বিশেষ্য পদ
যে পদ কোনো কিছুর নাম বোঝায় তাকে বিশেষ্য বলে। যেমন – মানুষ, বুদ্ধদেব, আকবর, রাজা, বঙ্গদেশ, যাওয়া, খাওয়া, লোভ, আকর্ষণ, যম, পির, মুক্তি, দয়া, নীলিমা ইত্যাদি। লক্ষ্য করে দেখো, ওই সব নাম উচ্চারণের সাথে সাথে তোমার মনে একটি বিশেষ ধারণা জন্মাচ্ছে। বিশেষ্য পদ আমাদের মনে ওই বিশেষ পদ আমাদের মনে ওই বিশেষ ধারণা জন্মিয়ে দেয় মাত্র। নীচের উদাহরণে বিশেষ্য পদগুলি মোটা হরফে লেখা হল। পদগুলি দেখো-নাড়ু বাজার থেকে থলিতে করে চাল, চিনি, আর চিঁড়ে আনছিল। তার হাতে ছিল মাছ। চিলে ছোঁ মারল। নাড়ু কাঁদতে লাগল। যদু, মধু, বিকাশ ও ভানু তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগল। এই ফাঁকে একটি ছাগল তার থলি থেকে চাল খেয়ে গেল। ওই দেখো, যদু লাঠি নিয়ে তাকে তাড়া করেছে। এখানে মোটা হরফে লেখা শব্দগুলো সবই বিশেষ্য। কিন্তু সব বিশেষ্যই এক জাতের জিনিসের নাম বোঝায় না। যেমন-নাড়ু, যদু, মধু, বিকাশ, ভানু-ব্যক্তির নাম। বাজার-জায়গার নাম । হাত, থলি, চাল, চিনি, চিঁড়ে, লাঠি-বস্তুর নাম । মাছ, চিল, ছাগল-জাতির নাম । ছোঁ, সান্ত্বনা-কাজের নাম । বিশেষ্যের শ্রেণিবিভাগ আর ভালোভাবে বুঝতে নীচের উদাহরণগুলি ভালোভাবে লক্ষ করো- (ক) গঙ্গানদী ভারতের সবচেয়ে বরো নদী । (খ) ডাল-তেল-নুন কোন্ জিনিসের দাম কম? (গ) গোরু-ছাগল-ভেড়া ইত্যাদি বাড়িতে পোষা হয়। (ঘ) প্রত্যক ছাত্রের বিনয়-সরলতা-দয়া ইত্যাদি গুণ থাকা উচিত । (ঙ) নিয়মিত ভোজনে ও শয়নে স্বাস্থ্য ভাল থাকে। এই উদাহরণগুলির মধ্যে ‘ক’ সংখ্যক উদাহরণে, গঙ্গা ও ভহারত যথাক্রমে একটি নদী ও একটি দেশের নামকে বোঝাচ্ছে। যে পদ কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা কোনো বিশেষ কিছুর পৃথক নাম বোঝায়, তাকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন- (১) ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। (২) কাশ্মীরকে ভূস্বর্গ বলা হয়। (৩) রামচন্দ্র রামায়ণের নায়ক। এই উদাহরণ তিনটিতে মোটা হরফে লেখা সব বিশেষ্যগুলিই সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য। যে পদ বিশেষ ক্র নাম বোঝায় তাক সংগাবাচক বিশেষ্য বলে। ‘খ’ –সংখ্যক উদাহরণে মোটা হরফে লেখা ডাল-তেল-নুন ইত্যাদি শব্দ কোনো-না-কোনো বস্তুকে বোঝাচ্ছে। এইভাবে যে সমস্ত বস্তুকে গোনা যায় না, যার পরমাণ বা ওজন মাত্র বলা যায়, তেমন বস্তুর নামকে যে-শব্দ দ্বারা বোঝানো হয় তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন- (১) জলকে জোবন বলা হয় । (২) আগুন না জ্বাললে কীভাবে রাঁধবে? (৩) দুধ স্বাস্থ্যের পক্ষে পুষ্টিকর । এই উদাহরণ তিনটিতে মোটা হরফে লেখা শব্দগুলি এমন কোনো-না-কোনো বস্তুকে বোঝাচ্ছে, যাকে গোনা যায় না, এদের পরিমাণ বা ওজন বলা যায় মাত্র। অতএব এরা বস্তুবাচক বিশেষ্য। যে পদ এমন বস্তুর নাম বোঝায় যা সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা যায় না, তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য বলে। ‘গ’-সংখ্যক উদাহরণে মোটা হরফে লেখা গোরু-ছাগল-ভেড়া ইত্যাদি শব্দ কোনো বিশেষ্য গোরু, ভেড়া বা ছাগলকে বোঝাচ্ছে না। অতএব এরা সংগাবাচক বিশেষ্য নয়য়। আবার অইগুলি সংখ্যা দ্বারা হিসাব করা যায়। অতএব এরা বস্তুবাচক বিশেষ্যও নয়য়। ওই পদগুলি সমস্ত জাতিটিকে বোঝাচ্ছে। অতএব এরা জাতিবাচক বিশেষ্য। যেমন- (১) প্রজাপতির ডানা বিচিত্র বর্ণে রঞ্জিত থাকে । (২) বাঁদর বড়ো অনুকরণপ্রিয় । (৩) কুকুর খুব প্রভুভক্ত জীব । এই উদাহরণ তিনটিতে মোটা হরফে লেখা পদগুলি কোনো একটিকে না বুঝিয়ে ওই জাতির প্রত্যেককে এবং সকলকে বোঝাচ্ছে। অতএব এরা জাতিবাচক বিশেষ্য। যে পদ কোনো জাতির নামকে বোঝায় তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। ‘ঘ’-সংখ্যক উদাহরণে মোটা হরফে লেখা বিনয়-সরলতা-দয়া ইত্যাদি পদ কতগুলি গুণকে বোঝাচ্ছে। এমন যেসব শব্দ কোনো দোষ, গুণ বা অবস্থাকে বোঝায়, তাদের গুণবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন- (১) জীবন সুখ-দুঃখ দুয়ের মালা গাঁধা । (২) রোগ প্রতিরোধ করো, স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। (৩) সবল দেহই সবচেয়ে বড়ো সৌন্দর্য । এই উদাহরণ তিনটিতে মোটা হরফের লেখা পদগুলি কতকগুলি (দোষ) ও অবস্থাকে বোঝাচ্ছে। এইজন্য এরা গুণবাচক বিশেষ্য। যে পদ কোনো গুণ, দোষ বা অবস্থাকে বোঝায় তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলে। ‘ঙ’ –সংখ্যক উদাহরণে ভোজন, শয়ন ইত্যাদি যে পদ মোটা হরফে লেখা আছে, তা আসলে এক-একটি কাজের নামকে বোঝাচ্ছে ; এইজন্য এদের ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলা যায়। যেমন- (১) বালকেরা মারামারি করছে। (২) মা রান্না গরে রান্নায় ব্যস্ত আছেন। (৩) রামবাবু ভিক্ষুককে দান করছেন। এই তিনটি বাক্যের উদাহরণও তিনটি কাজকে বোঝাচ্ছে। অতএব এরা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য। যে পদ কোনো ক্রিয়ার নামকে বোঝায় তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে। তাহলে বিশেষ্যক মোট পাঁচ দলে ভাগ করা গেল। সংজ্ঞাবাচক, বস্তুবাচক, জাতিবাচক, গুণবাচক এবং ক্রিয়াবাচক। এখন কেউ কেউ এই পাঁচ দলের উপরে আর একদল বিশেষ্যের নাম বলে থাকেন। তাঁরা এই দলের ন্ম দেন সমষ্টিবাচক বিশেষ্য। এই বিশেষ্যগুলি প্রকৃতপক্ষে একই জাতির অন্তর্গত অনেককে একত্রে বোঝায়। যেমন- সভা, সংঘ, সেনাদল ইত্যাদি শব্দ। এইগুলি একদিক থেকে বিচার করলে জাতিবাচক বিশেষ্যের অন্তর্গত। কিন্তু জাতিবাচক বিশেষ্যের সাথে এদের পার্থক্যও আছে। জাতিবাচক বিশেষ্য ওই জাতির প্রত্যেককে বোঝায়। কিন্তু সমষ্টিবাচক বিশেষ্য জাতির সকলকে না বুঝিয়ে শুধু যে ক-টি একত্রিত হয়েছে তাদের বোঝায়। যেমন- (ক) গোরু দুধ দেয়। [এখানে ‘গোরু’ শব্দটি গোরু জাতিকে বোঝাচ্ছে। প্রত্যেকে গোরুই দুধ দিয়ে থাকে। এটি তার জাতিগত বৈশিষ্ট্য।] (খ) এই দোরুর দল ভালো দুধ দেয়। [এখানে সব গোরুর কথা বলা হয়নি। গোরু জাতির মধ্য থেকে কয়েকটি মাত্র বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু লক্ষ করো যাদের বাছা হয়েছে তাদের সকলকেই বোঝানো হয়েছে।] সংক্ষিপ্তসার বিশেষ্যগুলিকে মোট ছ-ভাগে ভাগ করা হয়। সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য : বিশেষ কার নাম । -তাপু, হিমালয়, ধবলী, বুম্বা । বস্তুবাচক বিশেষ্য : যা সংখ্যা দ্বারা গোনা যায় না। -জল, মাটি, দুধ । জাতিবাচক বিশেষ্য : যা কোনো জাতির সাধারণ নাম। -গোরু, কুকুর, মানুষ । গুণবাচক বিশেষ্য : দোষ বা গুণ বা অবস্থার নাম। -দয়া, বিনয়, সরলতা, সৌন্দর্য । ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য : কোনো ক্রিয়ার নাম । -শয়ন, ভোজন, রান্না, মারামারি । সমষ্টিবাচক বিশেষ্য : যা এক জাতীয় জিনিসের সমষ্টি বোঝায়। যেমন-দল, সংঘ ।