অকারক পদ : সম্বন্ধ পদ
বাক্যের মধ্যে ক্রিয়ার সঙ্গে যে পদের সম্পর্ক নেই অথচ অন্য বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, তাকে সম্বন্ধ পদ বলে। যথা- আমি আমার কলমটি দাদাকে দিলাম। এই বাক্য লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, একমাত্র ‘আমার’ পদটির সঙ্গেই ‘দিলাম’ ক্রিয়ার সম্পর্ক নেই। ‘আমার’ সম্বন্ধ পদ। নানা প্রকার সম্বন্ধ : (১) সাধারণ সম্বন্ধ বা অধিকার সম্বন্ধ : আমার জামা। আশিসের বই। [জামাটির উপর আমার, বইটির উপর আশিসের অধিকার রয়েছে।] (২) আধার সম্পর্ক : বৃক্ষের শাখাগুলি সুন্দর। নদীর জল। [বৃক্ষই শাখাগুলির আধার, নদী জলের আধার।] (৩) সৃষ্টির সম্পর্ক : গোরুর দুধ পুষ্টিকর। কৌশল্যার পুত্র রাম। [গোরু থেকে দুধের সৃষ্টি, কৌশল্যা রামের জননী।] (৪) কর্তা সম্বন্ধ : তোমার খাওয়া দেখছি। সতীশের যাওয়া হবে না। (৫) লক্ষ্য সম্বন্ধ : ঈশ্বরের প্রতি মন দাও। পড়াশোনার প্রতি নজর দাও। (৬) শ্রদ্ধার সম্বন্ধ : মায়ের স্মরণ কোরো। ধার্মিকেরা ঈশ্বরের ধ্যান করেন। ‘র’ বা ‘এর’ বিভক্তির পরিবর্তে ‘কে’ বিভক্তিও ব্যবহার করা চলত। যেমন- মাকে স্মরণ কোরো। (৭) কর্ম সম্বন্ধ : সবাই তার প্রশংসা করল। মা-বাবার সেবা করা উচিত। (৮) করণ সম্বন্ধ : কাঁটায় আঘাত। চাবুকের ঘা। (৯) নিমিত্ত সম্বন্ধ : রোগীর খাদ্য সময়মত দিয়ো। এখানে ‘রোগীর’ শব্দটি ‘রোগীর নিমিত্ত’ অর্থাৎ রোগীর জন্য বোঝাচ্ছে। সমিতির চাঁদা, খেলার পুতুল ইত্যাদিও নিমিত্ত সম্বন্ধের দৃষ্টান্ত। (১০) অপাদান সম্বন্ধ : সাপের ভয়। এতদিনে পাপের মুক্তি হল। (১১) অবস্থান সম্বন্ধ : টেবিলের নীচে, গাছের তলায়, ইত্যাদি দৃষ্টান্তে একটি জিনিসের কোন্ দিকে আরও একটি জিনিসের অবস্থান তা বোঝাচ্ছে। (১২) দিক্ সম্বন্ধ : বাড়ির দক্ষিণদিকে, স্কুলের উত্তরে-এই দৃষ্টান্তগুলিতে নানা বস্তু থেকে দিক্ নির্দেশ করা হচ্ছে। (১৩) তুলনা সম্বন্ধ : রাগের তুল্য শত্রু নাই। শ্যামলের মতো বন্ধু নেই। (১৪) শুভকামনার : খোকার ভালো হোক। মেয়ের মঙ্গল হোক। -এইসব দৃষ্টান্তে যার শুভ কামনা করা হয়েছে, সেগুলির শেষে ‘র’ বা ‘এর’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। (১৫) ব্যাপ্তি সম্বন্ধ : শহর এখান থেকে দু-দিনের পথ। সেরে উঠতে প্রায় এক মাসের ধাক্কা। -এই দুই দৃষ্টান্তে, কত সময় লাগছে সেইটা বোঝাতে গিয়ে ‘দিনের’ ‘মাসের’ এই জাতীয় পদ ব্যবহৃত হয়েছে। (১৬) বিশেষণ সম্বন্ধ : পাশের লোকটিকে ডাকো। পাঁচের পৃষ্ঠা খোলো। পাশের, পাঁচের-এই দুটি পদ বিশেষণের মতো ব্যবহৃত হয়েছে। (১৭) স্থান ও সময় সম্বন্ধ : জায়গাটির জলহাওয়া ভালো। তখনকার কথা ছেড়ে দাও। সম্বন্ধ পদের বিভক্তি (একবচন) ১. র: শান্তনুর বাবা কাল এসেছেন। প্রণতির কলমটি টেবিলে রয়েছে। শান্তনুর জ্বর। -এই সব দৃষ্টান্তেই সম্বন্ধ পদে ‘র’ বিভক্তি হয়েছে। ২. এর : মায়ের শরীর খারপ। সাপের পা নেই। বাক্যের মধ্যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সঙ্গে অন্য বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের নানা রকম সম্বন্ধ থাকতে পারে। সব সম্বন্ধের ক্ষেত্রেই ‘র’ অথবা ‘এর’ বিভক্তি হয়। সম্বোধন পদ ওহে, তোমার কলমটা দাও। এই বাক্যে ‘তোমার’ সম্বন্ধ পদ এবং ‘কলমটা’ কর্মকারক। কিন্তু ‘ওহে’ পদটি বাক্যের ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নয়। সুতরাং এটি কারক নয়। এটি হল সম্বোধন পদ। সম্বোধন পদের আরও দৃশটান্ত-এই এদিকে আয়। কৃপা করো মোরে হে রাজন্। ‘অয়ি ভুবনমনোমোহিনী।’ যে পদ দ্বারা কাউকে সম্বোধন বা আহ্বান করা বোঝায় তাকে সম্বোধন পদ বলে। কারক-বিভক্তি নির্ণয়ের নিয়ম বাক্যের মধ্যে পদের কারক-বিভক্তি নির্ণয় করতে গেলে দুটি বিষয়ে চিন্তা করতে হয়:- (১) পদটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, অর্থাৎ মানেটা কী ? (২) কোন্ বিভক্তি বা অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে? প্রথম চিন্তার ফলে কারক পাওয়া যাবে। দ্বিতীয়টি দেখে বিভক্তি বা অনুসর্গ বোঝা যাবে। উদাহরণ : কত ধানে কত চাল হয়। স্থূলাকার পদ দুটির কারক-বিভক্তি নির্ণয় করতে হবে। প্রথমত, ‘ধানে’ শব্দটির অর্থ ‘ধান থেকে’। দ্বিতীয়ত, ‘এ’ বিভক্তি দেখতেই পাওয়া যাচ্ছে। সুতরাং এক্ষেত্রে বলতে হবে- অপাদান কারকে ‘এ’ বিভক্তি। ‘চাল’ কর্তৃ কারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি। অনুসর্গের বেলায় কী কারকে অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে, সেটা লিখতে হবে। সুতরাং মনে রাখতে হবে- মানে বুঝে কারক। চিহ্ন দেখে বিভক্তি। শন্দ দেখে অনুসর্গ।