বাক্য
‘অমর্ত্য সেন নোবেল পুরস্কার পান’- এই বাক্যটাতে চারটি পদ আছে। এই চারটি পদের সুসংগত বিন্যাসের ফলে একটা সম্পূর্ণ বক্তব্য ধরা পড়েছে। সুতরাং এটি একটা বাক্য। চারটি পদের মধ্যেই অর্থসম্বন্ধ রয়েছে। অমর্ত্য সেন এবং নোবেল পুরস্কার পুরস্কার পাও্যা-এই দুয়ের মধ্যে বাক্যটি অর্থ সম্বন্ধকে সুস্পষ্ট করে তুলেছে। কিন্তু যদি লেখা হত ‘পান পুরস্কার অমর্ত্য সেন’ –তবে অর্থসম্বন্ধের অভাবে বাক্য হত না। অর্থসম্বন্ধের অভাবে বাক্য হত না। অর্থসম্বন্ধহীন এলোমেলো পদের সমষ্টির দ্বারা বাক্য গঠিত হয় না।
বাক্যে কর্তা এবং ‘সমাপিকা ক্রিয়া’-এ দুটি পদ থাকা আবশ্যক। অবশ্য বাক্যের রূপগত দিক থেকে কর্তা ও সমাপিকা ক্রিয়া অথবা যে কোনো দুটিই ঊহ্য থাকতে পারে। কিন্তু অর্থের দিক থেকে কর্তা ও সমাপিকা ক্রিয়া অনুভব করা যায়। অনেক সময় একটা পদের সাহায্যেও একটা সম্পূর্ণ বাক্যের অর্থ ব্যক্ত হয়।
‘অমর্ত্য সেন নোবেল পুরস্কার পান’- এই বাক্যে ‘অমর্ত্য সেন’ কর্তা এবং ‘পান’ সমাপিকা ক্রিয়া।
জল পড়ে পাতা নড়ে। ধান পাকে। চৈত্র মাসে কালবৈশাখীর ঝড় হয়। গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।প্রদত্ত প্রত্যেকটি বাক্যেই কর্তা ও সমাপিকা ক্রিয়া প্রকট ও ব্যক্ত। কিন্তু ‘কর্তা বা সমাপিকা ক্রিয়া’ অথবা দুটি এরূপ বাক্য ব্যবহৃত হয়-
‘চললাম’-কোথায়?- প্রথম বাক্যে সমাপিকা ক্রিয়া, কর্তা ‘আমি’ ঊহ্য। পরের পদটাতে কর্তা এবং সমাপিকা ক্রিয়া দুই-ই ঊহ্য।
‘তুমি কোথায় যাচ্ছ ?’- এই সম্পূর্ণ বাক্যের পরিবর্তে শুধু ‘কোথায়’ পদটি ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু বক্তার সম্পূর্ন মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে বলে এটিও বাক্য।
‘কে ওখানে’-‘আমি’। প্রশ্ন ও উত্তর দুটি ক্ষেত্রেই ক্রিয়া ঊহ্য। কিন্তু উভয়ক্ষেত্রেই অর্থের সম্পূর্ণতা আছে বলে এদের বাক্য বলা হয়।
কিন্তু পূর্বাপরহীনভাব শুধু ‘কোথায়’ বা ‘আমি’ নিছক শব্দ। বাক্য নয়।
‘তুমি খাবে ?’ – এই প্রশ্নের উত্তরে ‘না’ অব্যক্ত পদটি বাক্যের মর্যাদা লাভ করে, কারণ তখন তার অর্থ দাঁড়ায়। ‘আমি খাব না’। অন্যথা বিচ্ছিন্নভাবে ‘না’ শব্দটি কখনওই বাক্য নয়।
বাক্য রচনার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের ওপর লক্ষ রাখতে হবে-
(১) পদগুলোর অবস্থান,
(২) পদগুলোর ক্রম এবং
(৩) পদগুলোর পারস্পরিক সংগতি।
কিন্তু অবস্থান, ক্রম এবং সংগতি নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের ওপর।
এগুলো হল-
(১) যোগ্যতা,
(২) আকাঙ্খা এবং
(৩) আসত্তি বা নৈকট্য।