ব্যঞ্জনসংগতি (সমীভবন)
(২) ব্যঞ্জনসংগতি (সমীভবন) :
এটাও ঘটে জিবের ওই সহজ করে উচ্চারণের প্রবণতার জন্য। যখন বিভিন্ন উচ্চারণস্থানবিশিষ্ট ব্যঞ্জন পাশাপাশি থাকে তখনই এই রীতি প্রযুক্ত হয়। জিব নিজের সুবিধামতো কোনো একটি ধ্বনিকে অন্য ধ্বনিতে পরিণত করে নেয়। যেমন-
গল্প = গ্অল্, প্অ > গ্অপ্, প্অ > গপ্প।
এখানে ল এবং প দুই ভিন্ন উচ্চারণ-স্থানের ব্যঞধ্বনি। জিবকে উচ্চারণ করতে দুবার দুই ভিন্ন স্থানকে স্পর্শ করতে হবে। অতএব কাজ সহজ করে নিতে ‘ল’ টিকেও ‘প’ করে নিল। অর্থাৎ পাশাপাশি দুই ভিন্ন উচ্চারণস্থানবিশিষ্ট ব্যঞ্জন ধ্বনিকে সমধ্বনিতে পরিণত করাবার প্রবণতাকে ব্যঞ্জনসংগতি বা সমীকরণ (সমীভবন) বলা হয়।
ব্যঞ্জনসংগতি তিন রকমে ঘটে।
- ১. প্রগত
- ২. পরাগত
- ৩. অন্যোন্য।
১. প্রগত :
পূর্ব ব্যঞ্জনের প্রভাবে পরের ব্যঞ্জন বদলে গেলে, তাকে বলা হয় প্রগত ব্যঞ্জনসংগতি। যেমন- চন্দন > চন্নন। পদ্ম > পদ্দ।
২. পরাগত :
পূর্ব ব্যঞ্জন যখন বদলে যায় পরের ব্যঞ্জনের প্রভাবে-তাকে বলা হয় পরাগত ব্যঞ্জনসংগতি। যেমন- গল্প > গপ্প। কর্ম > কম্ম। জন্ম > জম্ম। ধর্ম > ধম্ম। মূর্খ > মুখ্খু।
৩. অন্যোন্য :
যখিওন পরস্পরের প্রভাবে দুটি বর্ণই বদলে যায় তাকে অন্যোন্য ব্যঞ্জনসংগতি বলা হয়। যেমন- দুহ্ত (যা দোহন করা হচ্ছে) দুগ্ধ। মৎস্য = মত্স > মাছ। মিথ্যা = মিথ্যা্ > মিছা, মিছে।
সমীকরণ বা ব্যঞ্জনসংগতির প্রভাব খাঁটি বাংলা সন্ধিতে প্রবল পরিমাণে দেখা যায়। যেমন-
এত দিন > অ্যাদ্দিন। পাঁচ সের > পাঁশশের। আর না > আন্না । এক গজ > এগ্গজ। বদ্ জাত > বজ্জাত। বড় ঠাকুর > বট্ঠাকুর। কর তাল > কর্তাল। কত দিন > কদ্দিন।