ (সপ্ত অহের সমাহার) । পূর্বপদ 'সপ্ত' সংখ্যাবাচক পরপদ 'অহ' এর অর্থ প্রধান।
কিন্তু বর্তমানে এর বিস্তার ঘটেছে । অর্থগত দিক দিয়ে বিচার করে সমাসকে প্রধানত নয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে ।