স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ
(১) স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ :
সব সময়েই আমরা শ্রমকে লাঘব করতে চাই। মাঠের দু-পাশে ঘুরে যায় কে? পাড়ি দিই কোনাকূনি। তেমনই যুক্তাক্ষর ভেঙে মাঝে একটা স্বর ঢুকিয়ে শব্দের উচ্চারণকে সহজ ও তরল করে নেওয়ার একটা প্রবণতা আমাদের আছে। যা যুক্ত ছিল তাকে ভাঙ্গা হয় বলে একে বিপ্রকর্ষ বলে। আর ভেঙে মাঝে স্বরধ্বনি আনা হয় বলে স্বরভক্তি বলা হয়। উদাহরণ দেখো- রত্ন = র্ অ ত্, ন্ অ > র্ অ ত্, অ ন > রতন লক্ষ করো , ‘রত্ন’ শব্দটা ছিল দু-অক্ষরের। এক অক্ষরের রত্ আর শেষ অক্ষর ন। এবার রত্-এর সঙ্গে বাড়তি ‘অ’ যোগ করা হল। ফলে রত আর এক অক্ষর রইল না। হল র ত-দু-অক্ষর। গোটা শব্দ হল তিন অক্ষরের র-ত-ন। এখানে যে রীতি ক্রিয়া করল তা ওই স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ। তাহলে- সংযুক্তি ব্যঞ্জনধ্বনি ভেঙে মধ্যে স্বরধ্বনি আনবার প্রবণতাকে স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ বলে
বিপ্রকর্ষের ফলে বিভিন্ন স্বরের আগমন (ব্যাকরণে একে সাধারণত আগম বলে) ঘটতে পারে। যেমন-
অ-ধ্বনির আগম :
কর্ম > করম। ধর্ম > ধরম। চন্দ্র > চন্দর। বর্ষ > বরষ। ভক্তি > ভকতি। শক্তি > শকতি প্রকাশ > পরকাশ। গর্ব > গরব। বিদেশি শব্দও আমরা বদলে নিয়েছি- দর্দ > দরদ। মর্দ > মরদ। গার্ড > গারদ। নর্ম > নরম। ক্রিয়াপদও বদলে নেওয়া হয়। যেমন-বর্ষিল > বরষিল। হর্ষিত > হরষিত।
ব্যবহার :
‘জনম অবধি হাম রূপ নেহরলুঁ।’ ‘তোহারি গরবে গরবিনি হাম।’ ‘নিঝুম মধ্যাহ্ন কাল আলস স্বপন জান রচিতেছে অন্যমনে হৃদয় ভরিয়া।’
ই-ধ্বনির আগম :
প্রীতি > পিরীত। শ্রী > ছিরি। হর্ষ > হরিষ। মিত্র > মিত্তির। স্নান > সিনান।
বিদেশি শব্দ : ফিল্ম > ফিলিম। ক্লিপ > কিলিপ। ফ্রিক্র্ > ফিকির। নির্খ > নিরিখ
ব্যবহার :
‘সাগর জলে সিনান করি সজল এলোচুলে।’ নিবারণ মিত্তির ফন্দি-ফিকিরে কম ওস্তাদ নয়।
উ-ধ্বনির আগম :
ভ্রূ > ভুরু। মুক্তা > মুকুতা। পুত্র > পুত্তুর। রৌদ্র > রদ্দুর। শুক্র > শুক্কুর। শূদ্র > শুদ্দুর। সমুদ্র > সমুদ্দুর।
বিদেশি শব্দ : মুল্ক > মুলুক। ফ্লুট > ফুলুট। ব্লু > বুলু। ব্রাশ > বুরুশ। বুর্জ > বুরুজ।
ব্যবহার :
‘ভুরু কুঁচকিয়ে লাভ নেই রাজপুত্তুর। মুই শুদ্দুর হলেও ক্ষুদ্দুর নই।’ কেল্লার বুরুজের ধরনের কাঁচামাটির দেওয়াল ঘেরা খামার বাড়ি।
ঋ-ধ্বনির আগম ।।
বাংলায় ঋ-র স্বাভাবিক উচ্চারণ ‘রি’, এজন্য ঋ-ধ্বনি বিপ্রকর্ষে ফলে-ইর হয়ে যায়। যেমন-তৃপ্ত > তিরপিত। কৃপা > কিরপা।
ব্যবহার :
নয়ন না তিরপিত ভেল।
এ-ধ্বনির আগম ।।
গ্রাম > গেরাম। গ্রাস > গেরাস। ভ্রম > ভেরম। প্রণাম > পেরনাম। ব্যাকুল > বেয়াকুল। ধ্যান > ধেয়ান।
বিদেশি শব্দ : গ্লাস > গেলাস। ক্লাস > কেলাস। প্রেগো > পেরেক। ব্ল্যাক > বেলাক স্রিফ > সেরেফ।
ব্যবহার :
পেরনাম ইহ কত্তা। আজই কি গেরামে ফিরলেন? সই আজকাল বেভরম হয়ে যায় কত্তা। না হবে কেন? দিনান্তে এক গেরাস ভাত জোটে না। বেবাক বেলাক হয়।
ও-ধ্বনির আগম ।।
শ্লোক > শোলোক। চন্দ্র > চন্দোর। স্লো > সোলো। চক্র > চক্কোর।
ব্যবহার :
‘মাগো আমার শোলোক-বলা কাজলা দিদি কই।’